সংশয়: রাজপথ হোক বা অলিগলি। সন্ধে নামলেই কতটা নিরাপদ কলকাতা! বৃহস্পতিবার শহরের রাস্তা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
(৭ ফেব্রুয়ারি, রাত পৌনে দশটা)
রাস্তায় এমনকী, অলিগলিতে প্রাণভয়ে ছুটতে হল ২২ বছরের এক তরুণীকে। পিছনে গাড়িতে পাঁচ যুবক। অন্তত ২০ মিনিট দৌড়ের পর নিজেকে বাঁচাতে পারলেন তিনি।
তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী ওই তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে বাগুইআটি থানার পুলিশ। এই ঘটনায় পাঁচ অভিযুক্ত—বিশ্বজিৎ মজুমদার, কিশোর বিশ্বাস, অভিষেক দাস, অভিষেক বাচার এবং সজল দাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বিশ্বজিতের গাড়িটি। তরুণীর কথায়, ‘‘ওই গলিতে গলিতে দৌড়নোর কথা ভুলতে পারছি না। পুরোটাই আতঙ্ক, ট্রমা।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, গত এক বছর ধরে কেষ্টপুরে একটি বাড়িতে একাই ভাড়া থাকেন আদতে অসমের বাসিন্দা তরুণীটি। প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার কিছু পরে বৈশাখী থেকে ২০৬ ফুটব্রিজ হয়ে বাড়ির রাস্তা ধরেন তিনি। সমরপল্লি এলাকায় একটি দোকান থেকে রুটি কেনার সময় লক্ষ্য করেন, একটি সাদা রঙের সিডানের হেডলাইট ফেলা হচ্ছে তাঁর উপরে। গাড়িতে পাঁচ যুবক। গোড়ায় ততটা আমল দেননি। কিন্তু রুটি কিনে হাঁটতে শুরু করে তিনি বুঝতে পারেন, গাড়িটি পিছু নিয়েছে। বিপদের আভাস পেয়ে গলিতে ঢুকে পড়েন তরুণী। কিন্তু গলি থেকে বড় রাস্তায় বেরোতেই দেখেন, গাড়িটি সেখানে দাঁড়িয়ে!
তখন দৌড়ে পিছনের আরেকটি গলি ধরেন তিনি। কিন্তু ওই গলির মুখে পৌঁছেও দেখেন, গাড়িটি ততক্ষণে সেখানে পৌঁছে গিয়েছে। যুবকদের গাড়ি থেকে নামতে দেখে আবার দৌড়তে শুরু করেন তরুণী। সামনেই দেখেন আরেক তরুণীকে। তিনি একটি বাড়িতে ঢোকার জন্য তালা খুলছেন। অপরিচিতার কাছে গিয়েই তিনি বলেন, ‘আমাকে বাড়িতে ঢুকতে দিন।’। পাল্টা প্রশ্ন করেন অন্য তরুণীটি। যুবকেরা তখন আরও এগিয়ে আসছে! জোর করেই ওই বাড়িতে ঢুকে যান তরুণীটি। যাঁর কাছে আক্রান্ত তরুণী সাহায্য চেয়েছিলেন, তিনিও ওই বাড়িতে ভাড়া থাকেন। বাড়ির মালিক তরুণীকে বাড়ি পৌঁছে দেন রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ।
আরও পড়ুন: থানা থেকে বার হলেই ছিঁড়ে খাব
বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসি (ডিডি) শবরী রাজকুমার বলেন, ‘‘বিনীত দেশাই নামে এক জনের ফেসবুক পোস্ট থেকে ঘটনার কথা প্রথম জানা যায়। তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে অন্যায় ভাবে রাস্তা আটকানো, অসৎ উদ্দেশ্যে পিছু নেওয়া ও কটূক্তির অভিযোগে মামলা হয়েছে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, পাঁচ অভিযুক্তের মধ্যে এক জন এলাকার প্রোমোটার। ওই তরুণী ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন, অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য প্রোমোটারের স্ত্রী তাঁকে ফোন করেছেন, বলেছেন স্রেফ ভয় দেখাতে এ কাজ করা হয়েছে! আর বিধাননগরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের (যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে) কাউন্সিলর বিকাশ নস্করের বক্তব্য, ‘‘তরুণীর কথা সত্যি হলে ঘটনাটি অনভিপ্রেত।’’
সত্যি হলে! তরুণী তো বলছেন, জোর করে অপরিচিতের বাড়ি না ঢুকলে মত্ত যুবকেরা তুলে নিয়ে যেত!