খিদিরপুরে মিলল বোমা তৈরির ঠেক

পুরোদস্তুর কারখানা বলা যাবে না। তবে বোমা যে তৈরি হতো, সেটা পরিষ্কার। কোনও গ্রাম বা মফস্সল নয়, খাস কলকাতা শহরে। খাগড়াগড়ের স্মৃতি উস্কে দিয়ে খিদিরপুরের মনসাতলা রো-তে এ বার সন্ধান মিলল বোমা তৈরির একটি ঠেকের। সোমবার ভোর সাড়ে তিনটেয় সেখানে হানা দিয়ে একটি পেটো বোমা, ৩০০ গ্রাম বোমা তৈরির মশলা, কিছু সুতলি-সহ বেশ কয়েকটি মোবাইল চিপ, সার্কিট ও রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস উদ্ধার করেছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ০৩:৪৯
Share:

সেই বাড়ির সামনে জটলা। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

পুরোদস্তুর কারখানা বলা যাবে না। তবে বোমা যে তৈরি হতো, সেটা পরিষ্কার। কোনও গ্রাম বা মফস্সল নয়, খাস কলকাতা শহরে। খাগড়াগড়ের স্মৃতি উস্কে দিয়ে খিদিরপুরের মনসাতলা রো-তে এ বার সন্ধান মিলল বোমা তৈরির একটি ঠেকের। সোমবার ভোর সাড়ে তিনটেয় সেখানে হানা দিয়ে একটি পেটো বোমা, ৩০০ গ্রাম বোমা তৈরির মশলা, কিছু সুতলি-সহ বেশ কয়েকটি মোবাইল চিপ, সার্কিট ও রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস উদ্ধার করেছে পুলিশ।

Advertisement

এই ঘটনায় প্রথমেই পুলিশের মনে প্রশ্ন উঠেছিল, এটি সেই খাগড়াগড়ের মতো আর একটি জঙ্গি ডেরা কি না। কেউ আবার মনে করেছিলেন, আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) তৈরি হচ্ছিল। ঝুঁকি না নিয়ে তাই খবর দেওয়া হয় বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডকে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন এ সব ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ গোয়েন্দা সংস্থা বলে গণ্য জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র অফিসারেরাও।

তবে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, নেহাৎই লুঠপাটের উদ্দেশ্যে মামুলি পেটো বোমা তৈরি হতো দুষ্কৃতীদের ওই ডেরায়। এর সঙ্গে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সম্পর্ক নেই। দুষ্কৃতীরা মোবাইল ও ডিভিডি প্লেয়ার চুরিতেও জড়িত ছিল। দিল্লিতে সদর দফতরে রিপোর্ট পাঠিয়ে এনআইএ-ও জানিয়েছে, ওই ডেরায় আইইডি তৈরি হচ্ছিল না।

Advertisement

কিন্তু পুলিশেরই বক্তব্য, যে ধরনের ঘিঞ্জি জায়গায় একটি ঘরে বোমা তৈরি হতো, তাতে কোনও ভাবে বিস্ফোরণ হলে গোটা বাড়িতে আগুন ধরে যেত। তখন বিপর্যয় ঠেকানো মুশকিল হতো। এক স্থানীয় বাসিন্দা মনোহর হোসেন বলেন, ‘‘কাছেই বাচ্চাদের একটি স্কুল রয়েছে। আচমকা কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে যে কী হতো, ভাবলেই শিউরে উঠছি।’’

কী ভাবে খোঁজ পাওয়া গেল এই ডেরার? তার উৎস একটি লুঠের ঘটনা। পুলিশ জানায়, রবিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ তারাতলা রোডে একটি কারখানার সামনে বিশ্বনাথ সাহা নামে এক ব্যবসায়ীর থেকে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা লুঠ করে পালায় ছ’জনের বাইক-বাহিনী। বিশ্বনাথবাবু পুলিশে অভিযোগ জানালে রাতেই গ্রেফতার হয় পাঁচ জন। তাদের মধ্যে ছিল মহম্মদ আফসার নামে এক দুষ্কৃতী। তাকে জেরা করেই খিদিরপুরের ওই ঠেকের সন্ধান মেলে।

এ দিনের ঘটনায় সমীর হোসেন ওরফে সোনু নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের খাতায় সে দাগি দুষ্কৃতী। এর আগে মোটরবাইক চুরি, মোবাইল চুরিতেও সে গ্রেফতার হয়েছিল। পুলিশ জানায়, ১০ নম্বর মনসাতলা রো-এর একটি দোতলা বাড়ির একতলায় ছিল বোমা তৈরির ঠেক। ওই ঘরটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল সোনুর মায়ের নামে। বাড়ির বর্তমান মালিক মহম্মদ আজাদ। মাস ছয়েক আগে তাঁর সঙ্গে একবালপুরের এক প্রোমোটার শেখ ইমতিয়াজের চুক্তি হয়। ইমতিয়াজ জানিয়েছিলেন, তিনি একটি বহুতল নির্মাণ করছেন। সেটি যে জমিতে হচ্ছে, তার বাসিন্দাদের তিনি স্থানান্তর করতে চান। ঠিক হয়, মনসাতলা রো-এর ওই বাড়ি মহম্মদ আজাদের থেকে মাসিক ২০ হাজার টাকায় কয়েক মাসের জন্য ভাড়া নেবেন ইমতিয়াজ। সোনুর মা ছিলেন ভাড়াটেদের এক জন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে পুলিশ জেনেছে, দিন সাতেক আগেই ওই বাড়িতে সোনু ও তার কয়েক জন সঙ্গীর যাতায়াত শুরু হয়। পুলিশ জানায়, নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতেই সোমবার ভোরে ডেপুটি কমিশনার (বন্দর) সুদীপ সরকারের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালায় ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিশবাহিনী। চমকে যান এলাকার মানুষ।

এ দিন রাজ্য পুলিশের ডিজি হওয়া সুরজিৎ করপুরকায়স্থ যখন কলকাতা পুলিশের কমিশনার, তখন তিনি বার বার বাহিনীকে বেআইনি অস্ত্র ও কার্তুজ উদ্ধারের ব্যাপারে সচেষ্ট হতে বলেছিলেন। পুলিশের একাংশের মতে, খিদিরপুরের ঘটনা দেখিয়ে দিল, শহরের বুকেই দুষ্কৃতীরা এখনও অবাধে বোমা তৈরি করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন