কোথাও জুটেছে গালি, কোথাও শারীরিক নিগ্রহ, কখনও পথে-ঘাটে হুমকি, কটূক্তি। ওরা হার মানেনি। দু’বছরে রুখেছে অন্তত ৩৯ জন নাবালিকার বিয়ে। যে মেয়েদের অনেকেই ফিরে এসেছে স্কুলে।
যাদের দৌলতে নাবালিকা বিয়ে রোখায় অন্যতম অগ্রণী মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া, সেই কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের জন্যই গড়া হল পার্ক। সেখানে তারা ক্যারাটে শিখবে, ফুটবল খেলবে, লাগোয়া ঘরে বসে বিনিময় করবে খবরাখবর, মিটিং করবে। কম্পিউটার ঘেঁটে জানবে দেশ-বিদেশের তথ্য, অনলাইন আবেদনও করতে পারবে।
হরিহরপাড়া ব্লক অফিসের সামনে পঞ্চায়েত সমিতির প্রায় পাঁচ হাজার বর্গমিটার জমি ঘিরে গড়ে তোলা সেই ‘কন্যাশ্রী যোদ্ধা পার্ক’-এর উদ্বোধন হল সোমবার। সেই অনুষ্ঠানে গিয়ে মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) শমনজিৎ সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘আমরা যত দূর জানি, এমন উদ্যোগ রাজ্যে এই প্রথম।’’
ঘাসে ছাওয়া পার্ক ঘিরে রকমারি গাছ। পাঁচ জন বসতে পারে এমন ছাউনি দেওয়া আটটি বেঞ্চ চারদিকে ছড়ানো, সঙ্গে দোলনা। সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই পার্ক থাকবে কন্যাশ্রীদের দখলে। উদ্বোধনে হাজির ছিল ৮৫ জন কন্যাশ্রীযোদ্ধা। আর তাদের অভিভাবকেরা।
আরও পড়ুন: ডিএ ঘোষণায় শব্দ প্রয়োগের নিন্দায় কোর্ট
রুকুনপুরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ফজিলা খাতুনের বাবা সামসুদ্দিন শেখ আজ মাঠে যাননি। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সঙ্গীতা বিশ্বাসের হাত ধরে এসেছিলেন তার মা খুকু বিশ্বাস। মল্লিকা খাতুনের সঙ্গে বাবা মহবুল শেখও হাজির। চলে এসেছে এহিরা সুলতানও— গোপনে যার বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে এখন কন্যাশ্রীদের সঙ্গে কাজ করছে সে। তার বাবা হায়দার মণ্ডল বলেন, ‘‘মেয়ের বিয়ে দিয়ে ভুল করেছিলাম। আজ যে কী ভাল লাগছে!’’
গোটা উদ্যোগের প্রধান কাণ্ডারী, হরিহরপাড়ার বিডিও পূর্ণেন্দু সান্যাল জানান, মূলত পঞ্চায়েত সমিতির নিজস্ব ফান্ড, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প, এমএসডিপি প্রকল্প থেকে ১৫ লক্ষ টাকারও বেশি করে এই পার্ক গড়া হয়েছে। উদ্বোধনের সমস্ত খরচ জুগিয়েছেন সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। যুগ্ম বিডিও উদয় পালিত বলেন, ‘‘গত দেড় বছরে এই মেয়েরা যে অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে, এই পার্ক সেই কাজের স্বীকৃতি।’’
গোটা এলাকায় কন্যাশ্রীদের যিনি নেতৃত্ব দেন, সমাজকর্মী জাকিরুন বিবি বলেন, ‘‘অভিভাবকেরা আমার মুখের কথায় মেয়েদের ছাড়েন। এত দিন ওদের নিজেদের জায়গা ছিল না। এই পার্কই ওদের কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হবে।’’