তৃণমূল সূত্রের খবর, রবীন্দ্রনাথ এবং গৌতমের বিরোধ নতুন নয়।
দলের কোন্দল বা দ্বন্দ্বের প্রভাব যাতে উন্নয়নের কাজে বিঘ্ন না ঘটায়, সে জন্য সচেষ্ট তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। অথচ উত্তরবঙ্গে উন্নয়নের কর্মকাণ্ডের পর্যালোচনার বৈঠক নিয়ে রাজ্যের দুই মন্ত্রীর বিরোধ আবার প্রকাশ্যে চলে এল। সোমবার দুপুরে শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠক হয়। সেখানে পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব ছাড়াও পর্ষদের সদ্য নিযুক্ত ভাইস চেয়ারম্যান বালুরঘাটের বিপ্লব মিত্র, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব বরুণ রায় এবং অন্য আধিকারিকেরা ছিলেন।
বৈঠকের শেষে পর্ষদের চেয়ারম্যান গৌতম বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের কাজ যাতে ভালভাবে হয়, এখন থেকে তা নিয়মিতভাবে নজরদারি করা হবে এবং সেই নিয়ে পরামর্শ দেওয়া হবে। বছরের টাকা বছরে খরচ করা ছাড়াও দফতর যাতে ভাল করে কাজ করে, তা দেখা হবে। প্রতি তিন মাস অন্তর পর্ষদের বৈঠক হবে। আগামী জানুয়ারি মাসে ফের বৈঠক হবে।’’
সন্ধ্যায় পাল্টা কটাক্ষ করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘কে করবে নজরদারি, গৌতম দেব? ও বরং নিজের কাজ করুক। ওর নিজের একটা দফতর রয়েছে, সেটা ভাল করে দেখুক। একটা দফতরের কাজের নজরদারি একটা পর্ষদ কোন দিনও করতে পারে না। তারা কেবল পরামর্শ দিতে পারে।’’
রবীন্দ্রনাথের দাবি, ‘‘২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের জন্য যে টাকা বরাদ্দ হয়েছিল, তার ৮৩ শতাংশ টাকা এর মধ্যেই খরচ হয়েছে। নজরদারি যদি করতেই হয়, তা হলে তা একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী করবেন।’’ গৌতম অবশ্য এর কোনও জবাব দেননি।
তৃণমূল সূত্রের খবর, রবীন্দ্রনাথ এবং গৌতমের বিরোধ নতুন নয়। বেশ কয়েকবার তা প্রকাশ্যেও এসেছে। এ বারে গৌতমের পরিবর্তে রবীন্দ্রনাথকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি উত্তরকন্যায় বসতেও শুরু করেন। এর পরে সেখানে পর্ষদের জন্য ঘর চাওয়া হলেও রবীন্দ্রনাথ জানিয়ে দেন, তা সম্ভব নয়। এর পরে একাধিক বিষয়ে দুজনের মতানৈক্য প্রকাশ্যে আসে। মুখ্যমন্ত্রী অবধি বিষয়টি পৌঁছয়। দলনেত্রীর নির্দেশে গৌতমের বাড়িতেও যান রবীন্দ্রনাথ। তার পরে বহুদিন ভিতরে বিরোধ থাকলেও তা প্রকাশ্যে আসেনি।
গত অক্টোবরে মুখ্যমন্ত্রী দুই নেতাকে ডেকে কোচবিহারের রাসমেলা দেখতে বলেন। কিন্তু উদ্বোধক হিসাবে একমাত্র রবীন্দ্রনাথের নাম ছিল কার্ডে। গৌতম-সহ বাকিরা অতিথি হিসেবে ডাক পান। রাসমেলার উদ্বোধনে পর্যটনমন্ত্রীকে দেখা যায়নি।
এর মধ্যে কোচবিহারের গোষ্ঠী কোন্দল দিনের পর দিন বেড়ে চলছে। তাতে উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে দলের একাংশ মনে করছে। বাকি উত্তরবঙ্গের সঙ্গে কোচবিহারের উন্নয়নের কাজে নজরদারির জন্য পর্ষদের উপর দায়িত্ব রয়েছে। বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ নিয়ে কোচবিহারের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এ দিন পর্যটনমন্ত্রী বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের বহু কাজ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর করছে। ভাল কাজই করছে। সেতু, রাস্তা, আলোর মতো কাজগুলি ঠিক সময়ে হচ্ছে কি না, বরাদ্দ টাকা ঠিক সময়ে খরচ হচ্ছে কিনা, সেটাই পর্ষদ নজরদারি করবে।’’