হলে ঢুকে জানা গেল প্রশ্ন ফাঁস

এ বারই রেকর্ড সংখ্যক পরীক্ষার্থী রঘুনাথপুর শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (আইটিআই) ভর্তির আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে গিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর শুনে চরম ভোগান্তিতে পড়লেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আদ্রা শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০০:২১
Share:

এ বারই রেকর্ড সংখ্যক পরীক্ষার্থী রঘুনাথপুর শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (আইটিআই) ভর্তির আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে গিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর শুনে চরম ভোগান্তিতে পড়লেন তাঁরা। সারা পুরুলিয়া জেলায় ভোগান্তির শিকার হওয়া আইটিআইয়ের পরীক্ষার্থ়ীর সংখ্যা দশ হাজারের বেশি।

Advertisement

রবিবার সারা রাজ্যের সঙ্গে পুরুলিয়ার ২৫টি পরীক্ষাকেন্দ্রে আইটিআই-এর প্রবেশিকা পরীক্ষা ছিল। কিন্তু পরীক্ষা নেওয়ার শেষ মুহূর্তে খবর আসে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গিয়েছে। এর জেরে পরীক্ষা গ্রহণ স্থগিত করে দেওয়া হয়। বৃষ্টি-বদলের মধ্যে পরীক্ষা দিতে এসে শেষ পর্যন্ত তা বাতিল হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ছড়ায় পরীক্ষার্থীদের মধ্যে। কয়েকটি কেন্দ্রে সামান্য বিক্ষোভও দেখান কিছু পরীক্ষার্থী।

এ বছর পুরুলিয়া জেলার দুই আইটিআই রঘুনাথপুর ও ঝালদার ডুরকুতে ভর্তি হতে কার্যত রেকর্ড সংখ্যক আবেদন জমা পড়েছিল। রঘুনাথপুরে ৪৫০টি আসনের জন্য আবেদন পড়ে ৮,২৫৮টি। ঝালদার ক্ষেত্রে ফর্ম জমা পড়েছিল প্রায় ২৫০০। জেলায় শিল্পের অবস্থা রুগ্ন হলেও দু’টি শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রেকর্ড সংখ্যায় আবেদন পড়ায় শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষকরা খুশি হন।

Advertisement

রঘুনাথপুর, আদ্রা-শহর সহ রঘুনাথপুর ১ ও ২ ব্লক, কাশীপুর, পুরুলিয়া সদর ও ঝালদা মিলিয়ে মোট ২৫টি স্কুল-কলেজে আইটিআইয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল এ দিন। পরীক্ষায় বসেছিলেন প্রায় ১০,৫০০ পরীক্ষার্থী। কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ায় কার্যত শেষ মুহূর্তে রঘুনাথপুর ও ঝালদার আইটিআই কর্তৃপক্ষের কাছে পরীক্ষা স্থগিত করার নির্দেশ পাঠায় কারিগরি শিক্ষা দফতর। আর এতেই ক্ষোভ ছড়ায় পরীক্ষার্থীদের মধ্যে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে কষ্ট করে পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতে আসা ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভ, কারিগরি শিক্ষা দফতরের গাফিলতির জন্যই তাঁদের বিস্তর হয়রানির মধ্যে পড়তে হল।

এ দিন বিশেষ করে ক্ষোভ ছড়ায় আদ্রার নিগমনগর এন এস হাইস্কুল ও কাশীপুরের মাইকেল মধুসূদন কলেজের পরীক্ষাকেন্দ্রে আসা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। এই দুই পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরে পরীক্ষা বন্ধ করা হয়। নিগমনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বেলা ১২টা থেকে পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। তার মিনিট দশেক পরে আইটিআই কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা বন্ধ করতে বলেন। তারপরেই পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র ফিরিয়ে নেওয়া হয়।”

পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ গোপন রাখেনি ওই পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসা ঝালদার তাপস গোপ, সুরুলিয়ার বিভীষণ মাহাতো, বিকাশ মাহাতোরা। তাঁদের কথায়, ‘‘সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ট্রেন ও বাস বদল করে আদ্রায় পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম। পরীক্ষা শুরুর পরে হঠাৎই শিক্ষকরা এসে জানান, পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। আবার সেই কষ্ট করে বাড়ি ফিরতে হবে। নতুন দিন ঘোষণা করলে একইরকম কষ্ট করে ফের পরীক্ষা দিতে আসতে হবে। বাস-ট্রেনের ভাড়াও খামোখা গুনতে হল।’’ প্রশ্ন ফাঁস আটকাতে কড়া ব্যবস্থা কেন নেওয়া হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ঝালদার বীরবল কাঁদু, রঘুনাথপুর কলেজের পরীক্ষা দিতে আসা নিতুড়িয়ার বুবাই বন্দ্যোপাধ্যায়, বাবুন বল। তাঁদের ক্ষোভ, ‘‘কারিগরি শিক্ষা দফতরের অপদার্থতার জন্যই আমাদের এতটা হয়রানির মধ্যে পড়তে হল।”

এ দিকে রঘুনাথপুর আইটিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময়ের কিছু আগে কারিগরি শিক্ষা দফতর থেকে প্রথমে ফোনে পরীক্ষা স্থগিত করতে জানানো হয়। পরে ওই বিষয়ে ই-মেলে নির্দেশিকা পাঠানো হয়। এরপর একে একে পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতে ওই নির্দেশ পাঠাতে স্বভাবতই কিছুটা সময় লাগে। আবার বেশ কিছু পরীক্ষাকেন্দ্র মৌখিক ভাবে পাওয়া ওই নির্দেশ প্রথমে মানতে চায়নি। সেখানে কারিগরি শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকা লিখিত ভাবে তাদের পাঠানো হয়। সব মিলিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতে পরীক্ষা বন্ধ করতে কিছুটা দেরি হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন