তালহা শেখ। ফাইল চিত্র।
তখন তার একগাল ঘন দাড়ি ছিল। রবিবার সেই যুবকের যে ছবি সংবাদপত্রে ছেপে বেরিয়েছে, তাতে দাড়ি আছে ঠিকই, তবে হাল্কা। তাতে অবশ্য তাকে চিনতে কোনও অসুবিধে হয়নি বোলপুর এলাকার মুলুক গ্রামের আরতি-শান্তিপল্লির বাসিন্দাদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের বগুড়ায় ধরা পড়া তালহা শেখই চার-পাঁচ বছর আগে ওই তল্লাটে আবু তালহা নাম নিয়ে থাকত। আর সন্দেহজনক কাজ-কারবারের জন্য এলাকার মানুষদের কেউ কেউ ওই পাড়াকে বলতেন ‘লাদেনপল্লি’।
জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) সূত্রের খবর, জঙ্গি গোষ্ঠী জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি এই রাজ্যে জাল বিস্তার করার পর এক-একটি জেলার দায়িত্বে বাংলাদেশের এক-এক জন নাগরিককে রেখেছিল। বীরভূমের ওই দায়িত্বে ছিল তালহা শেখ ওরফে শ্যামল ওরফে আবু সইদ। যদিও ২০০৭-এ পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে তালহা প্রথম ঘাঁটি গেড়েছিল মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলায়। খাগড়াগ়ড় বিস্ফোরণ মামলায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত তালহার দুই স্ত্রীর এক জন, খাদিজা সেখানকার মেয়ে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, তালহার কাছ থেকে ওই শান্তিপল্লির এক বাসিন্দা, খাগড়াগড় মামলার অন্যতম অভিযুক্ত হবিবুর রহমান শেখের হদিস মিলতে পারে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের বক্তব্য, ২০১৪-র ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে জঙ্গি হামলায় মুক্ত দুই জেএমবি চাঁই সালাউদ্দিন সালেহিন ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজান ভারতে ঢোকার পরে তালহা ও হাতকাটা নাসিরুল্লার গুরুত্ব সংগঠনে কমতে থাকে। খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের খবর পেয়ে প্রথমে বোলপুর ছেড়ে মুর্শিদাবাদ, তার পর বাংলাদেশে ঢোকে তালহা।
বোলপুর স্টেশন থেকে মোটর সাইকেলে মিনিট কুড়ি গেলে বাহিরি-পাঁচশোয়া সড়কের পশ্চিম দিকে সরু মেঠো পথ। তা ধরে মিনিট তিনেক গেলে মুলুক গ্রামের শান্তিপল্লি। কাঁচা রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখা যাবে তালহা শেখের ফাঁকা বাড়ি। প্লাস্টারের গায়ে চুনকাম। গ্রিলের দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখা গেল, দু’টো ঘর আসবাবহীন। ভিতরে ইট ও কাপড়ের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।
তবে বাড়ির গ্রিলের দরজার তালা যে ভাঙা হয়েছে, তার চিহ্ন স্পষ্ট। গ্রামবাসীদের একাংশ জানাচ্ছেন, ২০১৪-র ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই তালহার বাড়ি ‘সিল’ করে দিয়েছিল এনআইএ। বাড়ির দু’টি ঘরেই আসবাব ও অন্য জিনিসপত্র ছিল। হঠাৎ এক রাতে গ্রিলের দরজার তালা ভেঙে ঢুকে ওই সব জিনিসপত্র কে বা কারা লোপাট করে দেয়। এলাকার কিছু বাসিন্দা জানাচ্ছেন, ওই বাড়িতেই তালহা দুই স্ত্রীকে নিয়ে থাকত। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, খাদিজা ছাড়া তালহার অন্য স্ত্রী অসমের বরপেটার সারথেবাড়ি এলাকার চাতলা গ্রামের মহিলা।
এনআইএ সূত্রের খবর, জানুয়ারিতে তাদের একটি দল বাংলাদেশ পুলিশের হেফাজতে থাকা তালহার সঙ্গে কথা বলতে সে দেশে যাবে। নাসিরুল্লা ধরা পড়ার পরেও জুলাইয়ে তাকে জেরা করতে গিয়েছিল এআইএ। তবে নাসিরুল্লার মতো তালহাকেও এ দেশে আনা যাবে না বলে এনআইএ এক রকম ধরেই নিয়েছে। তালহা ও দেশে ফাঁসির আসামি। বাংলাদেশে গিয়ে তালহার সঙ্গে কথা বলে আসার পর তার ধরা পড়ার কথা কলকাতার এনআইএ আদালতে জানানো হবে। ১০ থেকে ২০ জানুয়ারি খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার নতুন দফার সাক্ষ্যগ্রহণ হওয়ার কথা এই আদালতে।