লেলিহান: জ্বলছে বস্তি। আগুন নেভানোর কাজে নামলেন স্থানীয়েরাই। রবিবার বিকেলে। নিজস্ব চিত্র
দুপুরবেলা ঘরে কাজ করছিলাম। হঠাৎই ভাই (শাহনওয়াজ আলম) হাঁফাতে হাঁফাতে এসে বলল ‘‘দিদি, পাপ্পু ভাইয়ার ঘর থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে।’’
বন্ধ ঘর থেকে ধোঁয়া? ভয় পেয়ে দৌড়ে নেমে আসি। দেখি, দরজার ফাঁক দিয়ে সত্যিই ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে বাকিদের ডাকি। ভাইকে বলি, কিছু একটা নিয়ে আয়। দরজা ভাঙতে হবে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল, ঘরের মধ্যে কিছু পুড়ছে।
ভাই কী একটা লাঠির মতো জিনিস এনে দিল। কয়েক জন মিলে দরজা ভাঙতেই গলগলিয়ে বেরিয়ে এল ধোঁয়া। চোখ-মুখ তখন জ্বালা করছে। তার মধ্যেই মনে হল, ঘরের ভিতরে ফ্রিজটাও পুড়ছে। আর কোনও দিকে তাকাইনি। দোতলা বাড়িটাতে ৩৫-৩৬ ঘর বাসিন্দা। বয়স্ক লোকজন রয়েছে, রয়েছে বাচ্চারা। সঙ্গে সঙ্গে ভাইকে বলি দমকলে ফোন করতে। আমিও দৌড় লাগাই উপরে। মাথায় তখন একটাই চিন্তা, সকলকে বাড়ি থেকে বার করে আনতে হবে।
উপর থেকে সবাইকে ডেকে যখন নামছি, আগুন একের পর এক ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে। কোনও ভাবে রাস্তায় নেমে আসি। তত ক্ষণে বাড়িতে যে ছেলেরা ছিল, তারা হাতের কাছে যা পেয়েছে, তা থেকে জল ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। মিনিট দশ থেকে পনেরোর মধ্যেই এসে পড়ে একের পর এক দমকলের গাড়ি। কিন্তু এত সিলিন্ডার এবং এসি মেশিন রয়েছে যে কিছু করার আগেই আগুন গিলে ফেলল গোটা বাড়িটাকে। চোখের সামনে দেখলাম, ঘরগুলো দাউদাউ করে জ্বলছে। ভাগ্য ভাল যে কেউ ভিতরে আটকে পড়েনি।
বাড়িটা পুরনো। মিটারও অনেক পুরনো। এর উপরে সকলে গরম থেকে বাঁচতে একটা-দুটো করে এসি মেশিন লাগিয়েছে। মনে হচ্ছে, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছে। পরিবারগুলোর তো আর কিছু রইল না! বাড়ির মালিকের পাশাপাশি আমরাও একটু সতর্ক হলে আজ এই দুর্ঘটনা হয়তো এড়ানো যেত।