লগ্নি সংস্থার টাকা কি টলিউডে, ফের প্রশ্ন

সারদায় সিবিআই হানা নিয়ে তোলপাড়ের মুহূর্তেই টলিউডে ফের মাথা চাড়া দিল বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার ভ্রূকুটি। গ্রিনটাচ এন্টারটেনমেন্ট টালিগঞ্জে একটি পরিচিত নাম। তাদের প্রযোজিত একটি ছবি মুক্তি পেতে চলেছে আজ, শুক্রবার। আরও বেশ কয়েকটি ছবির কাজও চলছে এই প্রযোজকের ব্যানারেই। নতুন ছবির পোস্টারে, আমন্ত্রণপত্রে ছবির নিবেদক হিসেবে নাম রয়েছে শ্যামসুন্দর দে-র। এই শ্যামসুন্দর দে গ্রিনটাচ প্রোজেক্টস লিমিটেড নামে সংস্থারও কর্ণধার। যার আর্থিক লেনদেনের উপরে সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সেবি।

Advertisement

ইন্দ্রনীল রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০৪:০০
Share:

সারদায় সিবিআই হানা নিয়ে তোলপাড়ের মুহূর্তেই টলিউডে ফের মাথা চাড়া দিল বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার ভ্রূকুটি।

Advertisement

গ্রিনটাচ এন্টারটেনমেন্ট টালিগঞ্জে একটি পরিচিত নাম। তাদের প্রযোজিত একটি ছবি মুক্তি পেতে চলেছে আজ, শুক্রবার। আরও বেশ কয়েকটি ছবির কাজও চলছে এই প্রযোজকের ব্যানারেই। নতুন ছবির পোস্টারে, আমন্ত্রণপত্রে ছবির নিবেদক হিসেবে নাম রয়েছে শ্যামসুন্দর দে-র। এই শ্যামসুন্দর দে গ্রিনটাচ প্রোজেক্টস লিমিটেড নামে সংস্থারও কর্ণধার। যার আর্থিক লেনদেনের উপরে সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সেবি।

চলতি মাসের ৭ তারিখ সেবি-র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, “এই সংস্থা (গ্রিনটাচ প্রোজেক্টস লিমিটেড) ১৯৫৬ সালের কোম্পানি আইন এবং ২০০৮ সালের সেবি নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা লঙ্ঘন করে ৪৯ জনের বেশি ব্যক্তির কাছ থেকে সিকিওরড রিডিমেব্ল ডিবেঞ্চারের (ফেরতযোগ্য ঝুঁকিহীন ঋণপত্র) মাধ্যমে টাকা তুলেছে।”

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে গ্রিনটাচ প্রোজেক্টস লিমিটেড-এর প্রতি সেবির নির্দেশ, “সেবি-র আগাম অনুমতি ছাড়া এই সংস্থা বা তার ডিরেক্টররা জনসাধারণের কাছ থেকে তোলা টাকায় কেনা সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন না। এই সূত্রে পাওয়া টাকা সংস্থার তহবিলে বা কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রাখা থাকলে তা-ও খরচ বা হস্তান্তর করতে পারবেন না।”

এই নির্দেশিকার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রিনটাচ এন্টারটেনমেন্টের কাজকর্ম ঘিরেও আইনি জটিলতার একটা সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ। তাঁদের মতে গোটা বিষয়টা নির্ভর করছে, গ্রিনটাচ এন্টারটেনমেন্টের সঙ্গে গ্রিনটাচ প্রোজেক্টস লিমিটেড-এর কী সম্পর্ক, তার উপরে। গ্রিনটাচ প্রোজেক্টস লিমিটেড যদি গ্রিনটাচ এন্টারটেনমেন্টের মূল সংস্থা (মাদার কোম্পানি) হয়, তা হলে সেবি-র নিষেধাজ্ঞা প্রযোজক সংস্থার উপরেও বর্তাতে পারে। ওই আইনজীবীদের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে হয় প্রযোজকদের প্রমাণ দিতে হবে যে, অর্থলগ্নি সংস্থার মাধ্যমে তোলা টাকা ছবির প্রযোজনায় খাটেনি। নচেৎ সেবি-র কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে আসতে হবে। দু’টোর কোনওটাই করা না-হলে সেবি পদক্ষেপ করতে পারে।

গ্রিনটাচ প্রোজেক্টস লিমিটেড এবং গ্রিনটাচ এন্টারটেনমেন্ট-এর মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক কী? শ্যামসুন্দরবাবু বলেন, “এই দু’টি সংস্থা আলাদা।”

গ্রিনটাচ প্রোজেক্টস লিমিটেড-এর যে চার জন কর্ণধারের নামে সেবি নির্দেশিকা জারি করেছে, তাঁরা হলেন শ্যামসুন্দর দে, স্নেহাশিস সরকার, সুজয় সাহা এবং সুমন সরকার। গ্রিনটাচ এন্টারটেনমেন্ট প্রযোজিত সিনেমার পোস্টারে প্রযোজক হিসেবে শ্যামসুন্দর দে-র নামই থাকে। শুক্রবার মুক্তি পেতে চলা ছবির ক্ষেত্রেও তাই-ই রয়েছে। শ্যামসুন্দরবাবু এ দিন স্বীকার করেছেন, তিনি গ্রিনটাচ প্রোজেক্টস লিমিটেড-এর অন্যতম ডিরেক্টর। তাঁরই প্রযোজনায় তৈরি অভিজিৎ গুহ এবং সুদেষ্ণা রায় পরিচালিত এই ‘হারকিউলিস’ ছবিতে অভিনয় করছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, পাওলি দাম এবং শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়।

কী ভাবছেন শ্যামসুন্দরবাবু? তাঁর কথায়, “সেবি কী বলেছে, আমি ভাল করে জানি না।” কিন্তু সংস্থার এক জন কর্ণধার হিসেবে সেটা কী করে অজানা থাকল শ্যামসুন্দরবাবুর? “যদি জানতাম, তা হলে নিশ্চয়ই আপনাকে জানাতাম,” বলছেন তিনি। তাঁর প্রযোজনা সংস্থায় অর্থলগ্নির টাকা খাটে কি না, সে সম্পর্কে স্পষ্ট উত্তর মেলেনি শ্যামসুন্দরবাবুর কাছ থেকে।

টলিউডের বাজারে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার টাকা খাটার বিষয়টি অবশ্য একেবারেই নতুন নয়। এই জাতীয় বহু সংস্থাই বাংলা ছবিতে টাকা ঢেলেছিল। ২০১১-১২তে টলিউডে ৬০-৭০ শতাংশ ছবিই প্রযোজনা করত এই সংস্থাগুলো। সারদা কেলেঙ্কারির পরে অবশ্য তারা বেশির ভাগই বিনোদন ব্যবসা থেকে নিজেদের গুটিয়ে ফেলে।

প্রয়াগ গ্রুপ, অ্যালকেমিস্ট, রেম্যাক ফিল্ম, রুফার্স মিডিয়া, সিলিকন গ্রুপ অব কোম্পানিজ, আইকোর এন্টারটেনমেন্ট রাতারাতি নিজেদের সরিয়ে নেয়। ‘ভাল থেকো’, ‘একটি আষাঢ়ে গল্প’, ‘আমি সায়রা বানু’, ‘জলে-জঙ্গলে’, ‘কাঁচের দেওয়াল’-এর মতো বহু ছবি মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। এমনকী ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু কমিউনিকেশনস’-এর ব্যানারে ‘মনের মানুষ’, ‘ল্যাপটপ’ ও ‘শব্দ’ বা ‘আশ্চর্য প্রদীপ’-এর মতো ছবি করা ‘রোজ ভ্যালি’-ও নিজেদের বিনোদন বিভাগ বন্ধ করে দেয়।

‘গ্রিনটাচ’-এর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইদানীং টালিগঞ্জের কার্যত নিয়ন্ত্রক বলে পরিচিত যুবকল্যাণ ও আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস মন্তব্য করতে চাননি। প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা বলছেন, “ঘটনাটা দুর্ভাগ্যজনক। বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার উপস্থিতি টালিগঞ্জের অনেক ক্ষতি করেছে।” তবে ইন্ডাস্ট্রির বেশির ভাগেরই একটাই প্রশ্ন, “কাউকে বাইরে থেকে দেখে কী করে বোঝা যাবে তার টাকার উৎস কী?”

তবে কি এখনও অনেক অর্থলগ্নি সংস্থা বকলমে টালিগঞ্জে টাকা ঢেলে চলেছে? প্রযোজক পীযূষ সাহার দাবি, বেশ কিছু সংস্থা ঝাড়খণ্ড, বিহার থেকে টাকা তুলে টালিগঞ্জে বিনিয়োগ করছে। প্রসঙ্গত, সেবি-র নির্দেশিকায় গ্রিনটাচ-এর টাকা তোলার ক্ষেত্র হিসেবেও বিহারের কথাই বলা হয়েছে।

শ্যামসুন্দরবাবুর সঙ্গে কাজ করা কলাকুশলীরা এ ব্যাপারে কিছু জানেন কি? পরমব্রত বলেন, “আমি এটুকুই জানি, শ্যামসুন্দরবাবু সৎ মানুষ। আমি মনে করি, উনি কখনওই আইনবিরোধী কাজ করবেন না।” রাজ চক্রবর্তীর মন্তব্য, “ব্যাপারটা ঠিক জানি না। শুধু চাইব, ওঁর যেন কোনও ক্ষতি না হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন