kabir suman

Kabir Suman: ক্ষমা চেয়ে নিলেন কবীর সুমন! বললেন, আর কার কার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে জানান

পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘ভেবে দেখলাম সে দিন টেলিফোনে এক সহনাগরিককে যে গাল দিয়েছিলাম, সেটা সুশীল সমাজের নিরিখে গর্হিত কাজ।’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২২ ১১:২৮
Share:

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ

একটি বাংলা চ্যানেলের সাংবাদিকের সঙ্গে তাঁর ফোনালাপ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। ফেসবুক পোস্টে ক্ষমা চেয়ে সেই বিতর্কের সমাপ্তি ঘোষণা করতে চাইলেন কবীর সুমন। তবে সঙ্গীতশিল্পী তথা তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদের এই ফোনলাপকে কেন্দ্র করে নেটমাধ্যমে তর্ক-চর্চা কম হয়নি। তৃণমূলের তরফে এই বিষয় নিয়ে কোনও বার্তা না দিলেও দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ শনিবার টুইটে লেখেন, ‘এর জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত, না চাইলে ব্যবস্থা হওয়া উচিত।’ রাজ্য বিজেপি-র পক্ষ থেকেও শনিবারই মুচিপাড়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। ঘটনাচক্রে, তার পরই এই পোস্ট করেছেন সুমন।

Advertisement

পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘ভেবে দেখলাম সে দিন টেলিফোনে এক সহনাগরিককে যে গাল দিয়েছিলাম, সেটা সুশীল সমাজের নিরিখে গর্হিত কাজ। এতে কাজের কাজ কিছু হল না, মাঝখান থেকে অনেকে রেগে গেলেন, উত্তেজিত হলেন। এমনিতেই করোনার উৎপাত তার উপর ফোনে গালমন্দ—লাভ কী। তাই আমি সহনাগরিকের কাছে, বিজেপি আরএসএস-এর কাছে এবং বাঙালিদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।’

তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়া নিয়েও সতর্ক সুমন লিখেছেন, ‘আইনরক্ষীরা নিশ্চিন্ত থাকুন। আমি চেষ্টা করব সব ব্যাপারে একদম চুপ থাকতে। আর কোন কোন ব্যাপারে কে কে আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা দাবি করছেন বা করবেন বলে ভাবছেন দয়া করে একটি তালিকা বানিয়ে ডাকযোগ পাঠান। আমি নতমস্তকে সম্মতিসূচক সই করে দেব।’ সঙ্গে লেখেন, ‘আপনাদের যদি ভাবতে ভাল লাগে যে আমি খুব ভয় পেয়ে এটা লিখছি, তো তাইই ভাবুন। যেটা ভাবলে আপনাদের মন ভাল হয়ে ওঠে সেটাই ভাবুন।’

Advertisement

তবে পোস্টের শেষে তিনি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে পদ্মশ্রী দেওয়া নিয়ে ফের ক্ষোভ জানিয়েছেন। লিখেছেন, ‘আমার মাতৃসমা, গুরুস্থানীয়া সুরসম্রাজ্ঞী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে তাঁর নব্বই বছর বয়সে যে পদ্মশ্রী খেতাব ছুঁড়ে দেওয়া হল তা মানতে পারলাম না।’

শনিবার সকালে তাঁর ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন সুমন। লেখেন, তিনি যা করেছেন, তা দরকার হলেই আবার করবেন। পাশাপাশি লিখেছিলেন, ‘ফোনে, হোয়াটসঅ্যাপে স্বাভাবিক ভাবেই আমি আক্রান্ত। এটাই হওয়ার কথা। আরও হবে। আমার যায়-আসে না। যা করেছি তা, দরকার হলেই, আবার করব।’ সুমনের শনিবারের ফেসবুক পোস্ট বলছে, ফোনের ওই কণ্ঠ তাঁরই ছিল। যদিও সুমন ফোনালাপের প্রসঙ্গ তাঁর পোস্টে লেখেননি। পোস্টটি ‘পাবলিক’ও করা হয়নি। করা হয় ফেসবুকের ‘ওনলি ফ্রেন্ডস’ বিভাগে। অর্থাৎ, যাঁরা সুমনের বন্ধুর তালিকায় রয়েছেন, তাঁরাই ওই পোস্টটি দেখতে পাবেন। নিজের এই অবস্থান থেকে রবিবার সরে এলেন সুমন।

অথচ শনিবারের পোস্টে সুমন আরও লিখেছিলেন, ‘আব্রাহাম লিঙ্কন বলেছিলেন, কিছুর পক্ষে যুক্তি দিতে যেও না। তোমার বন্ধুদের তা দরকার পড়বে না। তোমার শত্রুরা তা বিশ্বাস করবে না। সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যম, শিল্পীর কোনও আলাদা স্বাধীনতা থাকতে পারে বলে মনে করি না। যে কোনও মানুষের যে অধিকার, তাদের অধিকার ততটাই। একটি বিশেষ চ্যানেল ও তার সাংবাদিকরা দিনের পর দিন যা করে যাচ্ছে, তার জবাব দিয়েছি উপযুক্ত ভাষায়। সুরসম্রাজ্ঞীর অপমানের বিরুদ্ধে যে সাংবাদিক বৈঠক হয়েছিল সেখানে কোন চ্যানেলের কোন সাংবাদিক কী করেছে, বলেছে আমি ভুলিনি।’ তার পরে লেখেন, ‘সারা দুনিয়ায় সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকরা তাদের ইচ্ছেমতো পথে চলে। যে কোনও উপায় নেয়। যার হাতে চ্যানেল-কাগজ কিছু নেই, সে-ও তার ইচ্ছেমতো উপায় নেবে। এ বিষয়ে যাঁদের আগ্রহ, জার্মান কাহিনিকার হাইনরিশ্ ব্যোল্ (Heinrich Boell)-এর লেখা The Lost Honour of Katharina Blum উপন্যাসটি পড়ুন। বইটি পড়া দরকার। এক প্রাক্তন সাংবাদিক ও নিয়মিত পাঠক হিসেবে বলছি।’

সুমনের ফেসবুক পোস্ট

শনিবারের এই পোস্টের পর কুণাল লেখেন, ‘জনপ্রিয় গায়ক বা প্রতিভাধর বুদ্ধিজীবী হলেই এ সব বলা যাবে, এটা হতে পারে না।’ শনিবারই এই ফোনালাপ নিয়ে তৎপর হয় রাজ্য বিজেপি। শিল্পী তথা তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদের বিরুদ্ধে মুচিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ। গেরুয়া শিবিরের দাবি, সুমনের মন্তব্য সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় সম্প্রীতির পক্ষে ক্ষতিকর। এখানেই শেষ নয়, সজলের অভিযোগ, ধর্ষণের হুমকি এবং হিন্দুদের অপমান করেছেন সুমন। সুমনের শনিবারের ফেসবুক পোস্ট উল্লেখ করে আনন্দবাজার অনলাইন যে খবর পরিবেশন করে, তার স্ক্রিনশট-সহ একটি টুইট করেন বিজেপি বিধায়ক তথা রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রমুখের নজরেও আনতে চান অগ্নিমিত্রা। সেই সঙ্গে টুইটে লেখেন, ‘বাংলার মাকে ধর্ষণের মন্তব্য করা সুমনের থেকে রাজ্য সরকারের দেওয়া সমস্ত সম্মান ফিরিয়ে নেওয়া হোক।’

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাতে ওই ফোনালাপ ‘ভাইরাল’ হওয়ার পর শুক্রবার রাতে কবি শ্রীজাত ওই বিষয়ে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন। যাতে তিনি জানান, শিল্প আর শিল্পীর স্বাধীনতার আড়ালে যে যা খুশি করতে পারেন না। শ্রীজাত উল্লেখ করেন সুমনেরই একটি গানের লাইন— ‘বিরোধীকে বলতে দাও।’

এর পর রবিবার এল সুমনের ক্ষমাপ্রার্থনা।

এই পোস্টের পর সুমন আরও একটি পোস্টে অডিও রেকর্ড করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি লেখেন, ‘একটি বিশেষ চ্যানেলের এক প্রতিনিধি যখন আমায় ফোন করেন তিনি কিন্তু আমাদের দুজনের কথাবার্তা রেকর্ড করার কথা আমায় বলেননি, আমার অনুমতি নেননি।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন