খড়্গপুরের বিজেপি বিধায়ক দিলীপ ঘোষের প্রণাম পূর্বসূরি জ্ঞান সিংহ সোহনপালকে। বৃহস্পতিবার রামপ্রসাদ সাউয়ের তোলা ছবি।
রেড রোডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথ অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তারই ঠ্যালায় বিজেপির বিক্ষোভের ঠিকানা হল জেলায়!
রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, শাসক দলের সন্ত্রাসের বিরোধিতা করে তাঁরা শপথ অনুষ্ঠান বয়কট করবেন। সেই সিদ্ধান্ত থেকে তাঁরা সরলেন না। কিন্তু শাসক দলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কলকাতায় পূর্ব নির্ধারিত বিক্ষোভ কর্মসূচি দিল্লির চাপে বাতিল করতেই হল দিলীপকে। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার জানান, শপথ বয়কট হচ্ছে। জেলায় জেলায় এসপি দফতরে বিক্ষোভও হচ্ছে। কিন্তু কলকাতায় কোনও কর্মসূচি থাকছে না।
শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতিনিধি হিসেবে থাকবেন জেটলি। বুধবার অমিত শাহ এ খবর জানাতেই বিজেপির দ্বিচারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। পর্যবেক্ষকদের মতে, মমতার শপথে জেটলি থাকাকালীন বিজেপি কলকাতায় বিক্ষোভ দেখালে ওই অভিযোগ জোরালো হতো। দল হাসির খোরাক হতো। বিক্ষোভ তাই জেলাতেই সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে।
মমতার সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বোঝাপড়া নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে রাজ্য বিজেপি নেতারা। তৃণমূল যখন ইউপিএ সরকারের শরিক ছিল, তখন এমনই অবস্থা ছিল রাজ্য কংগ্রেসের। প্রতাপবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘তৃণমূলকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই নেই। সোমবার আমরা হাজরা মোড় থেকে মিছিল করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি যাওয়ার কর্মসূচি নিয়েছিলাম। পরেও শহরে নানা আন্দোলন চলবে। কিন্তু শুক্রবার রাজ্য নেতারা বিভিন্ন জেলার কর্মসূচিতে থাকবেন।’’ অমিতের অনুমতি নিয়েই তাঁরা শপথ বয়কট করছেন বলেও প্রতাপবাবু জানান।
রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, আসলে ছক কষেই এই দু’মুখো কৌশল নিয়ে চলছেন অমিতরা। রাজ্যসভায় বিল পাশ করানোর তাগিদে বিজেপির শীর্ষ নেতা-মন্ত্রীরা মমতার সঙ্গে সংঘাত এড়াচ্ছেন। সে জন্যই জেটলিকে পাঠানো হচ্ছে মমতার শপথে। আবার ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে এ রাজ্যে আরও আসন পেয়ে সংগঠন মজবুত করার লক্ষ্য দিলীপবাবুর। সে জন্যই রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করে জমি দখলের অঙ্ক থেকে সরছেন না। যে কারণে শপথে জেটলির যোগদান নিয়ে এ দিন মেদিনীপুরে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘কেন্দ্রের রাজনীতি কেন্দ্রের মতো। সেখানে সৌজন্যবোধ থাকে। কিন্তু যারা বিরোধীদের রক্তে হাত রাঙাচ্ছে, তাদের শপথে আমরা যোগ দেব না। এই ধরনের অত্যাচারী, গণতন্ত্র ধ্বংসকারীদের প্রতি আমার কোনও সৌজন্যবোধ নেই!’’
ভোটের পরে বিজেপি-সহ সব বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরাই আক্রান্ত। অভিযোগের তির শাসক তৃণমূলের দিকে। এ দিন খড়্গপুরে বেশ চড়া সুরেই দিলীপবাবু বলেন, ‘‘দিদি, দু’দিন আপনার পুলিশদের ছুটি দিয়ে দিন। আপনার ভাইদের কী ভাবে শায়েস্তা করতে হয়, আমার জানা আছে! আমরা মেরে হাড়গোড় ভেঙে বস্তায় ভরে দেব!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘চমকে ধমকে আর আমাদের কাউন্সিলরদের নিয়ে যাওয়া যাবে না। আর আমরা মার খাব না। ঘরে ঢুকে আমরা মারব!’’
দিলীপবাবুই আজ খড়্গপুর সদরের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেবেন। রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ব্যারাকপুরে এবং লকেট চট্টোপাধ্যায় থাকবেন হুগলিতে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ এবং সদ্য প্রাক্তন বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যকে কোনও জেলাতেই বিক্ষোভের নেতৃত্বে পাঠাচ্ছেন না দিলীপবাবুরা। এ প্রসঙ্গে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘আমরা রাজ্য নেতাদের জেলায় জেলায় যেতে বলেছি। রাহুলবাবু এখন কেন্দ্রীয় নেতা। তাই তাঁকে বলিনি। তিনি নিজে কোথাও যেতে চাইলে নিশ্চয়ই যাবেন। আর শমীকবাবু ভোটে হেরে গিয়েছেন। এখন দলের পদাধিকারীও নন। তাই তাঁকে বলা হয়নি। পরে তাঁকে কী দায়িত্ব দেওয়া যায়, দেখব।’’
কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে কাল, শনিবার সল্টলেকের ইজেডসিসি-তে অনুষ্ঠান করবে বিজেপি। সেখানে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু, কেন্দ্রীয় নেতা রাম মাধব থেকে শুরু করে দলের রাজ্য নেতারা যোগ দেবেন।