আত্মরক্ষায় গিলোটিন প্যাঁচ শেখাচ্ছেন সত্তর ছুঁইছুঁই বৃদ্ধা!

ঝর্নাদেবী জানাচ্ছেন, এখনও রান্না থেকে ফ্ল্যাটের যাবতীয় কাজ নিজে হাতে সারেন। মেয়েরা ও স্বামী সাহায্য করলেও পরিচারিকার সাহায্য নেওয়ায় বিশ্বাসী নন তিনি।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৮ ০১:২৩
Share:

প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ঝর্না মৈত্র। ছবি: শৌভিক দে

চোর-ডাকাতেরা সাবধান! ছিনতাইবাজেরাও সতর্ক থাকুন। সন্ধ্যা-রাতে নির্জন রাস্তায়, সল্টলেকের ইই ব্লক ও তার আশপাশে একা কোনও বৃদ্ধাকে দেখে ছিনতাইয়ের ভাবনা থাকলে গিলোটিন প্যাঁচে ঘায়েল হওয়ার আশঙ্কা আছে।

Advertisement

ওই এলাকার সত্তর ছুঁইছুঁই বাসিন্দা ঝর্না মৈত্র এখন আত্মরক্ষার পাঠ নিচ্ছেন বিধাননগর পুলিশের আয়োজিত ‘সুকন্যা’য়। সঙ্গে যাচ্ছেন তাঁর দুই কন্যা, সোমা ও রিমাও। কয়েক সপ্তাহ প্রশিক্ষণের পরে আত্মবিশ্বাসী ঝর্নাদেবী। এখন সামনে দাঁড়ানো দুষ্কৃতীর ঘাড় পেঁচিয়ে ধরতে পারেন। ‘ট্রায়াঙ্গেল লক’ ছাড়া আরও দু’একটি প্যাঁচ শিখেছেন। হাতের প্যাঁচে গলায় এমন চাপ দেবেন, যাতে দম আটকে যেতে পারে সেই ব্যক্তির। জানালেন, একে বলে গিলোটিন প্যাঁচ!

এই বয়সে গিলোটিন প্যাঁচের পাঠ? ‘‘রানাঘাটে যে সন্ন্যাসিনীর উপরে অত্যাচার হয়েছিল, তাঁর বয়স কত ছিল?’’ পাশ থেকে প্রশ্ন তুললেন বৃদ্ধার স্বামী শঙ্করণবাবু। আজকাল আর কিছুর উপরে ভরসা আছে নাকি, বক্তব্য কেএমডিএ-র প্রাক্তন কর্মী ঝর্নাদেবীর। ফলে আত্মরক্ষার দায়িত্ব নিজের হাতেই নেওয়ার এই সিদ্ধান্ত।

Advertisement

ঝর্নাদেবী জানাচ্ছেন, এখনও রান্না থেকে ফ্ল্যাটের যাবতীয় কাজ নিজে হাতে সারেন। মেয়েরা ও স্বামী সাহায্য করলেও পরিচারিকার সাহায্য নেওয়ায় বিশ্বাসী নন তিনি। অনলাইনে শেয়ার কেনাবেচাতেও হাত পাকিয়েছেন, সেলাই শিখছেন। বয়সের প্যাঁচে বাধা না পড়ে এ ভাবেই নতুন উদ্যমে ছুটচ্ছেন ঝর্নাদেবী। তাই আত্মরক্ষার জন্য ক’টি কুস্তির প্যাঁচ শিখতেই বা সমস্যা কোথায়! তা ছাড়া, নিজের খেয়াল নিজেকে তো রাখতেই হয়। সে কথা মনে করিয়ে ঝর্নাদেবী বলেন, ‘‘টিভিতে দেখছি, খবরের কাগজেও পড়ছি— কত কী ঘটে। আমি বেশির ভাগ সময়েই একা থাকি ফ্ল্যাটে। দুই মেয়ে কাজে বেরিয়ে যায়। স্বামীও বাইরে যান। মেয়ে যখন এসে বলল যে, আত্মরক্ষার পাঠ দেওয়া হচ্ছে, মনে হল দেখিই না চেষ্টা করে। ক্লাস করতে বেশ ভালই লাগছে।’’

এত বয়সে কসরত শিখতে অসুবিধে হচ্ছে না? অসুবিধের কথা ভাবতে চান না ঝর্নাদেবী। তাঁর প্রশিক্ষক সুপ্রিয়া সামন্তও আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘‘এ তো আত্মরক্ষার স্বার্থে কয়েকটা জিনিস শিখে নেওয়া। এতে বয়স কোনও বাধাই নয়।’’ তিনি জানান, ঝর্নাদেবীর বয়সী আর কোনও ছাত্রী আপাতত না থাকলেও, এখন তাঁর কাছে পাঠ নিচ্ছেন বেশ কয়েক জন পঞ্চাশ পেরোনো মহিলা। অর্থাৎ, মনোবল থাকলে এগিয়ে পড়াই যায়।

শঙ্করণবাবুও এক সময়ে জুডোর প্রশিক্ষক ছিলেন। এ বার স্ত্রী ও দুই মেয়েও আত্মরক্ষার পাঠ নিচ্ছেন। ফলে চার জনের এই সংসারে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ঢুকলে তিন-চার জনকে অনায়াসেই ঘায়েল করে ফেলতে পারবে মৈত্র পরিবার। তবে এখনও সল্টলেকের পথে সান্ধ্য ভ্রমণে বেরোলে বাড়িতে গয়না খুলে রেখে যান সতর্ক ঝর্নাদেবী। এখনও যে প্রায় দু’মাস বাকি প্রশিক্ষণ শেষ হতে। ‘‘মাস দু’য়েক পরে চেন ও বালা পরেই ইভনিং ওয়াকে যেতে পারব’’— আত্মবিশ্বাসী গলায় উক্তি ঝর্নাদেবীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন