Rabindra Jayanti

শাহি রবি-প্রণাম মঞ্চেও ‘জয় শ্রীরাম’

রবীন্দ্র জয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ‘খোলা হাওয়া’ নামের একটি সংগঠন। তাঁরা নিজেদের ‘অরাজনৈতিক’ বলে দাবি করলেও সংস্থার কর্মকর্তারা অনেকেই বিজেপির নেতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৩ ০৭:১৪
Share:

মঙ্গলবার রবীন্দ্রজয়ন্তীতে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে অমিত শাহ। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক, দীপঙ্কর মজুমদার।

রবীন্দ্র জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে এ বার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি উঠল। অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ‘খোলা হাওয়া’ নামের একটি সংগঠন। তাঁরা নিজেদের ‘অরাজনৈতিক’ বলে দাবি করলেও সংস্থার কর্মকর্তারা অনেকেই বিজেপির নেতা। মঞ্চ থেকে ‘জয় শ্রীরাম’ থামাতে পাল্টা ‘কবিগুরু লহ প্রণাম’ বলা হতে থাকে। কিন্তু ‘রাম-নাম’ তাতে আটকানো যায়নি। তৃণমূলের কটাক্ষ, বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে বিজেপির যে কোনও যোগ নেই, আবার তা প্রমাণিত হল।

Advertisement

সায়েন্স সিটি প্রেক্ষাগৃহে মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাহ। অনুষ্ঠানটিকে আয়োজকেরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন রবীন্দ্র স্মরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে, কিন্তু আবার দর্শকাসনের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি সেই চেষ্টায় কার্যত জল ঢেলে দিল।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারি অনুষ্ঠানে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তিনি বক্তৃতা করার আগেই দর্শকাসন থেকে ওঠে ‘জয় শ্রীরাম স্লোগান’। বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী সে দিন বক্তব্য না রেখেই নেমে আসেন। রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করেছিলেন, বিজেপি কর্মীদের ‘অত্যুৎসাহী’ স্লোগানের জন্য অনুষ্ঠানের গরিমা ক্ষুণ্ণ হয়েছিল। এর আগে বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁদের সামনেই ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ওঠে। এমনকি, বাংলায় প্রথম বন্দে ভারত ট্রেনের সূচনার দিনও একই কাণ্ড ঘটে। আগের ঘটনাগুলিতে স্লোগান থামানোর কোনও চেষ্টা না হলেও এ দিন তা করার একটি মৃদু চেষ্টা হয়। কিন্তু তাতে তেমন কাজ হয়নি।

Advertisement

সঞ্চালক শঙ্কুদেব পণ্ডা অনুষ্ঠানের শুরুতেই ঘোষণা করেন, “আমাদের অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আমরা রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করব। অনুষ্ঠানের গাম্ভীর্যের কথা মাথায় রেখে আপনারা আচরণ করবেন।” কিন্তু তাতে তেমন লাভ হয়নি। সোমলতা আচার্য, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, তনুশ্রী শঙ্করদের রবীন্দ্র উপস্থাপনার পরে মুহূর্মুহূ ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি উঠল। যা থামাতে গিয়ে শঙ্কুকে মাইক ধরে পাল্টা ‘কবিগুরু লহ প্রণাম’ ধ্বনি তুলতে হল।

শাহের বক্তব্য যদিও পুরোটাই ছিল রবীন্দ্রনাথ-কেন্দ্রিক। মিনিট কুড়ির লিখিত ভাষণ পাঠে তিনি মূলত রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা চিন্তা এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা তুলে ধরেন। তিনি জাতীয় শিক্ষানীতির পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের মাতৃভাষায় শিক্ষা দানের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে বলেন, “বিশ্বভারতী গোটা বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।” ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে হয়ে শুভেন্দু বলেন, “গীতাঞ্জলির বিকল্প কখনও কথাঞ্জলি হতে পারে না। পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের পথ আমাদের নিতে হবে।” সেই সঙ্গে কর্মীদের ভয়মুক্ত হওয়ার বার্তা দিতে গিয়ে তিনি তাঁর বক্তৃতা শুরু করেন ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য’ আবৃত্তি করে, শেষ করেন ‘মুক্ত করো ভয়’ গানটি গেয়ে। তার পরেও দর্শক আসন থেকে ক্রমাগত ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি উঠতে থাকায় ফের শঙ্কুকে বলতে হয়, “বিরোধী দলনেতাও রাজনীতির বাইরে বেরিয়ে রবীন্দ্রনাথেই সীমাবদ্ধ থাকলেন। আমরাও যেন সেই চেষ্টা করি।”

তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “এরা বাংলার সংস্কৃতি জানে না। রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি, নজরুলকে সম্মান করতে জানে না। এমন একটা সংস্কৃতির আমদানি করতে চাইছে যার সঙ্গে বাংলার কোনও সম্পর্ক নেই। শুধু বিয়ে আর ফুলশয্যার রাতে ‘জয় শ্রী রাম’ বলতে বাকি রেখেছে।” তাঁর বক্তব্য, “শুভেন্দু অধিকারী বোকা বোকা কথা বলছেন। একটা বইয়ের সঙ্গে অন্য একটা বইয়ের কোনও তুলনা হতে পারে না। ওঁর আগে ক্ষমা চাওয়া উচিত, কারণ ওঁর উপস্থিতিতে রবীন্দ্রজয়ন্তীতে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান উঠেছে।” শাহদের নিয়ে রবীন্দ্র-স্মরণ প্রসঙ্গে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘ধর্মের নামে যে মোহ, তার বিরুদ্ধে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আর বিজেপি এবং আরএসএসের কর্মকাণ্ডই হল ধর্মের মোহ তৈরি করা। এর আগে নেতাজিকে আত্মসাৎ করার চেষ্টা করেছিল, পারেনি। ভগৎ সিংহকে নিয়েও সেই চেষ্টা হয়েছে। এ বার রবীন্দ্রনাথকে আত্মসাতের চেষ্টা হচ্ছে!’’

যদিও ‘ধ্বনি বিপর্যয়ে’ অনুষ্ঠানের মাহাত্ম্য ‘ক্ষুণ্ণ’ হয়নি বলে দাবি রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে এই ধ্বনি শুনে উত্তেজিত হয়ে পড়েন, তাতে কিছু মানুষ এই ধ্বনির প্রতি অতিরিক্ত আকৃষ্ট হয়ে গিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে রামের বিরোধ নেই তো।” এ দিন সকালে শাহ জোড়াসাঁকোয় ঠাকুরবাড়ি যান। সেখানে তিনি রবীন্দ্রমূর্তিতে মাল্যদান করেন। ঠাকুরবাড়ি ঘুরেও দেখেন। ঠাকুরবাড়ির ভিজিটর্স বুকে গুজরাতিতে তাঁর ভাল লাগার কথা লেখেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন