ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ডাক্তারকে

১৬ জুন ওই হাসপাতালেই গৌরাঙ্গবাবুর গলব্লাডারে ল্যাপ্রোস্কোপিক পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করেন সার্জেন পূর্ণেন্দু রায়। অপারেশনের পর সব কিছু ঠিকাঠাক চলছিল গৌরাঙ্গবাবুর।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৩৯
Share:

গৌরাঙ্গ দত্ত

চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে শহরের এক চিকিৎসককে চার লক্ষ আশি হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিল রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। গত ২০ নভেম্বর বিচারক ঈশানচন্দ্র দাস ও বিচারক তারাপদ গঙ্গোপাধ্যায় এই নির্দেশ দিয়েছেন।

Advertisement

ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের বাসিন্দা, পেশায় অবসরপ্রাপ্ত কর্মী গৌরাঙ্গ দত্ত ২০০৬ সালের ৩ মে পেটে অসহ্য ব্যথা নিয়ে ইএম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক পূর্ণেন্দু রায়ের কাছে আসেন। আল্ট্রা সোনোগ্রাফি করানোর পর জানা যায়, গৌরাঙ্গবাবুর পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে। ১৬ জুন ওই হাসপাতালেই গৌরাঙ্গবাবুর গলব্লাডারে ল্যাপ্রোস্কোপিক পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করেন সার্জেন পূর্ণেন্দু রায়। অপারেশনের পর সব কিছু ঠিকাঠাক চলছিল গৌরাঙ্গবাবুর। কিন্তু ২০১১-র ফেব্রুয়ারি মাসে ফের পেটে অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করেন গৌরাঙ্গবাবু। ধানবাদের স্থানীয় চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর জন্ডিস হয়েছে।

গৌরাঙ্গবাবুর পুত্র সর্বজিৎ দত্ত জানান, তিন মাস ধরে বাবাকে ধানবাদে অনেক ডাক্তার দেখিয়েও কাজ না হওয়ায়, কলকাতায় একবালপুরের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে আনা হয়। সিটি স্ক্যান করে জানা যায়, ২০০৬ সালে পিত্তথলির পাথর অস্ত্রোপচারের পর গৌরাঙ্গবাবুর পিত্তনালীতে দু’টি ‘সার্জিক্যাল-ক্লিপ’ খুলে যাওয়াতেই এই বিপত্তি হয়েছে। পেশায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সর্বজিৎবাবুর অভিযোগ, ‘‘২০০৬ সালে বাবার অস্ত্রোপচারের সময় বাইপাসের ওই হাসপাতালের তরফে ল্যাপ্রোস্কোপিক সার্জারির ভালো-মন্দ কিছুই জানানো হয়নি। এমনকী এই বিষয়ে রোগীর থেকে কোনও মতামতও নেওয়া হয়নি।’’ গৌরাঙ্গবাবুর কথায়, ‘‘দ্বিতীয় বার অস্ত্রোপচার করে সময়মতো পিত্তনালী থেকে ‘সার্জিক্যাল ক্লিপ’ বার না-করলে আমার ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা ছিল বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসক পূর্ণেন্দু রায়ের গাফিলতির জন্যই আমাকে বেশ ভুগতে হয়েছিল।।’’

Advertisement

২০১১ সালেই ই এম বাইপাসের ওই হাসপাতাল ও চিকিৎসক পূর্ণেন্দু রায়ের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা করেছিলেন গৌরাঙ্গবাবু। এ বছরের ২০ নভেম্বর বিচারক ঈশানচন্দ্র দাস ও তারাপদ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁদের রায়ে বলেন, ‘‘২০০৬ সালে পিত্তথলি অস্ত্রোপচারের পাঁচ বছর পর গৌরাঙ্গবাবুর পিত্তনালীতে যেভাবে সার্জিক্যাল ক্লিপ খুলে গিয়েছিল তাতে পরিষ্কার, যে অস্ত্রোপচারের সময় সার্জিক্যাল-ক্লিপ’ আঁটার কাজ অসম্পূর্ণ ছিল।’’ ২০০৫ সালের সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের প্রসঙ্গ টেনে দুই বিচারক পরিষ্কার বলেন, ‘‘গৌরাঙ্গবাবুর ক্ষেত্রে চিকিৎসার গাফিলতির দায় এড়াতে পারেন না চিকিৎসক পূর্ণেন্দুবাবু। এ ক্ষেত্রে তাঁর কর্তব্য লঙ্ঘনের জন্য ব়ড় ক্ষতির মুখোমুখি পড়তে হয়েছে গৌরাঙ্গবাবুকে।’’

দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারের জন্য গৌরাঙ্গবাবুর খরচ হয়েছিল আশি হাজার টাকা। রায় বেরোনোর ৪৫ দিনের মধ্যে ওই আশি হাজার টাকা ও ক্ষতিপূরণ বাবদ আরও চার লক্ষ টাকা চিকিৎসক পূর্ণেন্দু রায়কে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। যদিও এই রায় প্রসঙ্গে চিকিৎসক পূর্ণেন্দু রায় বলেন, ‘‘আমার অস্ত্রোপচারে কোনও গাফিলতি ছিল না। রোগীকে ল্যাপ্রোস্কোপিকের ভালো-মন্দ দিক জানানোও হয়েছিল। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জাতীয় ক্রেতা আদালতে যাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন