শিল্প যাচ্ছে ভিন্-রাজ্যে, দাবি মন্ত্রীর

রাজ্যের শিল্পপতিদের একাংশের মতেও, শিল্পের কাঁচামাল, কর্মসংস্কৃতি, শিল্পের প্রতি প্রশাসনের দায়বদ্ধতা-সহ নানা মাপকাঠিতে এ রাজ্যের থেকে এগিয়ে ঝাড়খণ্ড। এক শিল্পপতির বক্তব্য, ঝাড়খণ্ডে অনেক বড় শিল্প সংস্থা ও তাদের ঘিরে রয়েছে ছোট ও মাঝারি সংস্থা রয়েছে।

Advertisement

সুব্রত সীট ও সৌমেন দত্ত

দুর্গাপুর ও বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৭ ০২:০১
Share:

বর্ধমানে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস ও রাজ্য বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গে আরাজকর পরিস্থিতির জেরে এ রাজ্যের শিল্পপতিদের নতুন গন্তব্য ঝাড়খণ্ড। শুক্রবার দুর্গাপুরের রাজীব গাঁধী ময়দানে ‘মোদী (‌মেকিং অফ ডেভেলপড ইন্ডিয়া) মেলা’র উদ্বোধনে এসে এমনই দাবি করলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস। পরে তিনি বর্ধমানে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে উন্নয়নের প্রশ্নে তৃণমূল সরকারকে নানা বিষয়ে বিঁধেছেন তিনি।

Advertisement

সম্প্রতি রাজ্যে লগ্নি টানতে শিল্প সম্মেলন ও কলকাতায় ‘রোড-শো’ করে ঝাড়খণ্ড সরকার। এ দিন সেই প্রসঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-পরিস্থিতির তুলনা করে রঘুবর অভিযোগ করেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে চরম অরাজকতা চলছে। কেউ লগ্নি করেন না। এই রাজ্যের লগ্নিকারীরা ঝাড়খণ্ডে পাট ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে লগ্নি করতে শুরু করেছেন। এখানে সরকার না বদলালে বাকিরাও চলে যাবেন।’’ পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল ও বরাকরের শিল্পপতিদেরও ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে লগ্নি করার আহ্বান জানান রঘুবর। ‘ফেডারেশন অফ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’-র সাধারণ সম্পাদক সুব্রত দত্ত অবশ্য বলেন, ‘‘যেখানে শিল্পের উপযোগী পরিকাঠামো থাকবে, সেখানেই লগ্নি করা হবে। ঝাড়খণ্ডে তা থাকলে লগ্নিকারীরা সেখানেই যাবেন।’’

রাজ্যের শিল্পপতিদের একাংশের মতেও, শিল্পের কাঁচামাল, কর্মসংস্কৃতি, শিল্পের প্রতি প্রশাসনের দায়বদ্ধতা-সহ নানা মাপকাঠিতে এ রাজ্যের থেকে এগিয়ে ঝাড়খণ্ড। এক শিল্পপতির বক্তব্য, ঝাড়খণ্ডে অনেক বড় শিল্প সংস্থা ও তাদের ঘিরে রয়েছে ছোট ও মাঝারি সংস্থা রয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত সেই মাপের বড় লগ্নি ব্রাত্য। তা ছাড়া জমি পাওয়া, লাল ফিতের ফাঁস, তোলাবাজি-সহ নানা প্রশ্নেও পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় ঝাড়খণ্ডের পরিস্থিতি ভাল বলে দাবি ওই কর্তার। এ দিন রঘুবরও বলেন, ‘‘পাট শিল্পের ক্ষেত্রে ১০ একর করে জমি দেওয়া হচ্ছে। শিল্প স্থাপনের আবেদনের এক মাসের মধ্যে প্রাথমিক ছাড়পত্র এবং তিন মাসের মধ্যে গোটা প্রক্রিয়া শেষ করে দিচ্ছে ঝাড়খণ্ড সরকার।’’

Advertisement

লগ্নির প্রসঙ্গেই রঘুবর ‘দক্ষ’ মানব সম্পদ তৈরিতে জোর দেন। দেশের মানব সম্পদের ৯০ শতাংশকে দক্ষ বা স্কিলড করে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের সফল রূপায়ণের মাধ্যমে আর্থিক বৃদ্ধিতে গতি আনার কথা বলেন রঘুবর।

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি ধাক্কা খেয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এ দিন সেই প্রসঙ্গে রঘুবরের পাল্টা দাবি, বিশ্বের মধ্যে আর্থিক বৃদ্ধিতে ভারতের স্থান তৃতীয়। উন্নয়ন-প্রশ্নেও তৃণমূল সরকারকে বিঁধেছেন রঘুবর। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে আয়োজিত নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেয়নি পশ্চিমবঙ্গ। সেই বিষয়টির উল্লেখ করে রঘুবর বলেন, ‘‘নীতি আয়োগের বৈঠকে যায় না তৃণমূল সরকার। রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে তাদের কোনও চিন্তা নেই।’’

রঘুবরের অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের দুর্গাপুর জেলা সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘রাজ্যে শিল্প-বান্ধব পরিবেশ তৈরিতে রাজ্য সরকার নানা পদক্ষেপ করেছে। কয়েক হাজার কোটি টাকার লগ্নির প্রস্তাব এসেছে। বিজেপি-র মুখ্যমন্ত্রী উদ্দেশ্য প্রণোদিত অভিযোগ করছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন