Kolkata Municipal Election

শৌচালয়-কাণ্ডে অভিযুক্তদের তালিকা দিতে টালবাহানা

নিয়ম অনুযায়ী, শৌচাগার-দুর্নীতি কাণ্ডে অভিযুক্তদের নামের তালিকা দেওয়ার কথা পুর শিক্ষা দফতরের। কিন্তু গত এক মাসে পুরসভার পার্সোনেল দফতরের তরফে নামের তালিকা চেয়ে তিন বার নোটিস পাঠানো হলেও আজ পর্যন্ত তার সদুত্তর মেলেনি।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৩৩
Share:

কলকাতা পুরসভা। —ফাইল চিত্র।

বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

Advertisement

শৌচাগার-দুর্নীতি কাণ্ডে চার্জ গঠন প্রক্রিয়ায় ‘অভিযুক্ত’ হিসাবে কার কার নাম থাকবে, তা নিয়েই এখন টালবাহানা চলছে কলকাতা পুরসভায়। নিয়ম অনুযায়ী, শৌচাগার-দুর্নীতি কাণ্ডে অভিযুক্তদের নামের তালিকা দেওয়ার কথা পুর শিক্ষা দফতরের। কিন্তু গত এক মাসে পুরসভার পার্সোনেল দফতরের তরফে নামের তালিকা চেয়ে তিন বার নোটিস পাঠানো হলেও আজ পর্যন্ত তার সদুত্তর মেলেনি। উল্টে নামের তালিকা খুঁজতে পুরসভার চিফ ম্যানেজার (শিক্ষা) থেকে স্পেশ্যাল পুর কমিশনার হয়ে যুগ্ম পুর কমিশনারের কাছে ফাইল ঘোরাঘুরি করেছে। এই ঘটনায় মেয়র ফিরহাদ হাকিম আগেই সাফ জানিয়েছেন, পুরসভা কোনও রকম দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে না। প্রশ্ন উঠেছে, মেয়রের নির্দেশের পরেও শৌচালয়-দুর্নীতি কাণ্ডে অভিযুক্তদের নামের তালিকা দিতে এত টালবাহানা করা হচ্ছে কেন? তা হলে কি প্রভাবশালী কারও নাম সেই তালিকা থেকে সরানোর ‘খেলা’ চলছে?

যদিও এই প্রসঙ্গে পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা সোমবার সাফ বলেন, ‘‘মেয়রের স্পষ্ট নির্দেশ, শিক্ষা দফতরের এত বড় দুর্নীতির ঘটনায় যিনি বা যাঁরা জড়িত, তাঁদের কাউকে যেন ছাড়া না হয়। শিক্ষা দফতরের তরফে অভিযুক্তদের নামের তালিকা শীঘ্রই পাঠানো হবে। আশা করা হচ্ছে, তিন মাসের মধ্যেই শুনানির প্রক্রিয়া শেষ হবে।’’ শৌচালয় সংস্কারের নামে দুর্নীতির ঘটনায় তদানীন্তন চার পুর আধিকারিক ও কর্মীকে আগেই শো-কজ় করা হয়েছিল। পুরসভা সূত্রের খবর, চার্জ গঠনের প্রক্রিয়ায় ওই চার জনের নাম তো থাকছেই, পাশাপাশি, ৫০টি পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদেরও তাতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘৫০টি পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক আগেই অভিযোগ করেছিলেন যে, ২০১৭-’২০ সালের মধ্যে তাঁদের জোর করে, ভয় দেখিয়ে রসিদে সই করানো হয়েছিল। যে রসিদে ঠিকাদারদের জন্য টাকা বরাদ্দ ছিল। প্রশ্ন উঠতেই পারে, সব জেনেও তাঁরা কেন সই করলেন? সেই সব তথ্য জানতে শিক্ষকদেরও চার্জ গঠনের প্রক্রিয়ায় আনা হচ্ছে।’’ অর্থাৎ, চার্জ গঠনের পরে শুনানি শুরু হলে অভিযুক্ত চার জন পুর আধিকারিক ও কর্মীর পাশাপাশি শিক্ষকদেরও উপস্থিত থাকতে হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৭-’২০ সালের মধ্যে কলকাতা পুরসভা পরিচালিত ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৩টি
শৌচাগার সংস্কারের কাজে প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকা গরমিলের অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

পুরসভার এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘শৌচালয় সংস্কারের নামে রীতিমতো পুকুর চুরি হয়েছে। তাই অভিযুক্তেরা যাতে কোনও ভাবেই ছাড়া না পান, তার জন্য শিক্ষকদেরও চার্জ গঠনের প্রক্রিয়ায় তালিকাভুক্ত করা হল।’’ স্কুলে স্কুলে শৌচাগার সংস্কারের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ধরা পড়ায় বছর ছয়েক আগে প্রতিবাদ করে পুর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলেন বাম প্রভাবিত ‘কলকাতা পৌর শিক্ষক ও কর্মী সঙ্ঘ’-এর সাধারণ সম্পাদক অশোককুমার চট্টোপাধ্যায়। চার্জ গঠনের প্রক্রিয়ায় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে এ দিন তিনি বলেন, ‘‘খুব ভাল হল। শিক্ষকেরা শুনানির সময়ে জোর গলায় আসল তথ্যটা তুলে ধরার সুযোগ পাবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন