school

Jalpaiguri Mosque: মাইকের শব্দে পড়া বন্ধ হয়ে যেত যে! আজান হলেও তাই মাইক বন্ধই রাখল মসজিদ

পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে মসজিদের মাঠে, খোলা হাওয়ায়। পলিথিন বিছিয়ে ছড়িয়েছিটিয়ে বসেছে পড়ুয়ারা।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:১৬
Share:

মসজিদের মাঠে বসেছে ক্লাস। জলপাইগুড়ির গোমিরাপাড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

মসজিদের উঠোনে আম গাছ। তার ডালেই বাঁধা মাইক। সেই মাইক বাজিয়েই এত দিন দিনে পাঁচ বার আজান দেওয়া হত। ছবিটা বদলে গেল মঙ্গলবার। আজান হল, কিন্তু মাইক বাজল না। কেন? গাছের ছায়ায় ছোট ছেলেমেয়েদের দেখিয়ে জলপাইগুড়ির বেরুবাড়ি গোমিরাপাড়ার এই মসজিদের মোয়াজ্জেম নজরুল ইসলাম বললেন, ‘‘মাইকের শব্দে পড়া বন্ধ হয়ে যেত যে!’’

Advertisement

নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল সবে সপ্তাহ দুয়েক হল চালু হয়েছে। কিন্তু নিচু ক্লাসগুলির কী হবে? তাই পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে মসজিদের মাঠে, খোলা হাওয়ায়। মাটিতে পলিথিন বিছিয়ে ছড়িয়েছিটিয়ে বসেছে পড়ুয়ারা। আমগাছের ছায়ায় ক্লাস চলছে গোমিরাপাড়া হাইস্কুলের এই ক’টি ক্লাসের। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এই এলাকায় ইন্টারনেটের সংযোগ ভাল নয়। গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দার আর্থিক সঙ্গতি নেই ছেলেমেয়েদের স্মার্ট ফোন কিনে দেওয়ার বা আলাদা করে গৃহশিক্ষকের কাছে পাঠানোর। শিক্ষকেরা বলছেন, এমনিতেই বছর দুয়েক নষ্ট হয়েছে। তার উপরে বড়দের ক্লাস শুরু হওয়ার পরে ছোটরা আরও উতলা হয়ে পড়েছে। তারাও স্কুলে যেতে চায়। কিন্তু সরকারি নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তা সম্ভব নয়। তাই এই গাছের ছায়ায় খোলা ‘ক্লাসঘর’।

এই ক্লাসঘর অবশ্য রোজ এক জায়গায় হচ্ছে না। গ্রামে গ্রামে যাচ্ছেন গোমিরাপাড়ার শিক্ষকেরা। স্কুল থেকে বোর্ড, পেন-ডাস্টার নিয়ে তাঁরা এক এক দিন যাচ্ছেন এক এক দিকে। কোথায় কবে ক্লাস হবে, আগের দিন জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই মতো আমগাছের নীচে বা কাঁঠাল, বটের ছায়ায় শুরু হচ্ছে ক্লাস। গোমিরাপাড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নৃন্ময়কুমার রায় বলেন, “অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। ছেলেমেয়েরা তো আসছেই, অভিভাবকেরাও যথাসম্ভব সাহায্য করছেন।”

Advertisement

এ দিন ক্লাস ছিল গোমিরাপাড়ার মসজিদের মাঠে। সেখানে স্কুলের পোশাক পরেই এসেছে পিঙ্কি, মমতা, পুর্বাশি, নুপূর, পরভিনরা। ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া নুপূর বলে, “কত দিন হল স্কুলের পোশাক পরিনি! স্যরেরা ক্লাস নেবেন শুনে তাই ওটাই পরে ফেললাম।’’ দুপুরে ক্লাস ঘিরে বসেছিলেন অভিভাবকেরাও। শিক্ষকদের জন্য তাঁদের কেউ বাড়ি থেকে চা-বিস্কুট নিয়ে এলেন। অভিভাবক ইয়াসমিনা বেগম বলেন, “আমার মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। এত দিন বাড়িতে পড়াশোনা হয়নি। শিক্ষকেরা এ বার গ্রামে পড়াতে আসায় খুব ভাল হয়েছে।’’ তার পরে সামান্য হেসে বললেন, ‘‘বেশি কিছু করতে পারিনি, শুধু চা খাইয়েছি।”

আমগাছের তলায় ইংরেজি থেকে বিজ্ঞান, অঙ্ক থেকে পরিবেশ বিজ্ঞান, অনেক বিষয়েরই ক্লাস হয়েছে। ক্লাস সাজিয়ে দিয়েছেন মসজিদের মোয়াজ্জেমই। শিক্ষকদের বসার এবং বোর্ড রাখার জন্য চেয়ার বাড়ি থেকে এনে দিয়েছেন তিনি।

ক্লাসের মাথার উপরেই বাঁধা রয়েছে মাইক। তার শব্দে যাতে পড়তে সমস্যা না হয়, তাই মাইকে আজান বন্ধও রেখেছেন তিনি। বললেন, ‘‘আমার ছেলেমেয়েও এই স্কুলেই পড়ত। দু’জনই পাশ করে গিয়েছে। এখন যারা পড়ছে, তারাও তো আমাদের সন্তানের মতোই। এত দিন বাদে পড়তে পারছে ছেলেমেয়েরা। মাইকের শব্দে পড়া বন্ধ রাখতে হত। তাই আজ মাইক বন্ধ রাখা হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন