বাগান মাথায় নিয়ে শহরের পথে ছুটে চলে সবুজ অটো

ফুলবাগান–গণেশ টকিজ রুটের নিত্যযাত্রীরা প্রতিদিনই দেখতে পান অটোটিকে। মাথায় রকমারি ফুল- বাহারি পাতার সাজানো বাগান। ছোট ড্যাসবোর্ডেও সবুজ ঘাসের ছোঁয়া। সেখানে সময়ে সময়ে ফোটে নয়নতারা, দোপাটি ফুল।

Advertisement

বিতান ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৯ ০১:১২
Share:

অভিনব: গাছ লাগানো অটোর সামনে চালক বিজয় পাল। নিজস্ব চিত্র

দূষণে ভরা রাজপথে ছুটছে অটো। অক্সিজেনের রসদ মাথায় নিয়ে।

Advertisement

ফুলবাগান–গণেশ টকিজ রুটের নিত্যযাত্রীরা প্রতিদিনই দেখতে পান অটোটিকে। মাথায় রকমারি ফুল- বাহারি পাতার সাজানো বাগান। ছোট ড্যাসবোর্ডেও সবুজ ঘাসের ছোঁয়া। সেখানে সময়ে সময়ে ফোটে নয়নতারা, দোপাটি ফুল। পরিবেশ রক্ষায় গাছের ভূমিকা কতটা, তা-ও লেখা অটোর গায়ে। সওয়ারি চাপিয়ে যখন রাস্তায় ছোটে চালক বিজয় পালের অটো, তখন তা চোখ টানে সকলেরই।

গণেশ টকিজের কাছে একচিলতে ঘরে দিদি স্তুতি নন্দীর সঙ্গে থাকেন মধ্য পঞ্চাশের বিজয়। মালিকের থেকে অটোটি ভাড়া নিয়ে চালান। যদিও পরিবেশ বাঁচানোর বার্তা দিয়ে নিজেই সবুজায়ন করেছেন সেই অটোর। নাম দিয়েছেন ‘পরিবেশবান্ধব যান’। সংসার চালাতে ভরসা সেটিই। তবে বিজয়ের কাছে সংসারের চেয়ে বড় হয়ে দেখা দেয় একটাই চিন্তা— কাঠফাটা রোদে অটোর সাজানো বাগান শুকিয়ে গেল না তো! বিজয় বলছেন, ‘‘কোনও রকমে কয়েক হাজার টাকা জমেছিল। কিন্তু বাগান পরিচর্যা করতে তার প্রায় সবটাই দিয়ে দিয়েছি একটি নার্সারির কর্মীকে। এই বাগান আছে বলেই না পাখি থেকে মানুষ, কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভাল থাকেন।’’

Advertisement

ছেলেবেলা থেকেই গতে বাঁধা জীবন পছন্দ ছিল না বিজয়ের। বাবা ছিলেন গিরিডির স্কুলের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক। ছেলের গাছপালা, জীবজন্তুর প্রতি ভালবাসা দেখে এ নিয়ে পুথিগত শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হাল ছাড়তে হয়। বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতায় এসে বিজয় অটো চালানোর শুরু করেন সেই ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু ঠিকানা পাল্টালেও বদলায়নি তাঁর সবুজ-প্রীতি। তাই অটোর মাথাতেই সবুজায়ন করে ফেলেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অমিতাভ বচ্চনের ভক্ত বিজয় নিজের পোশাকেও নিয়ে এনেছেন অভিনবত্ব। ‘দিওয়ার’, ‘ইয়ারানা’ ছবিতে অমিতাভের পোশাকের অনুকরণে কখনও টাই পরে, কখনও আলো লাগানো জামা পরে তাঁকে প্রায়ই অটো চালাতে দেখে যায়। ফুলবাগান থেকে রামমন্দির এলাকায় অফিস যাতায়াতের পথে প্রায়শয়ই বিজয়ের অটোয় চড়া যাত্রী রাকেশ শ্রীবাস্তব বলছেন, ‘‘বিজয় ও তাঁর অটো দু’টোই এই শহরের ভিন্ন রূপ। এখনও কলকাতায় এমন মানুষ আছেন বলেই যানজটে জেরবার শহরে দমবন্ধ লাগে না।’’

শহরে ধনঞ্জয় চক্রবর্তীর ‘সবুজ রথ’ নামের বাগানওয়ালা ট্যাক্সি এখন সুপরিচিত। কিন্তু বিজয়ের অটোর কথা জানেন না অনেকেই। তবে সেটি নিয়ে ইতিমধ্যে স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি বানিয়ে ফেলেছেন বাংলাদেশের আলমগীর আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলছেন, ‘‘কলকাতায় বিজয়ের মতো ঢাকায় অটো চালান প্রায় সমবয়সী জাকির হোসেন। পরিবেশের প্রতি প্রেম থেকেই তিনিও অটোর ছাদে তৈরি করেছেন ফুলের বাগান। দশ-বারো রকমের গাছ আছে তাঁর অটোর ছাদে। ব্যস্ত দুই শহরে প্রবল বায়ু দূষণ। সেখানে এমন ভাবতে পারা দু’জনকে মেলানোর চেষ্টা করছি ছবিতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন