বোমা খুঁজছে পুলিশের বিশেষ বাহিনী। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র
সন্ত্রাস নিয়ে গুমোট আবহের মধ্যে খাস ফোর্ট উইলিয়মের অদূরে, রেড রোডে বোমাতঙ্ক! শনিবার বিকেলে।
একেই পড়শি দেশের গুলশন, কিশোরগঞ্জে জঙ্গি হামলার ঘটনা। অন্য দিকে, নিউ মার্কেট থেকে অস্ত্র কিনে বীরভূম যাওয়ার পথে ধরা পড়েছে সন্দেহভাজন ইসলামিক স্টেট জঙ্গি মহম্মদ মুসাউদ্দিন। তাকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় কলকাতারই ভবানী ভবনে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সতর্ক করেছেন তাঁর প্রশাসনকে। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় অচেনা লোক নজরে এলেই খবর দিতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে এ দিন বিকেলে ছড়াল বোমাতঙ্ক।
শনিবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ রেড রোড ও ডাফরিন রোডের মোড়ে ফুটপাথে কালো চামড়ার ব্যাগে মোড়া একটি টিফিন বাক্স দেখতে পান কয়েক জন পথচারী। টিফিন কৌটো দিয়ে আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) তৈরি হওয়া এবং বিস্ফোরণের ঘটনা এ রাজ্যে বহু বার হয়েছে। পথচারীরা পরিত্যক্ত ওই জিনিস দেখেই খবর দেন কাছের পুলিশ কিয়স্কে।
তার পরেই সতর্কতা জনিত হুলুস্থূল। কাছেই ফোর্ট উইলিয়ম, একটু দূরে পর পর রাজভবন-লালবাজার-মহাকরণ। সব দিক মাথায় রেখে কিছুক্ষণের মধ্যে জায়গাটি ঘিরে ফেলে পুলিশ। আধ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় ধর্মতলা-খিদিরপুর রুটে ট্রাম চলাচল। মিনিট দশেকের মধ্যে লালবাজার থেকে পৌঁছন বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডের কর্মীরা। বিস্ফোরণ-নিরোধক উপযুক্ত পোশাক পরেই তাঁরা নির্দিষ্ট সরঞ্জাম দিয়ে টিফিন কৌটোটি পরীক্ষা করতে থাকেন। সাম্প্রতিক কালে বিস্ফোরণ-নিরোধক পোশাক ছাড়াই বোমা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে মালদহ ও আলিপুরদুয়ারে বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন একাধিক পুলিশকর্মী। এ নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে বিস্তর। কিন্তু এ দিন কলকাতা পুলিশ কোনও ঝুঁকি নেয়নি।
শনিবার তখন টানটান পরিস্থিতি। নিরাপদ দূরত্বে দুরু দুরু বুকে সব দেখছে কৌতূহলী জনতা। কেউ আবার ভাবছিলেন, পুলিশ মহড়া দিচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়ে দেন, সেটি খালি টিফিন কৌটো ছাড়া অন্য কিছু নয়। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন সকলে।
কিছু পরে এক ব্যক্তি ঘটনাস্থলে এসে দাবি করেন, ওই টিফিন বাক্সটি ফেলে গিয়েছেন তিনি। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁর হাতে তুলে দেয় সেটি।
লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘কৌটোর মধ্যে বিপদ ছিল না। কিন্তু এই তালে একটি মহড়া হল। শুধু আমাদের নয়, মানুষ কতটা সচেতন, তারও।’’