‘ভুল’ চিকিৎসায় জীবনসঙ্কটে শিশু, অভিযুক্ত নার্সিংহোম

শ্বাস পড়ছে ঠিকই, কিন্তু চোখের দৃষ্টি প্রায় স্থির। রাইলস টিউবে কোনও মতে খাওয়ানো চলছে। মস্তিষ্কের উপরের অংশের ৮০ শতাংশই অকেজো। চিকিৎসকেরা কোনও আশাই দিতে পারছেন না দেড় বছরের অভিগ্ন সাহার মা-বাবাকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০৪
Share:

অসুস্থতার আগে অভিগ্ন। (ডান দিকে) পরে হাসপাতালে। — নিজস্ব চিত্র

শ্বাস পড়ছে ঠিকই, কিন্তু চোখের দৃষ্টি প্রায় স্থির। রাইলস টিউবে কোনও মতে খাওয়ানো চলছে। মস্তিষ্কের উপরের অংশের ৮০ শতাংশই অকেজো। চিকিৎসকেরা কোনও আশাই দিতে পারছেন না দেড় বছরের অভিগ্ন সাহার মা-বাবাকে। ভুল ইঞ্জেকশনের জেরে সন্তান এ ভাবে কার্যত জীবন্মৃত হয়ে গিয়েছে বলে মধ্য কলকাতার এক নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে শেক্সপিয়র সরণি থানায় সোমবার অভিযোগ দায়ের করেছেন অভিগ্নর মা-বাবা। মঙ্গলবার এক সাংবাদিক সম্মেলনেও তাঁরা এই ঘটনা তুলে ধরে সন্তানের জন্য সুবিচার চাইলেন।

Advertisement

বমি এবং শরীরে জলশূন্যতা নিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর পার্ক ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছিল অভিগ্ন। দু’দিন পর্যবেক্ষণে রেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। হাসিখুশি, প্রাণোচ্ছল শিশুটিকে যে দিন ছেড়ে দেওয়ার কথা, ঠিক তার আগের দিন, ২৯ তারিখ বিকেলে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। তার পর থেকে তিন মাসেরও বেশি সময় চলচ্ছক্তিহীন জড় পদার্থের মতো কাটছে তার জীবন। শিশুটির বাবা মনোজিৎ সাহা এবং মা সুইটি পাল সাহার অভিযোগ, ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্স পটাশিয়াম ক্লোরাইড ইঞ্জেকশন দেন অভিগ্নকে, তার পরেই নেতিয়ে পড়ে সে। তাঁদের আরও অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এমনকী, ঘটনার কিছু দিনের মধ্যে তাঁদের হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট নেই জানিয়ে কর্তৃপক্ষ অভিগ্নকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করার কথাও বলেন বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার অবশ্য পার্ক ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সমস্ত অভিযোগই ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

আপাতত মল্লিকবাজারের কাছে একটি স্নায়ুরোগ চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি রয়েছে শিশুটি। এখনও পর্যন্ত চিকিৎসায় লাখ ছয়েক টাকাও খরচ হয়ে গিয়েছে। আরও কত হবে তা জানা নেই বাবা-মায়ের।

Advertisement

মনোজিৎ বলেন, ‘‘একজন নার্স ইঞ্জেকশনটি দেওয়ার পরেই অন্য এক নার্স এসে বলেন, ‘এটা তুই কী দিলি!’ তার পরেই তাঁরা ইঞ্জেকশনের ভায়ালটি ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে নেন। ততক্ষণে আমার স্ত্রী ও ওয়ার্ডে ভর্তি অন্য শিশুদের মায়েরা ইঞ্জেকশনের নামটি পড়ে ফেলেন। ঘটনার পরে সংশ্লিষ্ট নার্সকে আর নার্সিংহোমে পাওয়া যায়নি।’’

নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ অবশ্য ভুল ইঞ্জেকশন দেওয়ার কথা মানতে চাননি। উল্টে চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা করার পাশাপাশি বকেয়া বিলের একটা বড় অংশ মকুব করা হয়েছে বলেও দাবি তাঁদের। ম্যানেজার সব্যসাচী দত্ত বলেন, যে দিন শিশুটি ভর্তি হয়, তার পর দিনই তার খিঁচুনি হয়েছিল। তখন তাকে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু সেখানেও অবস্থার অবনতি হতে থাকায় তাকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়।

কিন্তু ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে যে লেখা রয়েছে, শিশুটিকে খাওয়ানোর পরে আচমকা তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল। তা হলে কোনটা ঠিক? খাওয়ানোর পরে শ্বাসকষ্ট, নাকি আচমকা খিঁচুনি? এই প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি সব্যসাচীবাবু।

হাসপাতালের কর্ণধার, চিকিৎসক সুদীপ চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, সেপ্টেম্বরের ঘটনায় এত পরে অভিযোগ করা হল কেন? মনোজিৎবাবুর দাবি, সন্তানের এমন একটা দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির জেরে তাঁরা মানসিক ভাবে এতটাই বিধ্বস্ত ছিলেন যে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে অভিযোগ জানানোর অবস্থায় ছিলেন না।

মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে রোগী-স্বার্থে কাজ করা এক সংগঠনের তরফে কুণাল সাহা জানান, পটাশিয়াম ক্লোরাইড ইঞ্জেকশনটি যে ভাবে ওই শিশুটিকে দেওয়া হয়েছে, তাতে এমন পরিণতি অস্বাভাবিক নয়। তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের অবহেলায় একটি নিষ্পাপ শিশুর এমন পরিণতি হল, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement