ডেভিকে রাখতে বাড়ি কলকাতায়

বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী ডেভিকে হাতে পেতে চেয়েছিল ভারত সরকার। ডেনমার্ক সরকার জানায়, এ দেশের জেলে ডেভির মানবাধিকার যাতে সুরক্ষিত থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৯ ০২:০৭
Share:

কিম পিটার ডেভি

তিনি বন্দিই। বিশেষ বন্দি। থাকবেন জেলেই। বিশেষ জেলে। দীর্ঘদিন ধরে খোঁজখবর চালানোর পরে পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণ মামলার অন্যতম মূল অভিযুক্ত কিম পিটার ডেভিকে রাখার জন্য কলকাতায় উপযুক্ত জেলবাড়ি পাওয়া গিয়েছে কয়েকটি। কেন্দ্রীয় সরকার ও ডেনমার্কের পরিদর্শনের পরে তার একটি বেছে নেওয়া হবে।

Advertisement

বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী ডেভিকে হাতে পেতে চেয়েছিল ভারত সরকার। ডেনমার্ক সরকার জানায়, এ দেশের জেলে ডেভির মানবাধিকার যাতে সুরক্ষিত থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বছরখানেক আগে এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের মনোভাব জানতে চেয়েছিল কেন্দ্র। রাজ্য জানিয়েছিল, জেলে ডেভির মানবাধিকার সুরক্ষিত রাখতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডেনমার্ক সরকার তার পরেও কেন্দ্রকে প্রস্তাব দেয়, ডেভিকে রাখার জন্য পৃথক পরিকাঠামো তৈরি করা হোক। কেন্দ্রের অনুরোধে গত বছর থেকেই কলকাতায় ডেভিকে রাখার মতো বাড়ি খুঁজছিল রাজ্য সরকার। অবশেষে বাড়ির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।

নিরাপত্তার নির্দিষ্ট মাপকাঠিতে বাড়ি খুঁজতে হয়েছে রাজ্যকে। সেই জন্যই সুবিধাজনক বাড়ি পেতে কমবেশি এক বছর লেগেছে। দু’তিনটি বাড়ি বাছাই করা হয়েছে। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘কেন্দ্রকে ওই সব বাড়ির কথা জানানো হবে। কেন্দ্র জানাবে ডেনমার্ক সরকারকে। ডেনমার্ক ও কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা এসে চিহ্নিত বাড়িগুলি ঘুরে
দেখবেন। তাঁদের সবুজ সঙ্কেত পেলে ডেভির জন্য একটি বাড়ি প্রস্তুত
করা হবে।’’

Advertisement

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, বাড়িটিতে নিরাপত্তার পূর্ণ বন্দোবস্ত করা হবে। ডেনমার্কের শর্ত অনুযায়ী ডেভির সঙ্গে সে-দেশের কিছু পুলিশ অফিসারেরও থাকার কথা। তাই ডেনমার্ক এবং এ দেশের পুলিশ অফিসারদের থাকার ব্যবস্থাও থাকবে ওই বাড়িতে। সব প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে বাড়িটিকে পৃথক জেল হিসেবে ঘোষণা করবে রাজ্য সরকার। ‘‘জেল ঘোষণা করার ক্ষমতা রাজ্যের হাতেই রয়েছে। জেল ঘোষণা না-হলে আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে না,’’ বলেন এক প্রশাসনিক কর্তা।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা জানান, নিজেদের নাগরিকদের মানবাধিকারের দিকটি বিশেষ ভাবে সুরক্ষিত করে রেখেছে ডেনমার্কের আইন। সেই জন্য এমন বিপুল কর্মকাণ্ড চালাতে হচ্ছে প্রশাসনকে। গত এক বছরে এই বিষয়ে রাজ্যকে কয়েক বার চিঠি লিখেছে কেন্দ্র। রাজ্য প্রশাসনের অনেক পদস্থ কর্তার ধারণা, বাড়ি নির্দিষ্ট হওয়ার পরে ডেভিকে হাতে পাওয়ার প্রক্রিয়ায় অনেকটাই এগোতে পারবে কেন্দ্র।

১৯৯৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর পুরুলিয়ার ঝালদা, বেলামু, মারামু-সহ সাতটি গ্রামে ‘আন্টোনভ এএন-২৬’ বিমান থেকে রাতের অন্ধকারে অস্ত্র বর্ষণ করা হয়। ঘটনার পরে ব্রিটিশ নাগরিক তথা ওই বিমানের আরোহী পিটার ব্লিচ এবং লাটাভিয়ার সাত নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ
দায়ের হয়েছিল। পরে তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। ২০০০ সাল নাগাদ লাটাভীয় বন্দিরা ছাড়া পেয়ে যান। ২০০৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি কেআর নারায়ণন মার্জনা করায় ব্লিচও ছাড়া পেয়ে দেশে ফিরে যান। প্রধান অভিযুক্ত ডেভিকে পাওয়া যায় ডেনমার্কে। কিন্তু তাঁকে এ দেশে আনতে না-পারায় বিচার শেষ হয়ে গেলেও মামলাটি বন্ধ
করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন