ঢাকার গুলশনে হামলার পর জঙ্গিদের প্রেরণার উৎস হিসাবে বিতর্কিত ধর্ম প্রচারক জাকির নাইকের নাম সামনে এসেছে। তবে ভারতের জেএমবি (জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ) জঙ্গিদের ক্ষেত্রে বিষয়টা শুধু জাকিরের বক্তৃতা শুনে অনুপ্রাণিত হওয়ায় সীমাবদ্ধ ছিল না। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী— খাগড়াগড় বিস্ফোরণে অভিযুক্ত জঙ্গিদের একাংশ বিহারের কিষাণগঞ্জে জাকির নাইকের সঙ্গে বহু গোপন বৈঠকও করেছিল। এই কিষাণগঞ্জে জাকিরের প্রকাশ্য সভায় বাধ্যতামূলক ভাবে হাজির হওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের জেএমবি সদস্যদের জরুরি নির্দেশ দেয় নেতৃত্ব।
জাকিরের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ হিসেবে তাঁকে দেশদ্রোহ ও বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে অভিযুক্ত করার বিষয়টি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছেন। সাম্প্রতিক কালে জঙ্গি সন্দেহে ধৃতদের মধ্যে যারা জাকিরের বক্তৃতায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছে, তাদের তালিকা তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। সে ক্ষেত্রে খাগড়াগড় মামলায় উঠে আসা তথ্য প্রাসঙ্গিক হতে পারে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ২০১৪-র ২ অক্টোবর খাগড়াগড়ে জেএমবি-র ডেরায় বিস্ফোরণের মাস কয়েক আগে কিষাণগঞ্জে সভা করেন জাকির নাইক। ওই সংগঠনের সব সদস্যদের সভায় থাকতে নির্দেশ দিয়েছিল শেখ রহমতুল্লা ওরফে সাজিদ — গোয়েন্দারা যাকে জেএমবি-র বর্ধমান মডিউলের প্রধান বলে চিহ্নিত করেন।
জাকিরের ওই সভায় বর্ধমানের ইউসুফ গাজি ও রেজাউল করিম, বর্ধমানের একটি হাইস্কুলের আরবি শিক্ষক জিয়াউল হক, বিস্ফোরক জোগানদার আমজাদ আলি শেখ ওরফে কাজলের মতো জেএমবি চাঁই ও সদস্যেরা হাজির ছিল। খাগড়াগড় মামলায় ধৃত অসমের হাতুড়ে ডাক্তার শাহনুর আলম জেরায় তা জানিয়েছে।
এক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, ‘‘কিষাণগঞ্জে জাকির নাইকের সঙ্গে সাজিদ, ইউসুফ গাজি-সহ জেএমবি-র চাঁইয়েরা একাধিক গোপন বৈঠক করে। না-হলে জাকিরের প্রকাশ্য সভায় ভিড় জমানোর জন্য বাধ্যতামূলক উপস্থিতির নির্দেশ জারি করার কী দায় ছিল?’’
জাকির নাইক অবশ্য জানিয়ে আসছেন, তাঁর অসংখ্য ভক্ত গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে রয়েছে আর তাদের মধ্যে কেউ যদি তাঁর বক্তৃতা থেকে জঙ্গি কাজকর্মের অনুপ্রেরণা পায়, সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।
তবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একাংশ বলছেন, জাকির নাইকের সব বক্তৃতা যে প্রকাশ্য, তা নয়। তাঁর কিছু বক্তৃতার ভিডিও রেকর্ডিং করে সিডি ও পেন ড্রাইভের মাধ্যমে সে সব গোপনে প্রচার করা হয়। সেই সব বক্তৃতার ভাষা যথেষ্ট উস্কানিমূলক।
নদিয়া-মুর্শিদাবাদে এমন প্রচারে বড় ভূমিকা নিয়েছিল খাগড়াগড় কাণ্ডের আর এক ধৃত গিয়াসউদ্দিন মুন্সি। তার তত্ত্বাবধানেই ২০১০ সালে নদিয়ার কালীগঞ্জের মির্জাপুর গ্রামে একটি ডেরা তৈরি করেছিল জেএমবি। কিন্তু গ্রামের মানুষ জোট বেঁধে সেই ডেরা ভেঙে দেন।
পরে গিয়াসউদ্দিন ওই এলাকায় গোপনে জাকিরের বক্তৃতার ভিডিও রেকর্ডিং প্রচার করেছিল। এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, ‘‘গিয়াস বলত— আমরা না হয় খারাপ। উনি তো পণ্ডিত মানুষ। উনি যা বলছেন, আমরাও কিন্তু সেই কথা বলছি।’’
এক তদন্তকারী অফিসারের প্রশ্ন, ‘‘গণ্ডগোল কিছু না-থাকলে বক্তৃতার ভিডিও রেকর্ডিং সিডি-তে বা পেন ড্রাইভে নিয়ে ল্যাপটপে জুড়ে গোপনে প্রচার করা হবে কেন?’’
জেলে মুসা ও দুই সঙ্গী
আইএস জঙ্গি সন্দেহে ধৃত মুসা এবং তার দুই সঙ্গী আমিন শেখ ওরফে আব্বাসউদ্দিন ও সাদ্দাম হোসেন ওরফে কালো-কে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিল আদালত। এনআইএ সোমবার মুসাদের কলকাতার নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারক শুভ্রা ঘোষের এজলাসে তোলে। এনআইএ-র আইনজীবী শ্যামল ঘোষ জানান, বিচারক তিন জনকেই ১২ অগস্ট পর্যন্ত জেল-হাজতে পাঠিয়েছেন। আইএস জঙ্গি সন্দেহে বীরভূমের বাসিন্দা মুসাকে ৪ জুলাই বর্ধমান স্টেশনে গ্রেফতার করা হয়। পরে ধরা পড়ে তার দুই সঙ্গী। তাদের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে মামলা রুজু করে সিআইডি। পরে তদন্তভার পেয়ে তিন জনকে হেফাজতে নেয় এনআইএ।