কাকদ্বীপ আদালতে পরিবারের লোকজন। ছবি: দিলীপ নস্কর
সিপিএম নেতার বাঁ হাতের পোড়া দাগের সূত্র ধরেই কাকদ্বীপের বুধাখালির জোড়া খুনের ঘটনার কিনারা হল, দাবি সুন্দরবন জেলা পুলিশের। ‘সহানুভুতির ভোট’ আদায় করতে দলীয় সহকর্মীকে খুন করা হয়েছিল বলে দাবি তাঁদের। যদিও সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, পরিকল্পিত ভাবে নিরপরাধদের কর্মী-সমর্থকদের ফাঁসানো হয়েছে। খুনের পরে দাস দম্পতির ছেলে তৃণমূলের কয়েকজনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন থানায়, এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা।
বুধাখালি পঞ্চায়েত আগে তৃণমূলের দখলেই ছিল। যদিও ২১৩ নম্বর আসনটিতে কখনও পরাজিত হয়নি সিপিএম। ওই আসন ধরে রাখতেই খুনের পরিকল্পনা, দাবি পুলিশের। যদিও সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, এই তত্ত্ব নেহাতই পুলিশের মনগড়া। পঞ্চায়েতের একটি মাত্র আসনে ক্ষমতা ধরে রাখতে জোড়া খুন ঘটানোর মতো চিন্তা নেহাতই হাস্যকর। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরেই খুন করা হয়েছে দেবু-উষাকে। সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা নেহাতই হাস্যকর তত্ত্ব। পুলিশের মনগড়া।’’
পুলিশের একটি সূত্র অবশ্য দাবি করছে, দেবু দাস ও তাঁর স্ত্রী উষার দেহ উদ্ধারের সময়েই কাকদ্বীপ থানার একাধিক তদন্তকারীর নজরে পড়েছিল, স্থানীয় সিপিএম নেতা বিদ্যুৎ হালদারের উপরে। বাঁ হাতে সদ্য পোড়া দাগ ছিল তাঁর। ক্ষতের উপরে ওষুধের প্রলেপ ছিল।
পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে ওই জোড়া খুনের ঘটনায় তৃণমূলের একাধিক নেতার নামে এফআইআর হয়েছিল। কিন্তু সন্দেহের তির এলাকার কয়েকজন সিপিএম নেতার দিকেই ছিল।’’ কিছু দিনের মধ্যেই তেলেঙ্গানার মেডকা জেলায় শ্যালকের কাছে চলে যান বিদ্যুৎ। তাঁর ফোনে আড়ি পাতা হয়। পুলিশের দাবি, দেবু-উষাকে খুনের ঘটন নিয়ে ফোনে সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেন বিদ্যুৎ। এরপরেই জেলা পুলিশের একটি দল সে রাজ্যে গিয়ে বিদ্যুৎকে গ্রেফতার করে। পরে গ্রেফতার করা হয় আরও ৮ জনকে। ধৃতদের জেরার ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের দাবি, জেরায় খুনের কথা স্বীকার করেছেন সকলে। ওই ভিডিও প্রশাসনের শীর্ষস্তরে পাঠানো হয়েছে।
তদন্তকারীদের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটের দিন দু’য়েক আগে গোপন কর্মিসভায় বিদ্যুৎ-সহ আরও ন’জন স্থানীয় নেতা বৈঠক করেছিলেন। সেখানে ছিলেন সিপিএম প্রার্থী চন্দন পতিও। এ বার ২১৩ নম্বর বুথটি হাতছাড়া হতে পারে বলে বৈঠকে আশঙ্কা প্রকাশ করেন অনেকে। ঠিক হয়, দলের কাউকে খুন করে তৃণমূলের উপরে দোষ চাপিয়ে ‘সহানুভুতির ভোট’ পাওয়া ছাড়া পঞ্চায়েতের ওই আসনটি ধরে রাখার আর কোনও পথ খোলা নেই। কয়েকজন এর প্রতিবাদ করলেও তা ধোপে টেঁকেনি। ওই দিনই দেবুকে খুন করা পরিকল্পনা করা হয়।
পুলিশের দাবি, ভোটের আগের দিন বিদ্যুৎ-সহ ন’জন এক জায়গায় বসে মদ খান। রাত ১০টা নাগাদ দেবুর বাড়িতে হাজির হন তাঁরা। বাড়ির বাইরে পাহারায় ছিলেন চন্দন। বাকি আট জন দরমার বেড়া ভেঙে বাড়িতে ঢোকেন। দেবু ছিলেন না। পুলিশের দাবি, উষাকে গামছার ফাঁস জড়িয়ে খুন করেন জয়দেব। দেবুর জন্য অপেক্ষা শুরু হয়। দেবু ফিরলে তাঁকেও গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে জয়দেব। প্রমাণ লোপাটের জন্য কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।