Abhishek Banerjee

সমাজবিরোধীদের ‘সুরক্ষা’ দিচ্ছেন বিচারপতি মান্থা, ফের বিচারব্যবস্থার একটি অংশকে তোপ অভিষেকের

নন্দীগ্রামে সংঘর্ষে জখম তৃণমূল কর্মীদের দেখতে এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘হামলাকারী’ ২০ জনের নামের তালিকা মুখ্যমন্ত্রীকেও দেবেন বলে জানান তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৩ ১৯:৫৯
Share:

শুভেন্দু অধিকারীকে ‘রক্ষাকবচ’ দেওয়া নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতিকে নিশানা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নিজস্ব চিত্র।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে ‘রক্ষাকবচ’ দেওয়া নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থাকে নিশানা করেছিলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। এবার দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিশানায় বিচারপতি মান্থা। শুক্রবার অভিষেক সরাসরি অভিযোগ করেন, ‘‘বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা সমাজবিরোধীদের রক্ষাকবচ (প্রোটেকশন) দিচ্ছেন।’’ অভিষেক এ-ও বলেন, যদি এই বক্তব্যের জন্য তাঁকে আদালত অবমাননার দায়ে জেলে যেতে হয়, তা হলে তিনি ১০ হাজার বার জেলে যেতেও রাজি! কিন্তু তিনমি সত্য বলবেনই। অভিষেকের ওই মন্তব্য সম্পর্কে নয়াদিল্লিতে প্রশ্ন করা হয়েছিল বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে। তিনি শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহরে সঙ্গে দেখা করে বাংলার পঞ্চায়েত ভোট এবং তৎপরবর্তী পরিস্থিতির কথা জানান। অভিষেকের বক্তব্য শুনে সুকান্ত বলেন, ‘‘শিয়রে বিপদ! তাই উনি এখন বিচারব্যবস্থাকে আক্রমণ করছেন।’’

Advertisement

ভোটের পরের রাজনৈতিক সংঘর্ষে নন্দীগ্রামের ১১ জন জখম তৃণমূলকর্মী এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন। শুক্রবার তাঁদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন অভিষেক। তার পর হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়েই বিচারব্যবস্থার একাংশের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন তৃণমূলের সেনাপতি। আহত তৃণমূল কর্মীদের দেখে বেরিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘কারা এই হামলায় যুক্ত, আমি তাদের নাম নোট করেছি। এই তালিকা আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেব।’’ অশোক করণ, পবিত্র কর, মেঘনাদ পালের মতো বেশ কিছু বিজেপি নেতার নাম করে তিনি বলেন, ২০ জনের তালিকা মুখ্যমন্ত্রীকে দেবেন। তার পরে অভিষেক সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, এদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? দুর্ভাগ্যজনক হল, বিচারব্যবস্থার একটা অংশ এদের প্রোটেকশন দিয়ে রেখেছে। একজন বিচারপতি সমাজবিরোধীদের প্রোটেকশন দিচ্ছেন।’’

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ‘বিচারব্যবস্থার একাংশ’ বলে আক্রমণ শানালেও পরে সরাসরি বিচারপতি মান্থার নাম করেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘এই একজন বিচারপতি শুভেন্দু অধিকারীকে রক্ষাকবচ দিয়ে রেখেছেন। ভবিষ্যতে তিনি কোনও অপকর্ম করলে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা যাবে না! এফআইআর করা যাবে না!’’ একইসঙ্গে বিচারপতির উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘আমি যদি প্রোটেকশন চাইতে যাই, আমায় দেবেন? খালি শুভেন্দু অধিকারীর ছত্রছায়ায় থাকা নেতাদের প্রোটেকশন দেওয়া হচ্ছে।’’ তৃণমূলের শীর্ষনেতার সাফ কথা, ‘‘আমি সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলছি। তাতে আমার বিরুদ্ধে যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিক।’’

Advertisement

অভিষেক এ দিন আরও বলেন, “যাদের জেলে থাকার কথা, তাদেরকে সুরক্ষা দিয়ে পুলিশের হাত, পা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। কলকাতা হাইকোর্টের একজন বিচারপতি যেভাবে একটা রাজনৈতিক দলকে মদত দিচ্ছেন, তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।" অভিষেকের এও দাবি, স্বাধীনতার পর বিচারব্যবস্থার এরকম পক্ষপাত দেখা যায়নি। তিনি আরও বলেন, “আজ বলতে বাধ্য হলাম। কারণ, শুধুমাত্র একজন বিচারপতির জন্য সমগ্র বিচারব্যবস্থা কলুষিত হচ্ছে।"

অভিষেকের এ-ও প্রশ্ন, “বিজেপির প্রতি এই বিচারপতির কী বাধ্যবাধকতা? কেন বেছে বেছে বিজেপির নেতাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করছেন তিনি?” তাঁর কথায়, “আমার বিরুদ্ধেও তো ইডি, সিবিআই লাগিয়ে রেখেছে। আমি প্রোটেকশন চাইলে দেবেন? দেবেন না! বিজেপি নেতারা না চাইতেই পেয়ে যাচ্ছে!"

বিচারব্যবস্থার ভূমিকা নিয়ে অভিষেক যে এই প্রথম সরব হলেন তা নয়। কিন্তু নতুন যেটা, তা হল একেবারে নাম করে এক জন বিচারপতিকে নিশানা করা। অভিষেকের এই মন্তব্যের অব্যবহিত পরেই আইনজ্ঞ এবং প্রশাসনিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে, কলকাতা হাই কোর্ট বা বিচারপতি মান্থা— কারও তরফে কি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে অভিষেকের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হবে?

(এক নির্বাচিত সাংসদের জনসমক্ষে করা মন্তব্য এই প্রতিবেদনে পুনর্বার তুলে ধরা হয়েছে মাত্র। আনন্দবাজার অনলাইনের প্রধান সম্পাদক, সম্পাদক এবং সমগ্র বার্তা বিভাগের কর্মীরা এই মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন। আনন্দবাজার অনলাইনের প্রধান সম্পাদক, সম্পাদক এবং কর্তৃপক্ষের বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা এবং মাননীয় বিচারপতিদের প্রতি আস্থা, শ্রদ্ধা অটুট এবং অসীম। সম্মাননীয় পাঠক বা সংশ্লিষ্ট অন্য কেউ এই প্রতিবেদনকে কোনও ভাবেই যেন বিচারব্যবস্থা এবং বিচারপতিদের সম্পর্কে অশোভন মন্তব্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অনুমোদন কিংবা সমর্থন হিসেবে বিবেচনা না করেন।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন