ফি কেন বাড়ল, বিক্ষোভ খড়্গপুর আইআইটিতে

প্রতি সেমেস্টারে ফি বেড়েছে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। তারই প্রতিবাদে পথে নামলেন খড়্গপুর আইআইটির ছাত্রছাত্রীরা। মঙ্গলবার আইআইটির হল ম্যানেজমেন্ট সেন্টার থেকে প্রথমে বিক্ষোভ মিছিলে পা মেলান এমটেক ও গবেষক পড়ুয়ারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৪৭
Share:

প্রতি সেমেস্টারে ফি বেড়েছে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। তারই প্রতিবাদে পথে নামলেন খড়্গপুর আইআইটির ছাত্রছাত্রীরা। মঙ্গলবার আইআইটির হল ম্যানেজমেন্ট সেন্টার থেকে প্রথমে বিক্ষোভ মিছিলে পা মেলান এমটেক ও গবেষক পড়ুয়ারা। বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের দাবিতে ওঠে স্লোগান। কর্তৃপক্ষ সময় চাওয়ায় শেষে অনশনে বসেন পড়ুয়ারা।

Advertisement

আইআইটিতে রাজনৈতিক দলের কোনও ছাত্র সংগঠন নেই। কথায় কথায় অবরোধ-আন্দোলনও এখানকার রীতি নয়। বরং কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে এমন ছাত্র-বিক্ষোভ খড়্গপুর আইআইটিতে প্রায় নজিরবিহীন। পড়ুয়াদের অবশ্য বক্তব্য, বাধ্য হয়েই পথে নেমেছেন তাঁরা। আন্দোলনের পুরোভাগে থাকা হিউম্যানিটিস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সের গবেষক ছাত্রী শুভাঙ্গী গোস্বামীর কথায়, “বর্ধিত ফি কমানোর দাবিতে আন্দোলন ছাড়া রাস্তা ছিল না। আইআইটির কর্মীরা যখন আন্দোলন করেন, তখন তাকে তো অন্যায্য বলা হয় না।” বিটেকের পড়ুয়ারা আন্দোলনে ছিলেন না। সেমেস্টার শেষে তাঁদের ছুটি চলছে।

সব পড়ুয়ার থেকেই হল (হস্টেল) ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ফি নেন আইআইটি কর্তৃপক্ষ। স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মীদের বেতন, পেনশন, হস্টেলের থাকা-খাওয়া বাবদ নেওয়া সেই ফি প্রতি সেমেস্টারে ছাত্র পিছু ৭,৫৫০ টাকা বাড়ানো হবে বলে গত ৭ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি করেন খড়্গপুর আইআইটি কর্তৃপক্ষ। এর ফলে, গবেষক ও এমটেক পড়ুয়াদের প্রতি সেমেস্টারের খরচ প্রায় ২৯ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হবে প্রায় ৩৭ হাজার টাকা। ছ’মাস অন্তর এই টাকা দিতে হবে। এক ধাক্কায় এই ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্তেই চটেছেন পড়ুয়ারা।

Advertisement

আইআইটি সূত্রে খবর, একজন গবেষক পড়ুয়া মাসে ২৫ হাজার টাকা বৃত্তি পান। আর এমটেক পড়ুয়ারা পান মাসে ১২,৪০০ টাকা। মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গবেষক ছাত্র তাপস দে, অ্যাডভান্সড টেকনোলজির গবেষক ছাত্র অনুপম বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেন, “আমরা যে বৃত্তি পাই তা থেকে নিজেদের খরচ সামলে বাড়িতে টাকা পাঠাই। এই অবস্থায় প্রায় ৮ হাজার টাকা ফি বৃদ্ধি সমস্যার। তা ছাড়া, পছন্দের খাবার পাই না। তা-ও বাড়তি টাকা চাওয়া হচ্ছে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধেই আমাদের প্রতিবাদ।”

এই ফি বৃদ্ধি শুধু খড়্গপুর আইআইটিতেই হয়েছে। আইআইটি সূত্রে খবর, কিছু কিছু খাতে কর্তৃপক্ষের একক ভাবে ফি বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে। দেশের অন্য আইআইটিতে যেখানে ফি বাড়ানোর দরকার পড়ছে না, সেখানে কেন খড়্গপুরের এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে তার প্রয়োজন পড়ল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন পড়ুয়ারা। ছাত্রছাত্রীদের আরও অভিযোগ, সপ্তম পে কমিশন চালুর পরে আইআইটির নিজস্ব কর্মীদের বেতনের বোঝা এ ভাবে পড়ুয়াদের কাঁধে চাপাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এমটেকের ছাত্র চাঁদ মণ্ডল, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কুলদীপ স্বর্ণকাররা বলেন, “নিজেদের কর্মীদের বেতন তো আইআইটিরই দেওয়া উচিত। সেই বোঝা আমাদের কাঁধে চাপানো হচ্ছে কেন?”

১৪ ডিসেম্বর শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছিলেন পড়ুয়ারা। বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। কর্তৃপক্ষ সময় চাওয়ায় বিক্ষোভ প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু পরে কর্তৃপক্ষ জানান, পড়ুয়াদের দাবি ঠিক নয়। তারপরই এই আন্দোলন। এ দিনও পড়ুয়াদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আইআইটি কর্তৃপক্ষ। তবে ফি প্রত্যাহারের আশ্বাস মেলেনি। খড়্গপুর আইআইটির রেজিস্ট্রার প্রদীপ পাইন বলেন, “আমাদের অধিকর্তা বলেছেন পড়ুয়াদের দাবি বিবেচনা করা হবে। বিষয়টি তাই খতিয়ে দেখছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement