নবান্ন অভিযানের জের।
আইন অমান্যকারী বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে কলকাতা পুলিশ আনতে চলেছে নতুন জলকামান। চলতি বছরের শেষেই ওই পাঁচটি জলকামান লালবাজারের হেফাজতে চলে আসার কথা। যা নতুন বছরে যে কোনও বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশগ্রহণকারী আন্দোলনকারীদের সামলাতে রাস্তায় নামানো হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এর আগে নবান্ন অভিযানের দিন বাম নেতারা প্রশাসনিক সদর দফতরের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে কলকাতা এবং হাওড়া পুলিশ ওই এলাকার নিরাপত্তা বাড়িয়েছিল। নবান্নে পৌঁছনোর বিভিন্ন রাস্তায় ড্রপ-গেট বসিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল গাড়ির যাত্রাপথও।
গত ২২ মে বামেদের ডাকে নবান্ন অভিযান ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শহরের রাজপথ। অভিযোগ, বাম সমর্থকদের ঠেকাতে বেধড়ক লাঠিচার্জ করে পুলিশ। গুরুতর জখম হন বেশ কয়েক জন বিক্ষোভকারী। নির্মম ভাবে লাঠিপেটা নিয়ে বাহিনীর একাংশের অতি সক্রিয়তায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। বাহিনীর মধ্যে থেকেই অভিযোগ ওঠে, বিশ্বের সর্বত্র উত্তেজিত জনতাকে ঠেকাতে যেখানে জলকামান পুলিশের অন্যতম অস্ত্র, সে দিন তা তাদের হাতে ছিল না।
বামেদের অভিযানের কিছু দিন পরেই লালবাজার অভিযান করে বিজেপি। ওই দিন শহরের দু’টি প্রান্তে আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে জলকামান ব্যবহার করা হয়েছিল বলে পুলিশের একটি অংশ দাবি করেছে। সূত্রের দাবি, কলকাতা পুলিসের হাতে এই মুহূর্তে একটি জলকামান রয়েছে। প্রয়োজন পড়লে রাজ্য পুলিশের থেকে আর একটি জলকামান আনা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, বামেদের অভিযানে লাঠি চালানো নিয়ে সমালোচিত হওয়ার পরেই ভবিষ্যতে ওই রকম পরিস্থিতি ঠেকাতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন লালবাজারের কর্তারা। এর পরেই ঠিক হয়, জলকামান কেনার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হবে। গত বছরের শেষ দিকে জলকামান কেনার ব্যাপারে লালবাজার সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ বার তাই পুলিশকর্তারা ঠিক করেছেন, প্রায় ৩ কোটি টাকা খরচ করে পাঁচটি জলকামান কেনা হবে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে চলতি বছরের শেষেই তা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার কথা।
লালবাজার জানিয়েছে, একটি জলকামানের গাড়িতে দু’টি ইঞ্জিন থাকবে। একটি ইঞ্জিন গাড়ি চালানোর। অন্যটি দিয়ে জলের পাম্পের মোটর চলবে। প্রতিটি গাড়ির জল ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১২ হাজার লিটার। এই কামানের সাহায্যে প্রায় ৫০ মিটার দূরে থাকা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে জল ছোড়া সম্ভব হবে।
লালবাজার জানিয়েছে, ওই জলকামান হাতে এলে তা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপর্ণ জায়গায় রাখা থাকবে। বিশেষ করে যেখানে যেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ হয় তার কাছেপিঠে কোথাও রাখা হবে সেগুলিকে। এর ফলে প্রয়োজনে ওই জল কামানগুলিকে অতি দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেওয়া যাবে।
লালবাজারের একটি অংশের দাবি, জলকামানের পাশাপাশি বিক্ষোভ সমাবেশে সামলানোর জন্য বাহিনীকে দক্ষ করার জন্য কোনও রকমের প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় কী না তা নিয়েও আলোচনা চলছে। বামেদের নবান্ন অভিযানে বিক্ষোভকারীদের সামলাতে গিয়ে বাহিনীর একাধিক কর্মী জখম হয়েছিলেন। পুলিশি আক্রমণেও জখম হয়েছিলেন বেশ কিছু বাম সমর্থক। যা নিয়ে সমালোচনার সামনে পড়তে হয়েছিল লালবাজারকে। আগামী দিনে যাতে তার পুনরাবৃত্তি না হয় সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকছে লালবাজার। তার জন্যই ওই ব্যবস্থা।