গ্রেফতারির ক’দিন পরেই ঘরে ঝুলন্ত দেহ

উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা চলছে। শুক্রবার ছিল অর্থনীতির পরীক্ষা। বৃহস্পতিবার তাই রাত জেগে পড়াশোনা করছিল বাঁশদ্রোণী বাজার এলাকার বাসিন্দা অভ্রদীপ নস্কর। রাত দেড়টা নাগাদ সেই কিশোরই পড়া ফেলে উদ্ধার করে বাবার মৃতদেহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৮ ০২:০৯
Share:

তারক নস্কর

উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা চলছে। শুক্রবার ছিল অর্থনীতির পরীক্ষা। বৃহস্পতিবার তাই রাত জেগে পড়াশোনা করছিল বাঁশদ্রোণী বাজার এলাকার বাসিন্দা অভ্রদীপ নস্কর। রাত দেড়টা নাগাদ সেই কিশোরই পড়া ফেলে উদ্ধার করে বাবার মৃতদেহ। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম তারক নস্কর (৪৫)। গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঘরে তাঁর ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায়। পুলিশের ধারণা, তারক আত্মঘাতী হয়েছেন।

Advertisement

তারকের আত্মহত্যার কারণ নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। জানা গিয়েছে, কালীপুজোর রাতে পাড়ার কুকুরদের মারধর করার ঘটনায় তারকের বিরুদ্ধে নেতাজিনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন এক মহিলা। তাঁর দাবি ছিল, কুকুরদের মারধরের প্রতিবাদ করায় তারক তাঁকেও হেনস্থা করেছেন। পুলিশ তারককে ধরে নিয়ে যায়। এর পরে আদালত থেকে জামিন পান তিনি। তার কয়েক দিনের মধ্যেই এই ঘটনা। তারকের পুত্র অভ্রদীপ শুক্রবার বলে, ‘‘বাবা কেন এমন করল, জানি না। কুকুরের ঘটনাটা নিয়ে মনখারাপ করে থাকত। সে কারণেও কিছু করে থাকতে পারে।’’ যদিও মৃতের পরিবারের তরফে এ নিয়ে নতুন করে থানায় আর কোনও অভিযোগ করা হয়নি।

বাঁশদ্রোণী বাজার এলাকাতেই মাংসের দোকান তারকের। স্ত্রী পল্লবী, পুত্র অভ্রদীপ এবং বৃদ্ধ মা-বাবার সঙ্গে ওই এলাকারই একটি বা়ড়িতে থাকতেন তিনি। অভ্রদীপ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে খাওয়া শেষ করে দ্রুত শুয়ে পড়েন তারক। পাশের ঘরে পড়াশোনা করছিল সে। ঘুম আসছে না জানিয়ে রাত ১২টা নাগাদ রাস্তায় বেরোন তারক। অভ্রদীপের কথায়, ‘‘বাবা বলল, ‘ঘুম আসছে না। একটু বাইরে ঘুরে আসি।’ দীর্ঘক্ষণ ফিরছে না দেখে আমি আর মা খুঁজতে বেরোই। পরে বাড়ির কলতলার দিকে খুঁজতে গিয়ে দেখি, গাছের সঙ্গে বাবার দেহ ঝুলছে।’’ এর পরে তারকের মৃতদেহ এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই হাসপাতালেই তাঁর দেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে।

Advertisement

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তারক যেখানে আত্মঘাতী হয়েছেন, সেই কলতলায় পড়ে রয়েছে তাঁর জুতো। পুলিশের অনুমান, পাঁচিল বেয়ে কলতলার একটি গাছে উঠে তিনি গলায় ফাঁস লাগান। তারকের পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা সালেকা নস্কর বলেন, ‘‘কুকুরের জন্য ওকে থানায় ধরে নিয়ে যাবে, ভাবতে পারিনি।’’ তিনি জানান, বাজার এলাকার বেশ কিছু কুকুর পোষেন এক মহিলা। কাছেই তাঁর বাড়ি। সেখানেই থাকে কুকুরগুলো। কালীপুজোর রাতে তারককে একটি কুকুর কামড়ায়। রেগে গিয়ে তারক ওই কুকুরটিকে ইট ছুড়ে মারেন। ওই মহিলা সেই ঘটনার প্রতিবাদ করলে তারকের সঙ্গে বচসা হয় তাঁর। এর পরেই থানায় গিয়ে তারকের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ করেন তিনি।

তারকের বৌদি বাসন্তী নস্কর বলেন, ‘‘কেন আত্মহত্যা করল, জানি না। তবে পারলে আপনারা কুকুরের উৎপাত থেকে আমাদের রক্ষা করুন। থাকা যাচ্ছে না।’’ ওই মহিলা অবশ্য এ দিন সকাল থেকেই বাড়িতে নেই। পরে ফোনে বলেন, ‘‘উনি কুকুরকে মেরেছেন। আমাকে হেনস্থা করেছেন। তাই থানায় জানিয়েছি। কেন আত্মহত্যা করেছেন, তা আমি বলতে পারব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন