আত্মসমর্পণ কিষেনজি ঘনিষ্ঠ কমলেশের

দু’দিনের জেলা সফরে বুধবারই পশ্চিম মেদিনীপুরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে সোমবার বিকেলে আত্মসমর্পণ করলেন মাওবাদী নেতা কমলেশ মাহাতো। রাষ্ট্রদ্রোহ-খুন-নাশকতার একাধিক মামলা রয়েছে কমলেশের নামে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৩৬
Share:

ঝাড়গ্রাম এসপি অফিসে কমলেশ মাহাতো। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

দু’দিনের জেলা সফরে বুধবারই পশ্চিম মেদিনীপুরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে সোমবার বিকেলে আত্মসমর্পণ করলেন মাওবাদী নেতা কমলেশ মাহাতো। রাষ্ট্রদ্রোহ-খুন-নাশকতার একাধিক মামলা রয়েছে কমলেশের নামে। কিষেনজি ঘনিষ্ঠ কমলেশকে মাওবাদী ও জনসাধারণের কমিটির বিভিন্ন কর্মসূচিতে পুরোভাগে দেখা যেত। মূলত কিশোর-যুবদের মধ্যে সংগঠন গড়ার কাজ করতেন তিনি। এ দিন ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার ভারপ্রাপ্ত সুপার ভারতী ঘোষের কাছে আত্মসমর্পণ করেন কমলেশ।

Advertisement

এসপি অফিসে সাংবাদিক বৈঠকে ভারতীদেবী বলেন, ‘‘মাওবাদীদের কিশোর সঙ্ঘের রাজ্য কম্যান্ডার ছিলেন কমলেশ। কিষেনজি-সহ শীর্ষ মাওবাদী নেতাদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। জয়ন্ত, অনন্ত, আকাশের মতো মাওবাদী নেতাদের সঙ্গে গুড়াবান্দা স্কোয়াডে তিনি কাজ করেছেন।’’ আর আত্মসমর্পণের পর কমলেশ বলেন, “আমি তিন বছর স্কোয়াডে ছিলাম। মাওবাদীরা আদর্শহীনতায় ভুগছে। সেই জন্য ভুল পথ ছেড়ে এখন মূলস্রোতে ফিরে এলাম।” কমলেশের কাছে দু’টি দেশি পিস্তল, কার্তুজ ও একটি একে-৪৭ পাওয়া গিয়েছে।

বছর সাতাশের কমলেশের বাড়ি লালগড় থানার বেলাটিকরি অঞ্চলে। ‘ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস্‌ ফেডারেশন’ (জেএসএফ)-এর রাজ্য সম্পাদক ছিলেন তিনি। পরে নিজে জঙ্গলমহল স্টুডেন্টস্‌ ফেডারেশন তৈরি করেন। মাওবাদী পর্বে রাষ্ট্রদ্রোহ-বেআইনি অস্ত্রমজুত-খুন-নাশকতার একাধিক মামলা রয়েছে কমলেশের নামে। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে শিলদায় সিপিএম নেতা অনন্ত মুখোপাধ্যায় খুনেও তিনি মুখ্য অভিযুক্ত। রাজ্যে পালা বদলের পর ২০১২ সালের এপ্রিলে গ্রেফতার হন কমলেশ। বিনপুরের দহিজুড়ি থেকে বেআইনি অস্ত্র মজুত রাখার মামলায় ধরা হয় তাঁকে। তখন তিনি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে করেসপন্ডেন্স কোর্সে বাংলায় এমএ পড়তেন।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম উপ সংশোধনাগারে বন্দি থাকাকালীন ২০১২ সালের ৮ মে শৌচাগারে মজুত ফিনাইল খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কমলেশ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কমলেশের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগে মামলা রুজু করেন জেল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন তাঁর আইনজীবীর আবেদনক্রমে ২০১২ সালের ১১ মে কমলেশের শর্তাধীন জামিন মঞ্জুর করে ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালত।

পুলিশের দাবি, জামিনে মুক্ত হওয়ার পরে কমলেশ ফের ভিন্‌ রাজ্যের মাওবাদী এরিয়া কম্যান্ডার ও স্কোয়াড সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, বজবজ থেকে হিন্দমোটর ছিল তাঁর ‘অপারেশন এরিয়া’। এই সব জায়গায় মূলত বন্ধ কলকারখানার শ্রমিকদের মধ্যে মাওবাদী আদর্শ প্রচারের কাজ করছিলেন তিনি। পাশাপাশি কলকাতার একাধিক কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়েও তাঁর যাতায়াত ছিল। ফলে কমলেশের আত্মসমর্পণে রাজ্যে মাওবাদীদের নতুন করে সংগঠন গড়ার কাজ বড়সড় ধাক্কা খেল বলেই গোয়েন্দাদের অভিমত।

পুলিশ সূত্রে খবর, আদালতের নির্দেশ মতো তদন্তকারী অফিসারের কাছে হাজিরা দেওয়া বন্ধ করায় কমলেশের বিরুদ্ধে ৮টি মামলায় ফের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। যদিও তিনি গা ঢাকা দিয়েই ছিলেন। ভারতীদেবীর দাবি, ‘‘প্রথম থেকেই কমলেশের স্বপ্ন ছিল, তিনি নেক্সট জেনারেশন কিষেনজি হবেন। তাই কম বয়সীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতেন। বিনপুর ও লালগড় থেকে ৫০ জনকে বেছে গুড়াবান্দা স্কোয়াডে নিয়ে গিয়েছিলেন কমলেশ। কিছুদিন নিজেও প্রশিক্ষণ নেন।’’

এসপির দাবি, যে ৫০ জনকে কমলেশ প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, কমলেশের মাধ্যমে এ বার তারাও এক এক করে আত্মসমর্পণ করবেন। পাশাপাশি ভারতীদেবী জানান, কমলেশ যাতে মাওবাদীদের পুনর্বাসন প্যাকেজ পান, সে জন্য সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে। কমলেশের আইনজীবী কৌশিক সিংহ আবার দাবি তুলেছেন, আত্মসমর্পণের পর এ বার তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে বিচারাধীন যাবতীয় মামলা প্রত্যাহার করা হোক। যদিও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ভারতীদেবী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন