বন্যপ্রাণীর পারাপার নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক

দু-পাড়ে অনন্ত তরাই-জঙ্গলের মাঝে মেচি নদী। পাহাড়ি নদীটি একই সঙ্গে দু’দেশের সীমান্তও এঁকে দিয়েছে, ভারত-নেপাল। সীমান্তের সেই অনুশাসন কি বন্যপ্রাণীরা তোয়াক্কা করে?

Advertisement

রাহুল রায়

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩১
Share:

দু-পাড়ে অনন্ত তরাই-জঙ্গলের মাঝে মেচি নদী। পাহাড়ি নদীটি একই সঙ্গে দু’দেশের সীমান্তও এঁকে দিয়েছে, ভারত-নেপাল।

Advertisement

সীমান্তের সেই অনুশাসন কি বন্যপ্রাণীরা তোয়াক্কা করে?

উত্তরবঙ্গের হস্তিযূথ হামেশাই পাড়ি দিচ্ছে নেপালে। ফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে, গ্রামবাসীদের বিষাক্ত তির আর না হয় চোরাশিকারির গুলি— ক্রমান্বয়ে মারা পড়ছে তারা। মাস কয়েক আগে মুর্শিদাবাদে পদ্মা উজিয়ে সটান বাংলাদেশের সাতক্ষীরার চরে পা দিয়ে একই জবাব ফিরে পেয়েছিল ঝাড়খণ্ডের এক দাঁতাল। হাতি দেখেই নির্বিচারে গুলি চালিয়ে বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশের (বিজিবি) মিনিট কয়েকের মধ্যেই ঝাঁজরা করে দিয়েছিল তাকে। সে ঘটনা নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি।

Advertisement

গত জুন মাসের সেই ঘটনার পরে ডব্লুডব্লুএফ কিংবা ডব্লুটিএ-এর মতো আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণ সংস্থাগুলিও তাদের কড়া আপত্তি জানিয়েছিল বাংলাদেশ সরকারের কাছে। দাবি উঠেছিল, বণ্যপ্রাণীদের ক্ষেত্রে অন্তত আন্তর্জাতিক সীমানার অনুশাসন শিথিল করার। সেই সূত্রে আজ, বুধবার কলকাতার অরণ্য ভবনে শুরু হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক আলোচনা। ‘বিশেষ কাজে’ আটকে যাওয়ায় বাংলাদেশের বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আসতে পারছেন না। তবে বাংলাদেশের বারো সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আসছেন সে দেশের বনমন্ত্রকের শীর্ষ কর্তা মহম্মদ ইউনুস। থাকছেন, হস্তী সংরক্ষণে এ দেশের সর্বোচ্চ সংস্থা, বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের ‘প্রজেক্ট এলিফ্যান্ট’-এর মুখ্য আধিকারিক আর কে শ্রীবাস্তবও। দু’দিনের ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন-সহ রাজ্য বন দফতরের শীর্ষ কর্তারাও।

ইউনুস বলছেন, ‘‘আলোচনাটা শুধু পশ্চিমবঙ্গের হাতিদের নিয়ে নয়, মেঘালয় এবং মিজোরাম থেকেও পাহাড় ডিঙিয়ে অনর্গল হাতি ঢুকছে বাংলাদেশে। সুন্দরবনের বাঘ খাঁড়ি পার হয়ে অবিরাম আনাগোনা করছে আমাদের দেশে। বন্য পশুদের এই করিডরগুলি যাতে সীমান্ত আইনের কোপে না পড়ে, দু-দেশের আলোচনার মূল বিষয় সেটাই হওয়া উচিত।’’ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি রাজ্যগুলি থেকেও হাতিরা যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে অবাধে বাংলাদেশে ঢুকছে, তা মেনে নিয়েছেন প্রজেক্ট এলিফ্যান্ট কর্তারাও। শুক্রবার তা নিয়ে রয়েছে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা।

কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রকের এক পদস্থ কর্তা বলছেন, ‘‘শুধু বাঘ-হাতি নয়, সম্প্রতি নেপাল-ভুটান এমনকী বাংলাদেশে পাড়ি দিতে দেখা গিয়েছে গন্ডারকেও। হাতি-গন্ডার তো বাংলাদেশে তেমন পরিচিত পশু নয়, দেখা মাত্রই বিজিবি যেন গুলি করে না বসে, বৈঠকে সে বিষয়েও সতর্ক করা হবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের।’’ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা চোরাশিকার ও কাঠ পাচারকারীদের ‘স্বর্গভুমি’ হয়ে ওঠার ব্যাপারটিও চোখ এড়ায়নি দিল্লির। বাংলাদেশ সরকারকে এ ব্যাপারেও সতর্ক করে দেওয়া হবে বলে জানাচ্ছেন দিল্লির ওই কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন