বন্দর এলাকায় চাদর চুরিতে গ্রেফতার ৫

পুলিশকে ফাঁকি দিতে ঘন ঘন মোবাইল ফোনের সিম বদল করেছিল অভিযুক্তরা। তবে বারবার সিম বদলালেও একটি হ্যান্ডসেটই ব্যবহার করছিল ওই দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৬ ০০:৪৮
Share:

পুলিশকে ফাঁকি দিতে ঘন ঘন মোবাইল ফোনের সিম বদল করেছিল অভিযুক্তরা। তবে বারবার সিম বদলালেও একটি হ্যান্ডসেটই ব্যবহার করছিল ওই দুষ্কৃতীরা। আর ওই মোবাইল হ্যান্ডসেটের সূত্র ধরেই বন্দর এলাকার ট্রাক থেকে দামি মাল চুরি করার চক্রের সন্ধান পেল পুলিশ।

Advertisement

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গ্রেফতার করা হয়েছে ওই চক্রের পাঁচ সদস্যকে। উদ্ধার হয়েছে চুরি যাওয়া বেশ কিছু সামগ্রী। তবে পুলিশের দাবি, চক্রের পাঁচ জন গ্রেফতার হলেও মূল পাণ্ডা দুই ভাই পলাতক। খোঁজ মেলেনি এক ট্রাক চালকেরও। ধৃতদের জেরা করার পর পুলিশের দাবি, চক্রটি বন্দর এলাকার প্রায় ১০টি চুরির সঙ্গে জড়িত। ওই চক্রটি প্রথমে বালির নিশ্চিন্দায় বিভিন্ন গ্যারাজে চোরাই ট্রাকের নম্বর এবং চেসিস নম্বর পাল্টে ফেলত। পরে ট্রাকগুলি পরিবহণ সংস্থার মাধ্যমে বন্দর এলাকায় মাল পৌঁছোনোর কাজে লাগানো হত।

পুলিশ জানায় ধৃতদের নাম রামকৃষ্ণ কর্মকার ওরফে পাপান, দিব্যেন্দু সান্যাল, প্রভাস দাস, শাহজাহান এবং মৃত্যুঞ্জয় সিংহ। প্রথম তিন জনকে বালির নিশ্চিন্দা, শাহজাহানকে বারাসতের নীলগঞ্জ এবং মৃত্যুঞ্জয়কে টিটাগ়়ড় থেকে ধরা হয়েছে। ধৃতদের এ দিন আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাদের ন’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।

Advertisement

লালবাজার সূত্রের খবর, বিছানার চাদর বোঝাই ট্রাকটি পুলিশ উদ্ধার করতে না পারলেও চক্রের পাঁচ দুষ্কৃতীকে জেরা করে বারাসত, বালি এবং টিটাগড় থেকে কয়েক লক্ষ টাকা মূল্যের বিছানার চাদর ভর্তি বাক্স উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, ৪ জুন চিন থেকে ২৭০টি বাক্সে বিছানার চাদর এসে পৌঁছয় নেতাজি সুভাষ ডকে। পুলিশের কাছে অভিযোগকারী সংস্থার দাবি, তারা একটি পরিবহণ সংস্থাকে ওই চাদর শিলিগুড়িতে পৌঁছনোর ভার দেয়। চাদরের বাজারদর অন্তত তিরিশ লক্ষ টাকা বলে দাবি অভিযোগকারী সংস্থার। ওই দিনই দু’টি ট্রাকে তা রওনা দেয় শিলিগু়ড়ির দিকে। এক-একটি ট্রাকে প্রায় ১৪৪টি বাক্স ছিল। এক-একটি বাক্সে ৮০টি করে চাদর ছিল। দু’দিন পরে নির্ধারিত সময়ে একটি ট্রাক শিলিগুড়িতে পৌঁছে গেলেও অন্য ট্রাকটি না পৌঁছনোয় সেটির খোঁজ শুরু করে অভিযোগকারী সংস্থাটি।

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগকারী সংস্থাটি প্রাথমিক ভাবে জানতে পারে নিখোঁজ হওয়া ট্রাকটির নম্বর ভুয়ো। সেই সঙ্গে চালকের মোবাইলটিও বন্ধ। এর পরেই তাঁরা দক্ষিণ বন্দর থানায় চুরির অভিযোগ দায়ের করেন।

লালবাজার জানিয়েছে, ওই মোবাইলের সূত্র ধরেই কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (বন্দর) সুদীপ সরকারের নেতৃত্বে তদন্ত শুরু করেন দক্ষিণ বন্দর থানার ওসি সুমিত দাশগুপ্ত ও অন্য অফিসারেরা। প্রাথমিক ভাবে তাঁরা জানতে পারেন, একটি চক্র নিজেদের পরিবহণ সংস্থা হিসেবে দাবি করে এক দালালের মাধ্যমে চাদর পৌঁছোনোর দায়িত্ব পেয়েছিল। দেখা যায়, চালকের ফোন নম্বরটি বন্ধ থাকলেও মোবাইল হ্যান্ডসেটটিতে অন্য নম্বরের সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার এক-দু’দিন পরেই সিম পাল্টানো হচ্ছে।

এক পুলিশ অফিসার জানান, এর পরে সিমগুলির তথ্য খতিয়ে দেখে ওই চক্রের সন্ধান মেলে। চোরাই মাল কেনা হবে এই শর্তে তদন্তকারীরা যোগাযোগ করেন চক্রের সদস্যদের সঙ্গে। সেই মতো শনিবার রাতে নিশ্চিন্দাতে হানা দিয়ে পাপান, দিব্যেন্দু ও প্রভাসকে ধরা হয়। তাদের জেরা করে পেশায় ট্রাক চালক শাহজাহানকে নীলগঞ্জ থেকে আটক করে পুলিশ। তার কাছ থেকে চক্রের মূল পাণ্ডার আত্মীয়, টিটাগড়ের বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয়ের খোঁজ মেলে। তবে চক্রের দুই পাণ্ডার খোঁজ সোমবার পর্যন্ত
পায়নি পুলিশ।

কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, গত এক মাস ধরে বন্দর এলাকা থেকে ডাল-সহ ট্রাক, ময়দা ভর্তি লরি এবং দস্তা বোঝাই কন্টেনার উধাওয়ের মতো ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাগুলির সঙ্গে এই চক্রের যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন