—ফাইল চিত্র।
সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে মঙ্গলবারই তারা প্রশ্ন তুলেছিল। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরও এক ধাপ এগিয়ে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ দাবি করল, সুপ্রিম কোর্টের রায়ই ‘অসাংবিধানিক’। মুসলিমদের ধর্মীয় অধিকারে আদালত অন্যায্য ভাবে হস্তক্ষেপ করেছে, এই অভিযোগ করে সুপ্রিম কোর্টেই পাল্টা আবেদনের কথা ভাবছেন জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। পাশাপাশি কলকাতায় কনভেনশন এবং সমাবেশ করে ওই রায়ের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সংগঠনের রাজ্য কমিটি।
আরও পড়ুন: তালাক-রায় নিয়েই প্রশ্ন সিদ্দিকুল্লাদের
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে বুধবার মহাজাতি সদনের অ্যানেক্স হলে জরুরি বৈঠকে বসেছিল জমিয়তের রাজ্য ওয়ার্কিং কমিটি। বৈঠকের পরে সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী দাবি করেন, ১৯৩৭ সালে ব্রিটিশ সরকার মুসলিম পার্সোনাল ল’কে আইনের স্বীকৃতি দিয়েছিল। স্বাধীনতার পরে বি আর অম্বেডকরের নেতৃত্বে সংবিধানের মুসাবিদা কমিটি সদস্য হয়েছিলেন জমিয়তের তত্কালীন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিফজুর রহমান। ওই কমিটি বিস্তর আলাপা আলোচনার পর মুসলিম ল’কে দেশের নতুন সংবিধানে অধিকার হিসাবে মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্দিকুল্লার প্রশ্ন, ‘‘সেই অধিকার এখনও বহাল আছে। সুপ্রিম কোর্ট বা প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি কেউই চাইলে ওই অধিকার কেড়ে নিতে পারেন না। সেটা করলে সংবিধানকেই নস্যাত্ করা হয়।’’ তা হলে কি তারা সুপ্রিম কোর্টের রায়কে অসাংবিধানিক বলছেন? সিদ্দিকুল্লার জবাব, ‘‘অবশ্যই অসাংবিধানিক। সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ মাত্র এক ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় যে রায় দিয়েছে তা সংবিধানবিরোধী। ওই বেঞ্চের সদস্য বিচারপতিদের তালাক বিষয়ে বিভিন্ন মত ছিল। তার থেকেও বোঝা যায়, বিষয়টি এত সহজ নয়।’’
আরও পড়ুন: বোরখার ফাঁকে জয়ীর চোখ
সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দায়ের করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা করছে জমিয়তের কেন্দ্রীয় কোর কমিটি। কলকাতার মহাজাতি সদনেই আগামী ২৮ অগস্ট কনভেনশন ডাকা হয়েছে এই বিষয়ে করণীয় ঠিক করার জন্য। শহরে বড় সমাবেশও করতে চলেছেন তারা। তবে একই সঙ্গে সিদ্দিকুল্লা মেনে নিয়েছেন, তিন তালাক প্রথার অপব্যবহার অবশ্যই হয়েছে। সেই ব্যর্থতার দায় তাঁদেরও। কিন্তু তাই বলে গোটা মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অধিকারের উপর আদালত কোনও নির্দেশ চাপিয়ে দিতে পারে না বলে জমিয়তের দাবি।
আরও পড়ুন: তিন তালাক নিয়ে আইন আনার ভাবনা নেই কেন্দ্রের
জমিয়তের রাজ্য সভাপতি সিদ্দিকুল্লা এখন রাজ্যের মন্ত্রী এবং তৃণমূলের বিধায়ক। তাঁরা যখন সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করছেন, তৃণমূল তখন এই বিষয়ে নীরব। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সিদ্দিকুল্লার জবাব, আমাদের সভা থেকে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা তিন তালাকের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তার পরে তাঁদের অবস্থান বদলেছে, এমন কোনও বার্তা তৃণমূলের তরফে আমাকে দেওয়া হয়নি। এমনকী, এখন যে এই রায় নিয়ে মতামত দিচ্ছি, তা না-দেওয়ার জন্যও এখনও পর্যন্ত তৃণমূল কিছু বলেনি।