ক্রমেই গাঢ় হচ্ছে তরুণী খুনের রহস্য। বজবজ লোকাল থেকে ব্যাগবন্দি দেহ উদ্ধারের ৪৮ ঘণ্টা পরেও তরুণীর পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশের অনুমান, আততায়ীরা তরুণীর পরিচিত। তবে তরুণীর পরিচয় না জানতে পারায় অভিযুক্ত কারা, সে বিষয়ে সোমবার রাত পর্যন্ত অন্ধকারেই তদন্তকারীরা।
শনিবার রাতে বজবজ লোকালের শেষ কামরার সিটের নীচ থেকে একটি ব্যাগ উদ্ধার করেছিল রেল পুলিশ। তার ভিতরেই ওই তরুণীর (২০) দেহ মেলে। প্রাথমিক ভাবে তাঁর গলায় ফাঁসের দাগ মিলেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার ওই তরুণীর ময়না-তদন্ত হয়েছিল। রাতে তার প্রাথমিক রিপোর্ট হাতে পায় পুলিশ। সেখানেও শ্বাসরোধ করে খুনের কথা বলা হয়েছে। তবে তরুণীর শরীরে যৌন নির্যাতন বা অন্য কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। এ সব থেকেই পুলিশের অনুমান, আততায়ীরা পরিচিত এবং তারা একাধিক ছিল। খুন করার সময়ে বাধা দেওয়ারও সুযোগ পাননি ওই তরুণী। ব্যাগ থেকে মিলেছে একটি শাড়ির পাড়। তদন্তকারীরা মনে করছেন, ওই শাড়ির পাড় দিয়েই ফাঁস লাগানো হয়েছিল তরুণীর গলায়। ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টেও তার উল্লেখ আছে বলে পুলিশের দাবি।
কখন খুন করা হয়েছিল ওই তরুণীকে? পুলিশ জানায়, ময়না-তদন্তের সময়ে তরুণীর পাকস্থলী থেকে ভাত ও অন্যান্য খাবার মিলেছে। সেগুলি বিশেষ হজম হয়নি। তদন্তকারীদের বক্তব্য, অবিকৃত অবস্থায় দেহ উদ্ধারের পরে ভাবা হয়েছিল, শনিবার খুন হয়েছেন ওই তরুণী। ময়না-তদন্তের পরে তাঁরা মোটামুটি নিশ্চিত, শনিবার দুপুরে খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই খুন করা হয় তরুণীকে। তার জন্যই খাবার হজম হতে পারেনি।
রেল পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, যে ট্রেন থেকে তরুণীর দেহ মিলেছে, সেটি ক্যানিং থেকে রাত সওয়া আটটা নাগাদ শিয়ালদহে পৌঁছয়। সেখান থেকে ৮টা ৪৫ মিনিটে বজবজের উদ্দেশে রওনা দেয়। ক্যানিং থেকে শিয়ালদহ আসার পথে না শিয়ালদহ থেকে বজবজের পথে, কোথায় ব্যাগবন্দি তরুণীর দেহ ট্রেনে তোলা হয়েছিল, তা নিয়েও ধোঁয়াশায় পুলিশ। তবে রেল পুলিশের একাংশের দাবি, শিয়ালদহমুখী ক্যানিং লোকাল ভিড়ে ঠাসা থাকে। বরং বজবজ লোকাল থাকে তুলনায় ফাঁকা। সে ক্ষেত্রে শিয়ালদহ ও বজবজের মাঝের কোনও স্টেশন থেকে ওই ব্যাগটি তোলা হয়ে থাকতে পারে।
রেল পুলিশের এক কর্তা জানান, তদন্তে ধোঁয়াশা কাটানোর জন্য তরুণীর পরিচয় জানা অত্যন্ত জরুরি। নিহত তরুণীর ছবি ইতিমধ্যেই কলকাতা, দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন থানায় পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সোমবার রাত পর্যন্ত ওই থানাগুলি থেকেও কোনও তথ্য পায়নি বালিগঞ্জ জিআরপি। তদন্তকারীদের বক্তব্য, তরুণীর পরিচয় মিললেই তিনি কাদের সঙ্গে বেশি পরিচিত তা জানা যাবে। কী কারণে তিনি খুন হতে পারেন, সে সম্পর্কেও জানতে পারবে পুলিশ।
রেল পুলিশের একটি সূত্র বলছে, কারা ওই ব্যাগটি তুলেছিল, সে ব্যাপারে জানতে বজবজ লোকালের নিত্যযাত্রীদের সাহায্য চাওয়া হতে পারে। সাধারণত রাতের লোকাল ট্রেনের নিত্যযাত্রীরা মোটামুটি একই কামরায় ওঠেন। সে ক্ষেত্রে বজবজ লোকালের শেষ কামরায় কারা রোজ যাতায়াত করেন, সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। শনিবার রাতে ওই কামরায় যে নিত্যযাত্রীরা ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বললেও এ ব্যাপারে সূত্র মিলতে পারে বলে পুলিশের আশা।