নজরে কি ভোট, দু’মাসে ১০০ কোটির পুর-কাজ

আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে কলকাতা শহরের উন্নয়নে প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ করবে পুরসভা। এবং এর জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া সরলীকরণ করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার পুরসভার মেয়র পারিষদ ও সমস্ত দফতরের ডিজিদের নিয়ে এক বৈঠক শেষে এ কথা জানান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:৪৩
Share:

আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে কলকাতা শহরের উন্নয়নে প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ করবে পুরসভা। এবং এর জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া সরলীকরণ করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার পুরসভার মেয়র পারিষদ ও সমস্ত দফতরের ডিজিদের নিয়ে এক বৈঠক শেষে এ কথা জানান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। পুরবোর্ডের এই তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তের পিছনে আসন্ন বিধানসভা ভোটই মূল লক্ষ্য বলে মনে করছেন বিরোধীরা। মেয়র শোভনবাবু অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমরা তো একটা রাজনৈতিক দল। যে কেউ যে ভাবে খুশি ব্যাখ্যা করতে পারেন। তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না।’’

Advertisement

কলকাতায় বছরভরই নানা কাজ চলে। রাস্তা, নিকাশি, জল সরবরাহ প্রকল্প থেকে শুরু করে শহরকে আলোয় সাজানো এবং পার্ক রক্ষণাবেক্ষণে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়। সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার নজিরও রয়েছে ভুরি ভুরি। এক আমলার কথায়, ‘‘টেন্ডার করলেই তো আর কাজ শুরু করা যায় না। সেই কাজ করাতে যে পরিমাণ খরচ হবে বলে ধরা হয়, তা যুক্তিযুক্ত কি না যাচাই করে দেখার দায়িত্ব অর্থ দফতরের। তারা ছাড়পত্র দিলে তবেই কাজের বরাত দেওয়া হয়ে থাকে।’’ মাত্র মাস দুয়েকের মধ্যে তাই উন্নয়নের এই কাজ করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে পুরমহলে।

পুরসভার এই উদ্যোগকে নির্বাচনী চমক বলে মনে করছেন সিপিএম কাউন্সিলর চয়ন ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘টেন্ডার সরলীকরণের নামে নিজেদের লোককে বরাত পাওয়ানোর চেষ্টা। যেমন ত্রিফলা-কাণ্ডে হয়েছিল।’’

Advertisement

মেয়র শোভনবাবু অবশ্য এ সব অভিযোগে আমলই দিতে চান না। তিনি জানান, গত বর্ষায় কিছু রাস্তা খারাপ হয়েছিল। সেগুলো দ্রুত সারানো প্রয়োজন। পাশাপাশি মাসখানেকের মধ্যেই গার্ডেনরিচে বাড়তি আরও ৩০ মিলিয়ন গ্যালন জল উৎপন্ন করা হবে। সেই জল সরবরাহের জন্য পাইপলাইন বসাতে রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে। তা-ও সারানো দরকার। এ ছাড়া, ধাপা পাম্পিং স্টেশন থেকে জল সরবরাহের জন্য শহরের ৫৭, ৫৮, ৬৬, ১০৪, ১০৬, ১০৮ এবং ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে অনেকগুলি রাস্তা কাটা হয়েছে। সে সব সারানোর জন্য দ্রুত কাজ করা দরকার। মেয়র বলেন, ‘‘ওই কাজ দ্রুত করার জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়ার কিছু সরলীকরণ প্রয়োজন। এ ব্যাপারে ডিজি পর্যায়ের অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, সম্প্রতি শহরের ৬২টি রাস্তার জন্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা পেয়েছে কলকাতা পুরসভা। কোন কোন রাস্তা ওই তালিকায় রয়েছে, তা জানিয়েই সরকারের কাছে আবেদন জানায় পুরসভার রাস্তা দফতর। সেই মতো টাকাও বরাদ্দ করেছে পুর দফতর। তবে তালিকাভুক্ত রাস্তারই কাজ হবে কি না, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে পুর-প্রশাসনেই। পুরসভার এক আমলা জানান, ওই তালিকার পরিবর্তন করে অন্য কয়েকটি রাস্তা করতে চান মেয়র। এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে মেয়র যে রাস্তাগুলো তৈরি ও সারানোর কথা বলেছেন, তা করা হবে সরকারের দেওয়া আর্থিক সহায়তায়।

ভোটের আগে ‘উন্নয়নের’ নামে তড়িঘড়ি এ ভাবে টাকা খরচের পিছনে রাজনীতি দেখছেন কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠকও। তাঁর অভিযোগ, ‘‘যে কোনও ভাবে ভোটে জেতাই ওঁদের লক্ষ্য। তাই সরকারি ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করছে তৃণমূলের বোর্ড।’’ মেয়র শোভনবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা চাই কলকাতার উন্নয়ন করতে। মুখ্যমন্ত্রীর নেতত্বে সেই কাজটাই করে যাচ্ছি।’’ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ফের এ নিয়ে বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন