ম্যাথুর দাবিতে তোপে কে ডি সিংহ

নারদ-কাণ্ড ফাঁস হতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে! ‘ব্ল্যাকমেলে’র চেষ্টাও হতে পারে! পরে ষড়যন্ত্রের শিকড় খুঁজতে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে দায়িত্ব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘দেখা যাক, কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে পড়ে কি না!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৭ ০৪:৩০
Share:

কে ডি সিংহ

নারদ-কাণ্ড ফাঁস হতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে! ‘ব্ল্যাকমেলে’র চেষ্টাও হতে পারে! পরে ষড়যন্ত্রের শিকড় খুঁজতে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে দায়িত্ব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘দেখা যাক, কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে পড়ে কি না!’’

Advertisement

কিন্তু এখন নারদ-কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েলের দাবি এবং সিবিআই সূত্রে যা বেরিয়ে পড়ছে, তাতে এক দিকে তৃণমূল অস্বস্তিতে পড়েছে। তেমনই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের গোটা রাগ গিয়ে পড়ছে দলেরই এক নেতার উপরে। তিনি তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ, শিল্পপতি কুঁওরদীপ সিংহ! ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে হইচইয়ের সময়ে বিরোধীদের নিশানায় ছিল কে ডি-র সংস্থা। তৃণমূল নেতৃত্ব তখন তাঁকে আড়ালই করতেন। কিন্তু নারদ-কাণ্ডে কে ডি-র যে ভূমিকার কথা নানা সূত্রে প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে সমীকরণ সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে।

স্যামুয়েল সিবিআই এবং সংবাদমাধ্যমকে স্পষ্টই জানিয়েছেন, তৃণমূলের বিরুদ্ধে স্টিং অপারেশন করার জন্য তাঁকে টাকা দিয়েছিল কে ডি-র সংস্থা ‘অ্যালকেমিস্ট’। ম্যাথু এ দিন দাবি করেন, ‘‘অচেনা শহরে আমার কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল না। নিজের কাছে প্রচুর নগদ রাখাও সম্ভব ছিল না। ভোটের সময়ে অত টাকা সঙ্গে রাখলে পুলিশ প্রশ্ন তুলতে পারতো। তাই সল্টলেকের ওই অফিস থেকে টাকা নিতাম। কোন নেতা কত টাকা নেবেন, তা বোঝার পরে ওই অফিস থেকে টাকা তুলে আনতাম।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: দ্বিধা কাটিয়ে নারদে এ বার পথে বিজেপি

সিবিআই সূত্রেও বলা হচ্ছে, তাঁরা তদন্তে জানতে পেরেছেন, সল্টলেকে ‘অ্যালকেমিস্টে’র দফতর থেকে দফায় দফায় টাকা নিয়েই স্টিং-কাণ্ডে নেতা-মন্ত্রীদের দিয়েছিলেন ম্যাথু। সিবিআই তদন্তকারীদের আরও দাবি, স্টিং অপারেশনের জন্য ১০ দফায় ‘অ্যালকেমিস্টে’র দফতর থেকে টাকা নিয়েছিলেন ম্যাথু। ম্যাথু এবং তাঁর স্টিং অপারেশেনের সঙ্গে নিজের যোগসূত্রের কথা অবশ্য রবিবারই অস্বীকার করেছেন কেডি। ম্যাথুর বক্তব্য, স্টিং অপারেশনের সময় তিনি নিউজ পোর্টাল তহলকার ম্যানেজিং এ়ডিটর ছিলেন। তার আগে থেকেই তহলকার অন্যতম মালিক ছিলেন কে ডি। কিন্তু কে়ডির দাবি, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ম্যাথু তহলকা ছেড়ে চলে যান। ম্যাথু সোমবার বলেন, ‘‘উনি বোকা বানানোর চেষ্টা করছেন! স্টিং অপারেশন শুরু করার কিছু দিন আগে উনিই আমাকে নিয়োগ করেন। নিয়োগপত্রও আমার কাছে রয়েছে।’’

এ দিন কে ডি-র প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করা হয়। তাঁর দু’টি মোবাইলই বন্ধ ছিল। পরে তাঁর মুখপাত্রের পরামর্শে ই-মেল মারফত প্রশ্ন পাঠানো হয়। মেলের জবাবে কে ডি-র মুখপাত্র জানান, বিষয়টি বিচারাধীন। তাই এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা সঙ্গত হবে না বলেই তাঁরা মনে করছেন।

কেডির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্যি হোক বা না হোক, তাঁর উপরে বিস্তর চটে রয়েছে তৃণমূলের অন্দরমহল। দলের কেউ কেউ এখন ঘরোয়া আলোচনায় এমনও বলছেন যে, তাঁরা ওই সাংসদকে গ্রেফতার করার কথা মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে চান! বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলিকে শায়েস্তা করতে এখন রাজ্যের যে নিজস্ব আইন রয়েছে, তাতেই কে ডি-কে ধরার কথা বলছেন তাঁরা।

নারদ-তদন্তে ম্যাথুর ভূমিকাও সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখছে না সিবিআই। কারণ, নারদ ফুটেজ ফাঁস করার পরে সংবাদমাধ্যমের কাছে ম্যাথু দাবি করেছিলেন, তাঁর প্রবাসী কিছু বন্ধু স্টিংয়ের জন্য টাকা জুগিয়েছিলেন। আর এখন বলছেন অন্য কথা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন