TMC

মমতার ধমক, কোর কমিটি থেকে বাদ পড়ে কাজলের মুখে কেষ্ট-বন্দনা! নিজেকে বললেন ‘অনুব্রতের শিষ্য’

বীরভূমের দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে মঙ্গলবার জেলা সভাধিপতি কাজল শেখকে ধমক দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলার কোর কমিটি থেকে সরিয়েও দিয়েছিলেন তাঁকে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বোলপুর শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:২৮
Share:

(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কাজল শেখ এবং অনুব্রত মণ্ডল। —ফাইল চিত্র।

বীরভূমের দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে মঙ্গলবার জেলা সভাধিপতি কাজল শেখকে ধমক দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলার কোর কমিটি থেকে সরিয়েও দিয়েছিলেন তাঁকে। সেই সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্টর ‘অভাব’ যে বোঝা যাচ্ছে জেলায়, তৃণমূলনেত্রী তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন প্রকারান্তরে। এর পরেই কেষ্ট-বন্দনা শোনা গেল কাজলের মুখে। প্রকাশ্য সভায় নিজেকে জাহির করলেন ‘অনুব্রত মণ্ডলের শিষ্য’ হিসাবে। অতীতেও কেষ্টকে নিজের ‘শিক্ষাগুরু’ বলতে শোনা গিয়েছিল কাজলকে। গত পঞ্চায়েত ভোটে জেলা সভাধিপতি নির্বাচিত হওয়ার পরেই সে কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু মঙ্গলবারের দলীয় বৈঠকের পর তাঁর এই মন্তব্য যথেষ্টই ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন জেলার অনেকে।

Advertisement

দলীয় সূত্রে খবর, বীরভূমের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে কাজলকে মমতা বলেছিলেন, ‘‘তুমি কত বড় নেতা হয়েছ যে, দল আর সরকার এক করে দিয়েছ! ন’জনের কোর কমিটি তৈরি করে দিয়েছিলাম। এখন শুনছি, তুমি একা নিজের ইচ্ছা মতো কাজ করছ।’’ এর পরেই কাজলকে কোর কমিটি থেকে সরানোর কথা বলেন দলনেত্রী। জেলা পরিষদের কাজে মন দিতে বলা হয় তাঁকে। নানুনের তৃণমূল নেতা অবশ্য একে কোর কমিটি থেকে ‘বাদ’ পড়া হিসাবে দেখছেন না। তাঁর বক্তব্য, তাঁকে বাদ দেওয়া হয়নি। কোর কমিটি স্রেফ ছোট করা হয়েছে। কাজলের কথায়, ‘‘বাদ দেওয়া হয়নি তো। কোর কমিটি ছোট করা হচ্ছে। কমিটিতে ন’জন ছিলেন। এখন পাঁচ জন করা হল। এত জন সদস্য থাকায় বৈঠক ডাকা যাচ্ছিল না। সাংসদেরা দিল্লিতে ব্যস্ত থাকছিলেন। আমি জেলা পরিষদের কাজে। এ সব ভেবেই হয়তো দলনেত্রী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ প্রসঙ্গত, কাজলের সঙ্গে কমিটি থেকে বাদ পড়েন জেলার দুই সাংসদ শতাব্দী রায় এবং অসিত মাল। বাদ পড়েছেন জেলা পরিষদের সদস্য বিশ্ববিজয় মার্ডিও।

অনুব্রত জেলে যাওয়ার পরে জেলায় ‘কেষ্ট-বিরোধী’ বলে দীর্ঘ দিন ধরে পরিচিত কাজলকে কোর কমিটিতে এনেছিলেন মমতাই। সেই কোর কমিটিই এত দিন অনুব্রতহীন বীরভূমে তৃণমূলের যাবতীয় কাজকর্ম সামলেছে। এর মধ্যে জেলা পরিষদে প্রথম বার দাঁড়িয়ে জেতেন কাজল। সভাধিপতিও হন। দলীয় সূত্রের দাবি, এর পর থেকে জেলায় নিজের দাপট বাড়াতে থাকেন কাজল। তাঁর কিছু পদক্ষেপ ও মন্তব্যে দলের অন্দরে চাপা অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। জেলার রাজনীতিতে যাঁরা অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, তাঁদের কোণঠাসা করারও অভিযোগ তুলেছেন দলের কেউ কেউ। জেলায় তৃণমূলের একাংশের মতে, সে সব দলনেত্রীর কানে যাওয়ায় মঙ্গলবার তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। মমতা রাখঢাক না রেখেই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কেষ্ট ফিরে এলে তাঁকেই আবার দায়িত্ব দেওয়া হবে। দলনেত্রী এমনও মন্তব্য করেন— ‘‘কেষ্ট থাকলে বীরভূম জেলা নিয়ে এত ভাবতে হত না! নেই বলে সবাই মিলে কাজ চালাতে হবে।’’

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে কাজলের নিজেকে ‘অনুব্রতের সৈনিক’ বলা নিয়ে জেলায় দলের অন্দরে আলোচনা শুরু হয়েছে। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘আমি তো সব সময় বলি, আমি কেষ্টদার শিষ্য। তাঁর সৈনিক। আমার রাজনীতিতেও আসা কেষ্টদার হাত ধরেই।’’ দলের একাংশের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের আগে জেলায় দলের অন্দরে কাজলকে ঘিরে যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল, তা নজরে রেখেই কাজলকে ‘শাসন’ করেছেন দলের সর্বময় নেত্রী। তাঁকে ধমক দিলেও সাংগঠনিক সব দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া হয়নি। কাজলকে নানুর ও পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম বিধানসভা (যার বিধায়ক কাজলেরই দাদা) এলাকায় সংগঠন দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। দলনেত্রীর বার্তা কাজলও বুঝেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন