আলিপুরদুয়ারের প্রশাসনিক বৈঠকের মঞ্চ থেকে ‘আদিবাসী দিবস’ পালনের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। —ফাইল চিত্র।
একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ৯ অগস্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবসে তিনি ঝাড়গ্রামে যাবেন। বাকি মন্ত্রী-নেতারা যাবেন অন্যত্র। শুধু ঝাড়গ্রাম নয়, আদিবাসী দিবস পালন হবে আরও ১৩টি জেলায়। সেই মতো জেলায় জেলায় পৌঁছল নবান্নের নির্দেশ।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ১৪টি জেলার মধ্যে ৯ অগস্ট দিনটি পালিত হবে ৬টি জেলায়। আর ৮টি জেলায় অনুষ্ঠান হবে ১০ অগস্ট । ঝাড়গ্রামের পাশাপাশি ৯ অগস্ট আদিবাসী দিবস হবে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে। ১০ অগস্ট মালদহ, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, হুগলি, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান এবং নদিয়ায় অনুষ্ঠান হবে। নদিয়ার অনুষ্ঠানে যাবেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মালদহে যাবেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, হুগলিতে থাকবেন কৃষিবিপণনমন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত, পূর্ব বর্ধমানে মত্স্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, প্রাণিসম্পদমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, বাঁকুড়ায় যাবেন মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা, পুরুলিয়ায় থাকবেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো।
আদিবাসী দিবসে থাকবে নানা আয়োজন। জাতিগত শংসাপত্র, স্কলারশিপ প্রদান, ক্রীড়া সরঞ্জাম বিলির পাশাপাশি উপভোক্তাদের হাতে যুবশ্রী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজশ্রী, সবুজসাথীর নথিপত্র তুলে দেওয়া হবে। জেলাস্তরের অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে থাকছে ১২টি স্টল, সঙ্গে আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের নেতা রবিন টুডু বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকার দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালনে উদ্যোগী হয়েছে। এতে আমরা গর্বিত। আশা করব, এ বার থেকে সব পরিষেবা আদিবাসীরা নিয়মিত পাবেন।’’
প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাজ্যে পরিবর্তনের পর আদিবাসী দিবস পালনে এত বড় আয়োজন আগে হয়নি। হুল দিবসের মতোই আদিবাসী দিবস পালনেরও পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু কেন? রাজনৈতিক মহলের মতে, এর উত্তর লুকিয়ে রয়েছে পঞ্চায়েত ভোটের ফলে। জঙ্গলমহল-সহ আদিবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলিতে পঞ্চায়েত ভোটে তুলনামূলক খারাপ ফল হয়েছে তৃণমূলের। এরপর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পদত্যাগ করেছেন তিন মন্ত্রী। তার মধ্যে ছিলেন আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতোও। আদিবাসী উন্নয়ন দফতর এখন নিজের হাতে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের দলীয় সংগঠনেও রদবদল হয়েছে। আদিবাসীদের জন্য সরকার কী কী করেছে, ফের তা মনে করিয়ে দিতেই এই আয়োজন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অবশ্য কটাক্ষ, ‘‘জঙ্গলমহলে তৃণমূলের ভোটে ধস নেমেছে। তাই আদিবাসীদের ভুল বোঝাতে উৎসবের নাটক করা হচ্ছে।’’ বৃহস্পতিবার দলীয় বৈঠকে যোগ দিতে ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি ঘটা করে আদিবাসী দিবস পালনের কথা মানতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘বরাবরই দিনটি পালন করা হয়। এতে নতুনত্ব কিছু নেই।’’