মোদীর সভার দুর্ঘটনা দ্বন্দ্ব বাড়াল দলেই

অন্দরের খবর, রাজ্য ,সংগঠনে দিলীপবাবু যত শক্তিশালী হয়েছেন, রাহুলবাবুরা তত ‘দুর্বল’ হয়েছেন। কিন্তু রাহুলবাবুও রাজ্য বিজেপিতে গোষ্ঠীর অস্তিত্ব স্বীকার করতে চাননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৮ ০৬:০৩
Share:

ফাইল চিত্র

টানাপড়েন ছিলই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভায় দুর্ঘটনার পর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আবার প্রকট হয়েছে রাজ্য বিজেপিতে। কার্যত চলছে ‘তু তু ম্যায় ম্যায়’।

Advertisement

দলীয় সূত্রে খবর, বুধবার সন্ধ্যায় একটি ‘গোপন বৈঠক করেন রাজ্য সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকেরা। প্রায় সাড়ে ছ’ঘণ্টার সেই বৈঠকে সাংগঠনিক আলোচনা ছাড়াও কথা হয়েছে ‘মেদিনীপুর কাণ্ড’ নিয়ে। খবর, কেউ কেউ সেই বৈঠকে আঙুল তোলেন সভার দায়িত্বে থাকা অন্যতম সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। অভিযোগ, রাজু অধুনা রাজ্য বিজেপির শাসক গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ। ফলে, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতেই নাকি দিলীপবাবু তাঁকে ‘আড়াল’ করেন। বস্তুত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের দিলীপবাবু বলেন, ‘‘দলীয় স্তরে দুর্ঘটনার সমস্ত দায় আমি নিচ্ছি।’’

বিতর্ক অবশ্য সেখানেই শেষ হচ্ছে না। দলের বিরোধী গোষ্ঠীর বক্তব্য, মেদিনীপুরে গত ৯ জুলাই মোদীর সভার প্রস্তুতি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে ঠিক হয়েছিল, অমিত শাহের পুরুলিয়ার সভার মডেলেই হবে প্রধানমন্ত্রীর সভা। দর্শকাসনে শামিয়ানা তৈরি করবে রাঁচীর এক ডেকরেটর। খবর, তার জন্য প্রায় এক কোটি টাকা বরাদ্দও হয়েছিল। কিন্তু এর পর বর্তমান শাসক গোষ্ঠী কাউকে না জানিয়ে শামিয়ানার দায়িত্ব দিয়ে দেয় কলকাতার শাসক গোষ্ঠীর ‘ঘনিষ্ঠ’ এক ডেকরেটরকে। বিরোধী গোষ্ঠীর দাবি, দিলীপবাবুর বক্তব্যেই পরিষ্কার, তিনি নিজের লোককে আড়াল করছেন। তাঁদের আরও দাবি, মেদিনীপুর কাণ্ডে শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক খানিকটা হলেও হোঁচট খেয়েছে। এবং সে কারণেই তড়িঘড়ি দিলীপবাবুকে বলতে হচ্ছে, বর্ষায় আর এ ধরনের সমাবেশ করবে না বিজেপি। বিরোধী গোষ্ঠীর দাবি, প্রধানমন্ত্রী নিজেই নাকি বর্ষায় আর পশ্চিমবঙ্গে আসতে রাজি হচ্ছেন না। দিলীপবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, দলগত ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পুজোর আগে, বৃষ্টির মধ্যে এত বড় মাপের সভা আর করা হবে না। রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের উপরেও আর নির্ভর করা হবে না। নিজেদের স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। সমাবেশের জনসমাগমের তুলনায় স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা কম ছিল এবং তাঁদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণও ছিল না, সেই অভিযোগ পুলিশও জানিয়েছে।

Advertisement

জনশ্রুতি, রাজ্য বিজেপিতে এখন মূলত তিনটি গোষ্ঠী। প্রথমটি শাসক গোষ্ঠীর অন্যতম পরিচালক, সঙ্ঘ প্রচারক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের। দিল্লির সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ভাল। যে কারণে বিজেপিতে ‘বহিরাগত’ বলে চিহ্নিত এক নেতার ঘনিষ্ঠরা অনেকেই নাকি আড়ালে বলে থাকেন, রাজ্য বিজেপিতে ‘পোস্ট’ একটাই, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। বাকি সব ‘ল্যাম্পপোস্ট’। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সুব্রতবাবুর ঘনিষ্ঠ এক নেতা।

দ্বিতীয় গোষ্ঠী রাহুল সিংহের। অন্দরের খবর, রাজ্য ,সংগঠনে দিলীপবাবু যত শক্তিশালী হয়েছেন, রাহুলবাবুরা তত ‘দুর্বল’ হয়েছেন। কিন্তু রাহুলবাবুও রাজ্য বিজেপিতে গোষ্ঠীর অস্তিত্ব স্বীকার করতে চাননি।

তৃতীয়, ‘নব্য বিজেপি’। দলের অন্দরে গুঞ্জন, এঁদের কেউ কেউ এসেছেন অন্য দল ভেঙে, কেউ বা কোনও না কোনও পদের ‘ওজন’ দেখিয়ে নিজেদের গুরুত্ব বাড়াতে সচেষ্ট। আরএসএস ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীর সঙ্গে এই গোষ্ঠীর কার্যত কোনও বনিবনা নেই। আবার মেদিনীপুরের সভাতেও রাজ্য সভাপতির সঙ্গে ‘নব্য’ গোষ্ঠীর এক সদস্যের প্রকাশ্য তরজা দেখা গিয়েছিল।

খবর, মেদিনীপুর কাণ্ডের পর এই ‘নব্য’দের অনেকেই বেশ সরব। সব মিলিয়ে মোদীর মেদিনীপুর সফরের পরে রাজ্য বিজেপিতে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব অনেকটাই সামনে এসে পড়ল বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন