টেন্ডার বেরোবে নামেই। কিন্তু কাজের বরাত কে পাবেন, সেটা আগে থেকেই ঠিক হয়ে থাকবে। বিধায়কের নাম করে এমনই ফোন এসেছিল কাউন্সিলরের কাছে!
কাজ বলতে পানিহাটি এলাকার একটি জমিতে বহুতল নির্মাণ। আর সেই জন্য অবিলম্বে এক জন প্রোমোটারের সন্ধান চাই— ফোন পেয়ে এমনটা জেনেছিলেন কলকাতা পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড, চিৎপুর এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর গৌতম হালদার। গৌতমবাবুকে যিনি ফোন করেছিলেন, তিনি নিজেকে পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষ বলে পরিচয় দেন। পরে জানা যায়, নির্মলবাবু নন, তাঁর নাম করে অন্য এক জন গৌতমবাবুকে ফোন করেছেন আর কাজের বরাত পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে তিন সেই প্রোমোটারের কাছ থেকে সাড়ে চার লক্ষ টাকাও নিয়েছেন। প্রোমোটারের কাছেও ওই ব্যক্তি নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন বিধায়ক নির্মল ঘোষ বলেই।
এত কিছু করেও অবশ্য শেষরক্ষা হল না। শুভজিৎ রায় নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করেছে চিৎপুর থানার পুলিশ। শনিবার রাতে মধ্যমগ্রাম থেকে তাঁকে ধরা হয়। রবিবার শিয়ালদহ আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক শুভজিৎকে ১১ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
তদন্তকারীদের দাবি, এর আগে কলকাতা পুরসভার আরও কয়েক জন কাউন্সিলরকে ফোন করেছিলেন শুভজিৎ। কখনও বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায়, তৃণমূলের যুবনেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা, এমনকী কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নাম করেও তিনি ফোন করে প্রতারণা ও জালিয়াতি করেছিলেন বলে পুলিশ জানাচ্ছে।
তবে তদন্তকারীদের একাংশের প্রশ্ন, নির্মল ঘোষ বিধায়ক হতে পারেন, উত্তর ২৪ পরগনায় শাসক দলের নেতা হতে পারেন। কিন্তু, তিনি কোনও বেআইনি কাজ করার কথা বললে কাউন্সিলর গৌতমবাবু সেটা শুনলেন কেন? তিনি কেন যাচাই করে দেখলেন না, ওই ফোনটি তাঁকে নির্মলবাবুই আদৌ করেছেন কি না। এর অর্থ কি এই যে এমন বেআইনি কাজে কাউন্সিলরদের একাংশ মদত দেন?
কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর গৌতম হালদার অবশ্য দাবি করছেন, ‘‘আমি এ রকম কোনও ফোন পাইনি। তবে, আমার নাম করে কেউ প্রতারণা করতে পারেন।’’ আর পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষের মোবাইলে এ দিন বার বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি, জবাব দেননি এসএমএসেরও।
তদন্তকারীরা আরও প্রশ্ন তুলেছেন, গৌতমবাবুর দাবি ঠিক হলে প্রোমোটার অনিল গাডিয়ার সঙ্গে বিধায়ক নির্মল ঘোষের নাম ভাঁড়িয়ে ফোন করা ওই শুভজিৎ রায়ের পরিচয় করালো কে?
পুলিশের দাবি, মাসখানেক আগে গৌতমবাবু বুঝতে না পেরে তাঁর পরিচিত প্রোমোটার অনিল গাডিয়াকে ওই প্রতারকের ফোন নম্বর দিয়ে জানান, সেটি বিধায়ক নির্মল ঘোষের নম্বর এবং তাঁর সঙ্গে অবিলম্বে যোগাযোগ করতে হবে।
তদন্তকারীরা জানান, এর পরেই প্রতারকের খেলা শুরু হয়। নির্মল ঘোষের ভেক ধরা শুভজিৎ প্রোমোটার অনিলবাবুর ফোন পেয়ে জানান, টেন্ডারে অংশ না নিয়েই কাজ পাওয়া যাচ্ছে বলে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা লাগবে। এত বড় কাজ, তার উপর খোদ স্থানীয় বিধায়ক বলছেন, রাজি হয়ে যান অনিলবাবু। তাঁকে এটাও বলা হয়, একটি ছেলে গিয়ে টাকা নিয়ে আসবে। পুলিশের বক্তব্য, ওই ‘ছেলেটি’ আর কেউ না, শুভজিৎ রায় স্বয়ং!
কিন্তু এর পরে কাজের কোনও উচ্চবাচ্য নেই দেখে অনিলবাবু খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, পুরোটাই ধাপ্পা। তিনি তো বটেই, প্রতারিত হয়েছেন কলকাতা পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও। এর পরেই অনিলবাবু গত ৭ জুন চিৎপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।