জখম: হাত কাটা যাওয়ার পরে হাসপাতালে নুরউদ্দিন খান। নিজস্ব চিত্র
শহরের ব্যস্ত রাজপথে ওভারটেক-টক্করের মাসুল দু’টি কাটা হাত। পথ-নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে যথেষ্ট ঢাকঢোল পেটানো হলেও বার বার একই ভাবে ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা। এ বার ঘটনাস্থল, কলকাতার উপকণ্ঠে গঙ্গারামপুর এলাকার ডায়মন্ড হারবার রোড। মঙ্গলবার কাকভোরে বাস ও লরির রেষারেষিতে যেখানে হাত খুইয়েছেন বাস আরোহী দুই যাত্রী।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাসের জানলার বাইরে হাত রেখে বসেছিলেন লালবানু বিবি ও নুরউদ্দিন খান। এসডি ১৬ রুটের বাসটি পথ আটকে থাকায় বোঝাই করা মাছ নিয়ে কলকাতার বাজারে ঢুকতে দেরি হয়ে যাচ্ছিল ধাবমান লরিটির। তখনই শুরু হয় ওভারটেকের চেষ্টা। প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, রাস্তায় সামান্য একটু জায়গা পেয়েই লরিটি বাসের গা ঘষটে ধাক্কা মেরে বেরিয়ে যায়। আর জানলার বাইরে হাত রেখে বসা দু’জন যাত্রীর হাতও কাঁধ থেকে কাটা পড়ে। পুলিশের দাবি, আরও জনা পাঁচেক যাত্রী ও ভাবেই হাত বার করে বসেছিলেন, তাঁরাও কমবেশি জখম।
পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার পর বাসটি গঙ্গারামপুর এলাকায় দাঁড় করিয়ে দেন চালক। কাটা হাত দু’টি লরির ধাক্কায় ছিটকে বাসের ভিতরেই পড়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্যে লালবানু ও নুরউদ্দিন-সহ জখম যাত্রীদের স্থানীয় আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু লালবানু ও নুরউদ্দিন দু’জনই হাসপাতালে যাওয়ার পর বেহুঁশ হয়ে পড়েন। পরে আমতলা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা দু’জনকে কলকাতার এম আর বাঙুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। তাঁদের দু’জনেরই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। আপাতত দু’জনেরই শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
আরও পড়ুন: ছ’ইঞ্চি পেট কেটে বেরোল সাত সূচ
এ দিনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা উসকে দিয়েছে কলকাতায় একই ধরনের বেশ কয়েকটি পুরনো দুর্ঘটনার স্মৃতিও। এক যুগ আগে শ্যামবাজারের কাছে বাসে বাসে রেষারেষিতে ডান হাত খুইয়েছিলেন ছাতু বিক্রেতা সুপারি পাসোয়ান। ২০০৮-এ দেগঙ্গায় হাত ছিঁড়ে যায় এক মহিলার। তার এক বছর বাদেই কলকাতার ময়দানের কাছে ডাফরিন রোডে এক দম্পতির হাত কাটা যায় বাসে বাসে রেষারেষিতে। বছর তিনেক আগে হাওড়া ময়দান এলাকায় একই ভাবে বাসের জানলার বাইরে হাত ঝুলিয়ে বসে থাকার সময়ে এক কিশোরীর হাত মারাত্মক জখম হয় দু’টি বাসের রেষারেষিতে।
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিনের দুর্ঘটনার জেরে টালমাটাল বাসটির জনা ৪০ যাত্রীই বেসামাল হয়ে পড়েন। মাছ বোঝাই লরি ও বাসটিকে আটক করেছে পুলিশ। কিন্তু দুই গাড়ির চালক ও খালাসি পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ। ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, ‘‘দু’টি গাড়ির চালক ও খালাসিকে শনাক্ত করা হয়েছে। ওঁরা খুব তাড়াতাড়ি ধরা পড়বেন।’’