Elephant

জলপাইগুড়িতে হাতির তাণ্ডব, আতঙ্কে কাঁচা ধান ঘরে তুলছেন চাষিরা

সোমবার রাতেও শাবক-সহ প্রায় ৩৫টি হাতির ১টি দল নিরঞ্জন পাঠা গ্রামের ধানক্ষেতে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। নষ্ট করে ধান। আতঙ্কিত গ্রামবাসীদের দাবি, গত ১ সপ্তাহে প্রায় ১০০ বিঘার উপর ধানক্ষেত নষ্ট করেছে হাতির দল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২০ ১৩:৩১
Share:

হাতির তাণ্ডবে ধান পাকার আগেই কাঁচা ধান কাটতে ব্যস্ত ধানচাষিরা। —নিজস্ব চিত্র।

সন্ধ্যা হতেই ধানক্ষেতে শুরু হয় হাতির তাণ্ডব। আতঙ্কে কাঁচা ধান পাকার আগেই তা কেটে ঘরে তুলে নিচ্ছেন জলপাইগুড়ির কৃষকেরা। ওই জেলার ধূপগুড়িতে নিরঞ্জন পাঠা এলাকার গত কয়েক দিন ধরেই চলছে হাতির হানা।

ধূপগুড়ির স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রায় প্রতি দিন রাতেই সোনাখালি জঙ্গল থেকে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি হাতির ১টি দলের তাণ্ডব চলছে। কখনও নিরঞ্জন পাঠ, কখনও বা গারখুটা। আবার কোনও সময় খট্টিমারি গ্রামে ধানের লোভে ঢুকে পড়ছে হাতিরা। সোমবার রাতেও শাবক-সহ প্রায় ৩৫টি হাতির ১টি দল নিরঞ্জন পাঠা গ্রামের ধানক্ষেতে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। নষ্ট করে ধান। আতঙ্কিত গ্রামবাসীদের দাবি, গত ১ সপ্তাহে প্রায় ১০০ বিঘার উপর ধানক্ষেত নষ্ট করেছে হাতির দল।

ধূপগুড়ি ব্লকের নিরঞ্জন পাঠা এলাকায় হাতির তাণ্ডবে রীতিমতো অতিষ্ট কৃষকেরা। সোমবার সকালে দেখা গেল, ধান পাকার আগেই কাঁচা ধান কাটতে ব্যস্ত ধানচাষিরা। নিরুপায় হয়েই কাঁচা ফসল ঘরে তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। স্থানীয় কৃষক যোগেন রায় বলেন, “প্রায় প্রতি দিনই সন্ধ্যার পর হাতির দল আসে ধানক্ষেতে। সারা রাত ধান খেয়ে ভোরবেলা জঙ্গলে ফিরে যায়।” হাতির তাণ্ডবে আতঙ্ক দিন কাটচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

আরও পড়ুন: জমি বিবাদে গুলি- বোমার লড়াইয়ে রণক্ষেত্র চাঁচোল, মৃত ১, আহত ৩

নিরঞ্জনপাটে ধানক্ষেতের মধ্যে দিয়ে নিজেদের যাতায়াতের জন্য রীতিমতো রাস্তা বানিয়ে ফেলেছে হাতিরা।—নিজস্ব চিত্র।

Advertisement

গত কাল নিরঞ্জনপাটে গিয়ে দেখা গেল, ধানক্ষেতের মধ্যে দিয়ে নিজেদের যাতায়াতের জন্য রীতিমতো রাস্তা বানিয়ে ফেলেছে ওই হাতির দলটি। ইতিমধ্যেই হাতির হানায় কয়েকশো বিঘা জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। হাতির হানা রুখতে অবশ্য স্থানীয় কৃষকেরা নিজেরাই সক্রিয় হয়েছেন। হামলা আটকাতে চাষের জমির চারদিকে দড়ি লাগিয়ে তাতে প্লাস্টিকের প্যাকেট ঝুলিয়ে রেখেছেন তাঁরা। যাতে হাতিরা সেটিকে ইলেকট্রিক তার ভেবে চাষের জমিতে না ঢোকে। কিন্তু তার পরও প্রায় প্রতি দিনই হাতির হামলা চলছে। যার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল।

আরও পড়ুন: ট্রেন চলবে ১০-১৫%, অর্ধেক যাত্রী নিয়ে লোকাল চায় রেল

ধান কাটতে ব্যস্ত দীপালি রায় বলেন, “সন্ধ্যা হলেই ধানক্ষেতে আসে হাতির দল। তাই পাকুক আর না পাকুক, ও ভাবেই ধান ঘরে তুলতে হবে। পাকার অপেক্ষায় থাকলে ধান আর ঘরে তুলতে হবে না।"

গোটা বিষয়টি নিয়ে ওয়াকিবহাল বন দফতরও। এ বিষয়ে জলপাইগুড়ি অবৈতনিক ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেন সীমা চৌধুরী বলেন, “এই সময়ে প্রায় প্রতিটি জঙ্গলে হাতির পাল রয়েছে। মরাঘাট, সোনাখালি জঙ্গলে প্রায় ৩০-৩৫টি হাতির একটি দল রয়েছে। হাতির দলটি কখনও কখনও নিরঞ্জন পাঠা, কখনও বা খট্টিমারিতে ঢুকে পড়ছে। আগে ধানক্ষেতে চারপাশ দিয়ে লেবু গাছ লাগানো হত, যাতে ক্ষেতের ভিতরে হাতি প্রবেশ করতে না পারে। ফলে সেই সময় ক্ষতির পরিমাণ কম ছিল। তবে এখন ক্ষেতের চার পাশে লেবু গাছ লাগান না কৃষকরা। তাই হয়তো ক্ষেতে হাতিরা হানা দিচ্ছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ জানিয়ে কৃষকদের আবেদন করতে বলেছি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন