দমদমে সার্জেন্ট ‘নিগ্রহ’

‘মারধরে’ আরও তিন সিভিক পুলিশ

একা রাজু লোধ নন। তদন্তে জানা যাচ্ছে, স্ত্রী-র শ্লীলতাহানি রুখতে যাওয়া ট্র্যাফিক সার্জেন্টকে বেধড়ক মারধরের ঘটনায় রাজুর সঙ্গী আরও দুই সিভিক ভলান্টিয়ার বা আধা পুলিশ জড়িত ছিলেন।

Advertisement

অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৩৫
Share:

একা রাজু লোধ নন। তদন্তে জানা যাচ্ছে, স্ত্রী-র শ্লীলতাহানি রুখতে যাওয়া ট্র্যাফিক সার্জেন্টকে বেধড়ক মারধরের ঘটনায় রাজুর সঙ্গী আরও দুই সিভিক ভলান্টিয়ার বা আধা পুলিশ জড়িত ছিলেন। শুক্রবার মধ্যরাতে ঘটনাস্থল থেকে ধৃত রাজু দমদম রেল পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার।

Advertisement

শনিবারের ওই ঘটনার পরে প্রথমে জানা গিয়েছিল— কাশীপুর থানার পাশেই দমদম রোডে ওই ঘটনায় রাজুর সঙ্গে আরও এক জন ছিলেন। তিনিও সিভিক ভলান্টিয়ার। সার্জেন্টের স্ত্রীকে কাশীপুর থানা থেকে পুলিশ ডেকে আনতে দেখে ওই যুবক মোটরবাইকে চেপে পালিয়ে যান।

কিন্তু চিৎপুর থানার পুলিশ তদন্তে নেমে জেনেছে, ওই রাতে রাজুর সঙ্গী ছিলেন মোট তিন জন। রাজু-সহ তিন জন দমদম জিআরপি-র সিভিক ভলান্টিয়ার। চতুর্থ জনের পরিচয় জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই চার জন কলকাতা স্টেশনের পাশে এক জায়গায় পানাহার সেরে দু’টি মোটরবাইকে ফিরছিলেন। অভিযোগ, সার্জেন্টের স্ত্রীকে কটূক্তি, তাঁর প্রতি অশ্লীল আচরণ করেছিলেন রাজু ও তাঁর মোটরবাইকে থাকা সঙ্গী।

কিন্তু কলকাতা পুলিশের ইস্ট ট্র্যাফিক গার্ডের সার্জেন্ট প্রতিবাদ করে রুখে দাঁড়ালে তাঁকে মারধরের সময়ে দ্বিতীয় মোটরবাইকে থাকা বাকি দুই সিভিক ভলান্টিয়ারও যোগ দেন বলে অভিযোগ।

রবিবার রাত পর্যন্ত অবশ্য বাকি তিন জনের কাউকেই পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে তাঁরা সকলেই সিঁথি ও দমদমের বাসিন্দা বলে জেনেছে পুলিশ।

কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ধৃত রাজু আমাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। সঙ্গীদের ঠিকঠাক পরিচয় জানাচ্ছেন না।’’ শুক্রবার মাঝরাতে বচসা শুরুর সময়ে ওই সার্জেন্ট নিজের পেশাগত পরিচয় দেওয়ার পরে রাজুও পাল্টা বলেছিলেন, ‘আমিও পুলিশ!’

পুরোদস্তুর পুলিশ না হলেও সিভিক ভলান্টিয়ারদের বাহিনীর অঙ্গ হিসেবে ধরা হয়। অথচ বেশ কিছু দিন ধরেই অভিযোগ উঠছে, ভাল করে খোঁজখবর না নিয়েই সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হচ্ছে। তা ছাড়া নিয়োগের পরে সিভিক ভলান্টিয়ারদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা। প্রশ্ন উঠেছে, তাতেও কি ত্রুটি থেকে যাচ্ছে?

কলকাতার অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার বলেন, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ করা হয় সুপারিশের ভিত্তিতে। এগুলি অস্থায়ী পদ। তাই, তেমন প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় না। সে কারণে এঁদের অনেকের মধ্যেই পুলিশি শৃঙ্খলার অভাব।’’

যদিও রাজ্য পুলিশের এডি়জি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মার পাল্টা দাবি, ‘‘রীতিমতো খোঁজখবর নিয়েই সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ করা হয়। আবার কর্মরত অবস্থায় তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও
অসদাচরণের অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিই।’’

শনিবারের ওই ঘটনা প্রসঙ্গে শিয়ালদহের রেল পুলিশ সুপার দেবাশিস বেজও বলছেন, ‘‘আমাদের প্রশিক্ষণে ভুল আচরণ শেখানোর কোনও প্রশ্ন নেই। কেউ খারাপ কিছু করলে সেই দায় সম্পূর্ণ ভাবেই তাঁর নিজের।’’ দমদম রোডের ওই ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের সকলকে অবিলম্বে বরখাস্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন দেবাশিসবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন