গুরুঙ্গের অস্ত্র কেরোসিন, বরুণের মৃত্যুও

বন্‌ধ ওঠার পরে এক মাস কেটেছে। এখনও পাহাড়ের রেশন ডিলারদের কাছে এক ফোঁটা কেরোসিন পৌঁছয়নি। তাই ‘কেরোসিন-বঞ্চনা’র অভিযোগ সামনে রেখে অনুগামীদের প্রচারে নামার নির্দেশ দিয়েছেন মোর্চা সভাপতি। গুরুঙ্গ-বাহিনী সেই কথাই ফলাও করে প্রচার করছে।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:১৯
Share:

এক দিকে কেরোসিন। অন্য দিকে বরুণ ভুজেলের মৃত্যু। এই দুই ‘অস্ত্রে’ পাহাড়ে ফের প্রভাব বাড়াতে মরিয়া বিমল গুরুঙ্গ।

Advertisement

বন্‌ধ ওঠার পরে এক মাস কেটেছে। এখনও পাহাড়ের রেশন ডিলারদের কাছে এক ফোঁটা কেরোসিন পৌঁছয়নি। তাই ‘কেরোসিন-বঞ্চনা’র অভিযোগ সামনে রেখে অনুগামীদের প্রচারে নামার নির্দেশ দিয়েছেন মোর্চা সভাপতি। গুরুঙ্গ-বাহিনী সেই কথাই ফলাও করে প্রচার করছে।

বিষয়টি নিয়ে গোলমালের আশঙ্কা করছেন ডিলারেরা। তাঁরা জিটিএ-র কেয়ারটেকার বোর্ডের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় তামাঙ্গ ‘বিষয়টি গুরুতর’ বলে উল্লেখ করে তা নবান্নে জানিয়ে দ্রুত পদক্ষেপের অনুরোধ করেছেন। শুক্রবার রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘দার্জিলিং, কালিম্পং দুই জেলার গ্রাহকদের জন্য কেরোসিন বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে। সেই চিঠিও এজেন্টদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। তাঁদের দ্রুত কেরোসিন পৌঁছতে বলা হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই কেরোসিন বিলি শুরু হয়ে যাবে।’’

Advertisement

খাদ্য দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় ৩৮ হাজার ভুয়ো কার্ড ধরা পড়েছে। সেই হিসেবে কেরোসিনের বরাদ্দ কমিয়ে দিতে পারে দফতর, এমন আলোচনাও চলছে প্রশাসনে।

কেরোসিনের সঙ্গে বরুণের মৃত্যুকেও ‘অস্ত্র’ করতে চাইছেন গুরুঙ্গপন্থীরা। এই নিয়ে গত দু’দিন ধরেই থমথমে কালিম্পং। তার মধ্যে নারী মোর্চার একদল কর্মী ঘটনার জন্য রাজ্যকে দায়ী করে কালিম্পং থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান। নারী এবং যুব মোর্চার আর একটি দল মোর্চার জেলা দফতরে ঢুকে পড়ে। কিছু দিন আগে ওই দফতর থেকে বিমল গুরুঙ্গের ছবি সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা এ দিন ফের গুরুঙ্গের ছবি দেওয়া পতাকা পার্টি অফিসের মাথায় টাঙিয়ে দেন। গুরুঙ্গই তাঁদের নেতা— এমন স্লোগানও দিতে থাকেন মুহুর্মুহু। মুণ্ডপাত করতে থাকেন বিনয়েরও।

পরে বরুণের দেহ নিয়ে মিছিল হয়ে কয়েক শো লোক যোগ দেন। সঙ্গে ছিল মোটরবাইক বাহিনীও। বরুণের স্ত্রী সবিতা ইতিমধ্যে রাজ্যের আইজি (কারা) কাছে চিঠি পাঠিয়ে মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত দাবি করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘অত্যাচারের জেরেই বরুণের মৃত্যু হয়েছে।’’

তবে এই স্লোগান, মিছিল থেকে কোনও রকম গোলমাল হয়নি। কালিম্পঙের অনেকেই বলছেন, বিনয় এখানে একবার মাত্র এসেছেন। কালিম্পং পুরসভা তাঁকে সমর্থন করবে কি না, তা-ও স্পষ্ট নয়। এ সব কারণেই ফের জমি দখলের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন গুরুঙ্গপন্থীরা। যদিও বিনয়পন্থীরা মনে করছেন, এ আর প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব নয়।

কেরোসিনের ক্ষেত্রেও একই কথা মনে করেন খাদ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, ‘‘বঞ্চনার মিথ্যে অভিযোগ তুলে বাজার গরমের চেষ্টা করলে পাহাড়বাসীই গুরুঙ্গ বাহিনীকে জবাব দেবেন।’’ বিনয় অনুগামী সুরেন প্রধান, নবীন রাইরাও বলেন, ‘‘এ সব ধোপে টিঁকবে না।’’ তাঁদের দাবি, ‘কেরোসিন পৌঁছে গেলে গুরুঙ্গের বাহিনী পালানোর পথ পাবে না।’’

তবু কিছুটা হলেও শঙ্কিত ডিলাররা। যেমন শঙ্কিত কালিম্পংবাসী। এত দিনের টানা বন্‌ধ, আন্দোলনের পরে তাঁরা আর নতুন করে হাঙ্গামা চান না পাহাড়ে।

(সহ-প্রতিবেদন: কৌশিক চৌধুরী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন