প্যাডেল ঘোরানোর রোজনামচা থেকে ছুটি নিয়ে পানু চলেছেন শ্বশুরবাড়ি

সোমবার রাতে ট্রেন ধরার আগে খালি রসগোল্লার হাঁড়ি আর শাশুড়ির ছাপা শাড়ি চোখে ভাসে! ঠা-ঠা রোদে বিকেল অবধি রিকশা টেনে কেনা হল না! পানু ভাবেন, ভোরে সাগরদিঘি নেমেই মিষ্টিটা কিনতে হবে।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৮ ০৪:২৯
Share:

বাড়িতে পানু দাস। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

জামাই মানুষ কি খালি হাতে যাবে!

Advertisement

সোমবার রাতে ট্রেন ধরার আগে খালি রসগোল্লার হাঁড়ি আর শাশুড়ির ছাপা শাড়ি চোখে ভাসে! ঠা-ঠা রোদে বিকেল অবধি রিকশা টেনে কেনা
হল না! পানু ভাবেন, ভোরে সাগরদিঘি নেমেই মিষ্টিটা কিনতে হবে। তার পরে ট্রেকারে বৌ, দুই ছেলেসুদ্ধ ধলসা গ্রামে শ্বশুরবাড়ি! আরও ২০০ টাকার ধাক্কা...

দমদমের বেদিয়াপাড়ার ঝিল কলোনিতে বাড়িউলি অঞ্জনামাসির ঘরেও জামাই বাবাজীবনের আবির্ভাব ঘটছে আজ, মঙ্গলবার। রিকশার প্যাডেল ঘোরানোর রোজনামচা থেকে ছুটি নিয়ে পানু দাস চলেছেন শ্বশুরবাড়ি...

Advertisement

আরও পড়ুন: বাবাজীবন, মাংস কিন্তু বাইরে

আম-ইলিশের আপ্যায়নের ঘটাপটাবিহীন এই জামাই-খাতিরের গল্প। বরং ছুটির হাওয়া কিনতে ‘একস্ট্রা’ পরিশ্রমের ধকল। শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার রেস্ত জোটাতে তাই বেশ ক’টা রাজমিস্ত্রির কাজ আর বাথরুম পরিষ্কারের বায়না নিয়েছেন জামাইবাবু পানু! মুর্শিদাবাদের অজগাঁয়ে হতদরিদ্র মাসিশাশুড়ি আর শালা-শালিরা। দিন সাতেকের জন্য জামাইবাবুকেই সব্বার খরচ টানতে হবে। ছয় বাই আট ফুটের ঘরটায় মা লক্ষ্মী, বাবা লোকনাথদের রেখে জামাই ষষ্ঠীতে যাওয়ার প্রাক্কালে তবু পানুর বুকটা ভরে ওঠে। এই যে বাড়ি ফিরে বৌয়ের হাতের রান্না, দু’টো চৌকস পুত্তুরের কচি গলায় ‘বাবা’ ডাক শোনা, তা কি কোনওদিনও ভাবতে পেরেছিল পানু! ছেলে দু’টো যে তার নিজের সন্তান নয়, মনেই পড়ে না সেটা।

ছ’বছর আগে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজে দুই খোকা কোলে কলকাতায় আসেন স্বামীপরিত্যক্তা শিবানী হেমব্রম। টালাপার্কের ঝুপড়িতে উজান-ঠেলা সেই তরুণীর জন্য তখন বরাদ্দ পুরুষের অশোভন হাতছানি আর ঠিকাদারের গঞ্জনা। ৪০ ছুঁই-ছুঁই বয়সেও নিজের সংসার হয়নি মাধ্যমিকপাশ বেকার পানুর। মেয়েটাকে একলা কষ্ট পেতে দেখেই রোখ চাপল, ওর পাশে থাকার!

আগের পক্ষের দুই পুত্রসমেত বৌমাকে মেনে নিতে পারেননি পানুর মা-বাবা। কিন্তু চার হাত দ্রুত মিলে গেল। রিকশা চালিয়ে জোটে ৯-১০ হাজার! শিবানীও একটা ঠিকে কাজ নিলেন। দুই ছেলে, শিবধন আর সূর্য— ক্লাস সিক্স, ক্লাস ফাইভ। সরকারি স্কুলে পড়লেও কম্পিউটার ক্লাস, কোচিংয়ের খরচ! তাদের যত খুনসুটি সব বাপের সঙ্গে! পানু হাসেন, ‘‘আমার তো বয়স বাড়ছে! ছেলে দু’টোকে দেখে এখন নিশ্চিন্ত লাগে।’’

কিন্তু খামোখা এত খরচা করে জামাই ষষ্ঠীতে যাওয়া কেন? গম্ভীরমুখে পানু বলেন, ‘‘বৌ-বাচ্চারা তো কোথাও যায় না! একটা এন্টারটেনমেন্ট না-দিলে চলে।’’

ছুটির হাওয়া ডাক পাঠায় দূরের পাড়াগাঁয়ে! বেদিয়াপাড়ায় দরমার দেওয়ালের খোপে ভরা সংসারের খুশি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন