Jalpaiguri

বড় নেতার ঘনিষ্ঠ খাদান মালিকের সঙ্গে বিরোধ! উপরতলার ‘শাসনে’ চাকরি ছাড়লেন ওসি

জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার রাতে জলপাইগুড়ি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ডেনদুপ ভুটিয়ার কাছে নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন মালবাজার থানার ওসি অসীম মজুমদার।

Advertisement

সিজার মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৭:২৯
Share:

অসীম মজুমদার। নিজস্ব চিত্র

বালি খাদানের ‘বেনিয়ম’ নিয়ে সক্রিয় হতে গিয়ে, পড়ে গেলেন জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের কোপে। আর এর নেপথ্যে উঠে আসছে রাজ্যের শাসক দলের এক অতি প্রভাবশালী নেতার নাম। উপরতলার আচরণ এবং পদক্ষেপ মানতে না পেরে, চাকরি থেকেই ইস্তফা দিয়ে দিলেন জলপাইগুড়ির এক পুলিশ আধিকারিক। এই ঘটনা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়েছে রাজ্যের পুলিশ মহলে।

Advertisement

জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার রাতে জলপাইগুড়ি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ডেনদুপ ভুটিয়ার কাছে নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন মালবাজার থানার ওসি অসীম মজুমদার। কেন তিনি ইস্তফা দিলেন তা নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য তিনি করেননি। তবে ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন— গোলমালের সূত্রপাত গজলডোবায় তিস্তার একটি বালি খাদানকে ঘিরে।
কিছু দিন আগে ওই বালি খাদানটির ই-টেন্ডার হলে, কলকাতার একটি মাইনিং গোষ্ঠী-সহ প্রায় ১৩টি সংস্থা বালি তোলার বরাত পায়। আর এর পর থেকেই গোলমালের শুরু।

মালবাজার ওদলাবাড়ি এলাকায় বালি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত এক ঠিকাদারের কথায়, গোটা জেলায় প্রতি ২০০ কিউবিক ফুট বালির জন্য খাদান মালিক পান ৭০০ টাকা। তাঁর দাবি, রয়্যালটি বাবদ খাদানের ইজারাদার কত টাকা পাবেন তা ঠিক করে ভূমি রাজস্ব দফতর। সেই অঙ্ক প্রতি ১০০ কিউবিক ফুটে ২০০ টাকা। কিন্তু তার সঙ্গে শ্রমিকদের মজুরি এবং আনুষঙ্গিক বিভিন্ন খরচখরচা ধরে প্রতি ১০০ কিউবিক ফুট বালির দাম ইজারাদার, স্থানীয় লরি চালক সংগঠন এবং শ্রমিক সংগঠন সবাই মিলে ঠিক করে। গোটা জলপাইগুড়ি জেলায় সর্বসম্মত ভাবে ৭০০ টাকা মেনে চলা হয় ২০০ কিউবিক ফুট বালির রয়্যালটি মূল্য।

Advertisement

আরও পড়ুন: উন্নাওয়ের নির্যাতিতাকে চোখের জলে চিরবিদায়, ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা গ্রাম

ওদলাবাড়ি এলাকায় শাসক দলেরই এক মাঝারি নেতার কথায়, ‘‘কলকাতার ওই মাইনিং গোষ্ঠী বালিঘাটের ইজারা পাওয়ার পরেই সেই রয়্যালটি ৭০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩০০ টাকা করে দেয়।’’ অভিযোগ, প্রায় দ্বিগুণ রয়্যালটি হওয়ার পরেই ওই বালিঘাটকে ঘিরে অশান্তি বাধতে থাকে। ওই তৃণমূল নেতার কথায়, গণ্ডগোল যাতে না বাড়ে তার জন্য মালবাজার থানার ওসি অসীম মজুমদার ট্রাক চালক অ্যাসোসিয়েশন, ঘাটের ইজারাদার থেকে শুরু করে সব পক্ষকে জেলার বাকি জায়গায় যা দর সেই দরেই বালি বিক্রি করার অনুরোধ করেন। তাতে ইজারাদারদের এক পক্ষ রাজি হলেও, বেঁকে বসে কলকাতার কোম্পানিটি।


জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, ঘনিষ্ঠদের কাছে ওই ওসি অভিযোগ করেছেন যে, কলকাতার ওই কোম্পানিটির সঙ্গে রাজ্যের এক অতি প্রভাবশালী ব্যক্তির ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। ফলে ওসি মালবাজারের জন্য কোম্পানির তৈরি হওয়া ‘অসুবিধা’র কথা কানে যায় ওই রাজনীতিকের। তাঁর কাছ থেকে বার্তা যায় জেলার পুলিশ সুপার অভিষেক মোদীর কাছে। অভিযোগ, তার পরেই মালবাজার থানা থেকে সরিয়ে অসীমবাবুকে ওদলাবাড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে বদলির নির্দেশ দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। ওই পুলিশ আধিকারিক ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন যে, তিনি কোনও অন্যায় করেননি যার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার এ ধরনের ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ নিতে পারেন। তিনি গোটা বিষয়ে অপমানিত বোধ করে চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ইস্তফাপত্র পাঠান তাঁর উপরওলা ডেনদুপ ভুটিয়াকে।

আরও পড়ুন: টাকা-বাড়ি চাই না, দোষীদের ৭ দিনের মধ্যে বিচার নিশ্চিত করুন, দাবি উন্নাওকন্যার পরিবারের

জেলার পুলিশ সুপার অভিষেক মোদীর এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে তাঁকে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলেও তিনি কোনও উত্তর দেননি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারও একই ভাবে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন