আদালতের পথে ধৃতেরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
বাঙুর থেকে দমদম পার্কের মধ্যে বিশ্ববাংলার লোগো এবং মুখ্যমন্ত্রীর ছবিতে কালি লেপে দেওয়ার ঘটনায় এক বিজেপি নেতা-সহ মোট ৯ জনকে বুধবার গ্রেফতার করল লেকটাউন থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার ধৃতদের বিধাননগর আদালতে তোলা হলে তাঁদের তিন দিনের পুলিশি হেফাজত হয়। পরে লেকটাউন থানায় ও আদালত চত্বরে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির নেতা-কর্মীরা।
ধৃতেরা হলেন বিজেপির উত্তর ২৪ পরগনা জেলার যুব মোর্চার সভাপতি মণিকাঞ্চন পাল, বিশ্ব চক্রবর্তী, অভিজিৎ মণ্ডল, অনুপ সরকার, প্রসেনজিৎ নস্কর, সুরজিৎ দে, শিবু দাস, বিক্রম দে এবং শঙ্কর পারুই। ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট-সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে।
অনূর্দ্ধ ১৭ বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে ভিআইপি রোডের ধারে বাঙুর থেকে দমদম পার্কে বিভিন্ন হোর্ডিং লাগানো হয়েছিল। ১৯ নভেম্বর রাতে সেই হোর্ডিংয়ে কালি লাগানো হয়। তদন্তে নেমে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে বেগ পেতে হয় পুলিশকে। কারণ ঘটনাস্থলে কোনও সিসি ক্যামেরার নজরদারি ছিল না। পুলিশ ঘটনাস্থলের কিছুটা আগে ও পরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখতে শুরু করে। ফুটেজ থেকে একটি ধূসর ও একটি লাল রঙের গা়ড়ি এবং দু’টি মোটরবাইককে চিহ্নিত করে পুলিশ।
গাড়িগুলির সূত্রেই ধৃতদের নাম উঠে আসে। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক জেরায় অভিযুক্তেরা কালি লাগানোর কথা স্বীকার করেছেন।
পুলিশের সূত্রে খবর, ঘটনার আগে রেইকি করা হয়েছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, শিবু দাস এবং উদয়ন দে রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ প্রথমে ঘটনাস্থল রেইকি করেন। পরে রাত সওয়া দু’টো নাগাদ বিশ্ব চক্রবর্তী, অভিজিৎ মণ্ডল এবং শিবু দাস মিলে কালি লাগানো শুরু করেন। তখন সেখানে এসে সহযোগিতা করেন মণিকাঞ্চনবাবু এবং বাকি সঙ্গীরা।
এ দিন আদালতে সরকারি কৌঁসুলি সন্দীপ চট্টোপাধ্যায় জানান, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করা হয়েছে। সেই ঘটনায় অভিযুক্তদের যোগসূত্রের প্রমাণ মিলেছে। অভিযুক্তদের ৭ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে রাখার আবেদনও জানানো হয়। যদিও পাল্টা দাবিতে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীরা জানান, সরকারি সম্পত্তি হিসেবে যা বলা হচ্ছে তা আদালতের বিচারাধীন। তাই সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের ধারা দেওয়া ঠিক নয়। অভিযুক্তের পক্ষের এক আইনজীবী গোরা সরকারের অভিযোগ, গ্রেফতারির ক্ষেত্রে নিয়মভঙ্গ করা হয়েছে। দু’পক্ষের সওয়াল জবাবের পরে অভিযুক্তদের ৩ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ হয়। যদিও সেই নির্দেশদানের আগে দু’পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়।
তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁরা আগেই আশঙ্কা করেছিলেন যে বিজেপি কর্মীরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। এই গ্রেফতারিতে তার প্রমাণ মিলল। দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘বিজেপির রাজনৈতিক সংস্কৃতির চেহারা প্রকাশ পেয়েছে। নানা ভাবে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছে বিজেপি। কিন্তু কিছুই না করতে পেরে হতাশা থেকে এমন কাজ করছে।’’
পাল্টা দাবিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘ওই বিশ্ববাংলা নিয়ে বাংলার মানুষকে প্রতারিত করেছে শাসক দল। তাই কালি লেপে দিয়ে ঠিক কাজ করেছে।’’
এ দিন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘দিলীপবাবু উন্মাদের মতো কথা বলছেন। এ কথা বলে উনি নিজেদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মুখে কালি লাগালেন। এমন বিরোধী থাকলে ভাল।’’