আর কত দিদি মরবে! পথে একরত্তি মেয়ে

তেলঙ্গানার তরুণী পশু-চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের প্রতিবাদে সংসদের বাইরে প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানিয়ে ইতিমধ্যে শিরোনামে এসেছেন দিল্লির মেয়ে অনু দুবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:২০
Share:

সরব: বাবার কোলে অন্বেষা। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র

রবিবারের সকাল। ঝাড়গ্রাম শহরের ব্যস্ত এলাকা শিবমন্দির চকে রাস্তার ধারে বাবার কোলে বসে একরত্তি মেয়েটা। হাতে একটা পিচবোর্ডের উপরে সাদা কাগজ সাঁটানো পোস্টার। তাতে লাল কালিতে লেখা, ‘এ আমার ভারত মহান, কত দিদি এভাবে মরবে? এ বার কি আমাদের পালা?’

Advertisement

তেলঙ্গানার তরুণী পশু-চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের প্রতিবাদে সংসদের বাইরে প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানিয়ে ইতিমধ্যে শিরোনামে এসেছেন দিল্লির মেয়ে অনু দুবে। শনিবার সংসদের ২ আর ৩ নম্বর ফটকের উল্টো দিকের ফুটপাথে একাই একটি পিচবোর্ড হাতে বসেছিলেন তিনি। অনেকটা সেই ধাঁচেই ঝাড়গ্রাম শহরের বছরের নয়েকের অন্বেষা প্রামাণিক এ দিন প্রতিবাদে শামিল হয়। ছুটির দিন সাতসকালে ওই দৃশ্য দেখে হকচকিয়ে থমকে দাঁড়ান অনেকেই। মোবাইল ক্যামেরায় ঘন ঘন ছবি উঠতে থাকে। সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে জঙ্গলমহলের কিশোরীর প্রতিবাদ।

অন্বেষার বাবা রবিন প্রামানিকের দাবি, প্রচারের জন্য নয়, ছোট্ট মেয়ের দাবিতেই পথে বসেছেন তাঁরা। শহরের নতুনডিহির বাসিন্দা রেডিমেড পোশাকের ছোটখাটো ব্যবসায়ী রবিন জানালেন, টিভির খবরে তেলঙ্গানার ঘটনা দেখে ঝাড়গ্রাম লায়ন্স মডেল স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী অন্বেষা প্রশ্ন করেছিল, ‘বাবা, আমাকেও কি এ ভাবে ওরা পুড়িয়ে দেবে?’ মেয়েকে জবাব দিতে পারেননি রবিন। তবে বুঝেছিলেন সমাজ মাধ্যমে নয়, রাস্তায় নেমেই প্রতিবাদটা করা দরকার।

Advertisement

আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেখে শক্তি পাই, বলে বিতর্কে হাসনাবাদের বিডিও

সেই মতো এ দিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মেয়েকে কোলে নিয়েই রাস্তার ধারে বসেছিলেন রবিন। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ের প্রশ্নের জবাব ঠিকমতো দিতে পারিনি। আমিও মেয়ের বাবা। সারা দেশে যা ঘটছে তাতে আগামীতে যে আমার মেয়ের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে?’’ খবর পেয়ে এ দিন থানা থেকে ফোন করা হয় রবিনকে। দাবি-দাওয়া কিছু আছে কিনা জানতে চাওয়া হয়। রবিন জানিয়ে দেন, সে জন্য থানায় যাওয়ার দরকার নেই। রবিনের মতে, পুলিশ দিয়ে কি শুধু নিরাপত্তা দেওয়া যায়? সুস্থ নাগরিক সমাজই এনে দিতে পারে মেয়েদের নিরাপত্তা। তাই এই নীরব প্রতিবাদ।

বাবা-মেয়ের প্রতিবাদ নাড়া দিয়েছে অরণ্যশহরের অনেককেই। অন্বেষার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কল্যাণী আচার্য বলেন, ‘‘অন্বেষা এবং ওর বাবার এই প্রতিবাদ একটি দৃষ্টান্ত।’’

স্বামী ও মেয়ের প্রতিবাদ নিয়ে গোড়ায় কিছুটা শঙ্কায় ছিলেন রবিনের স্ত্রী মুনমুন। কিন্তু বহু মানুষের সাড়ায় অভিভূত তিনি। মুনমুনের উপলব্ধি, ‘‘আমিও যদি মেয়ে ও স্বামীর সঙ্গে প্রতিবাদে বসতাম, তা হলে বৃত্তটা সম্পূর্ণ হত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন