কলকাতার পুরভোটে অবাধ সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে রাজ্যের বাকি ৯১টি পুরসভার নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার বা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য কলকাতা হাইকোর্টে আর্জি জানিয়েছিল বিজেপি। তাদের আবেদনে সাড়া দেয়নি হাইকোর্ট।
বিজেপি-র ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার জানান, দু’দিন পরেই (শনিবার) ভোট। কলকাতা পুরভোটের প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণও দাখিল করতে পারেনি বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে পুরসভাগুলির নির্বাচন বন্ধ করা বা পিছিয়ে দেওয়ার এক্তিয়ার তাঁর আদালতের আছে কি না, সেটা এখনও তাঁর কাছে স্পষ্ট নয়। তবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার এক্তিয়ার তাঁর আদালতের রয়েছে। সেই এক্তিয়ারেই বিচারপতি মুখোপাধ্যায় এ দিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেন, রাজ্যের হাতে যে-তিন কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে, শনিবার অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করতে তাদেরই ঠিকমতো ব্যবহার করতে হবে।
আদালতের এক্তিয়ারের প্রশ্নটি তোলেন রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল লক্ষ্মী গুপ্ত। তিনি এ দিন আদালতে জানান, নির্বাচন প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় নির্বাচন বন্ধ করা বা পিছিয়ে দেওয়ার এক্তিয়ার হাইকোর্টের নেই। লক্ষ্মীবাবু বিচারপতিকে জানান, পুরসভা সংক্রান্ত মামলা শোনার এক্তিয়ার হাইকোর্টের অন্য আদালতের। বিচারপতি মুখোপাধ্যায়ের আদালতের তা শোনার এক্তিয়ার নেই। এই সওয়াল শুনে বিচারপতি মুখোপাধ্যায় অবশ্য জানান, বিজেপি মামলার আবেদনে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছে। তাঁর আদালতের সেই সংক্রান্ত অভিযোগ শোনার এক্তিয়ার রয়েছে।
বিজেপি-র পক্ষ থেকে এ দিন আদালতে অন্য একটি অভিযোগও করা হয়। বলা হয়, কলকাতা পুরসভার নির্বাচনে কত ভোট পড়েছে, সেই বিষয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার এক-এক বার এক-এক রকম বিবৃতি দিয়েছেন। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, কলকাতায় অবাধে পুরভোট হয়নি। এই অবস্থায় কলকাতার পুরভোটে ব্যবহৃত যাবতীয় ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র) ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানোর নির্দেশ দিক হাইকোর্ট। এবং ফরেন্সিক রিপোর্ট না-পাওয়া পর্যন্ত যাতে কলকাতা পুরভোটের ফল ঘোষণা করা না-হয়, আদালত তার ব্যবস্থা করুক। বিচারপতি বিজেপি-র এই আবেদনও খারিজ করে দেন। বিচারপতি জানান, কলকাতার পুরভোটে দুর্নীতি হয়েছে বলে যে-অভিযোগ করা হচ্ছে, তার পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ এ দিন আদালতে দাখিল করতে পারেনি বিজেপি। তাই এভিএমের ফরেন্সিক পরীক্ষার আবেদনও নাকচ করে দেন তিনি।
বিজেপি-র আইনজীবী অভ্রজিৎ মিত্র আদালতে জানান, পুরসভাগুলির নির্বাচনের জন্য আগেই পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজনের কথা বলেছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু রাজ্য সরকার অনেক দেরিতে বাহিনী চাওয়ায় কেন্দ্র তা দিতে পারেনি। বিজেপি-র দাবি, সব পুরসভায় অবাধে ভোট করতে ৫০০ কোম্পানি আধাসেনা দরকার। কিন্তু রাজ্যে পুরভোট হচ্ছে মাত্র তিন কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভরসায়।
কলকাতা পুরসভার জন্য ৫০ এবং বাকি ৯১টি পুরসভার ভোটের জন্য আরও ৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়া হয়েছিল বলে এ দিন আদালতে জানান রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী নয়নচাঁদ বিহানি। কিন্তু তা মেলেনি। কেন্দ্র জানিয়েছে, দার্জিলিঙে যে-তিন কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে, পুরভোটে তাদের কাজে লাগানো হোক।
আদালতের নির্দেশ মেনেই রাজ্য নির্বাচন কমিশন কাজ করবে বলে জানান ওই আইনজীবী।