Babughat

Gangasagar Mela 2022: মাস্ক নেই কেন? প্রশ্ন শুনে বাবা বললেন, ক্যায়া পুছতা হ্যায় রে? চল চল, হাওয়া আনে দে!

একটু এগোলেই ইডেনের উল্টো দিকে ভিড় সাধারণ পুণ্যার্থীদের। শীতের বিকেলে সেখানে তখন পিকনিকের  আমেজ।

Advertisement

মিলন হালদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:৫৫
Share:

বিধি উড়িয়ে: মাস্ক না পরা সাধু। শনিবার, বাবুঘাটে। ছবি: সুমন বল্লভ

কল্কের গঞ্জিকায় সুখটান দিলেন সন্ন্যাসী।

Advertisement

“করোনায় মুখে মাস্ক নেই কেন?” প্রশ্নটা শুনে এক বার তাকালেন সাধু। তার পরে আকাশে ছড়িয়ে দিলেন এক মুখ ধোঁয়া। যেন প্রশ্নটাকেই উড়িয়ে দিলেন। এই করোনার সময়ে গঙ্গাসাগর যাচ্ছেন, ভয় করছে না? এ বার ধোঁয়ার সঙ্গে ভেসে এল পাশের নাগা সন্ন্যাসীর হুমকি। বাঁ হাত তুলে তুড়ি মেরে বললেন, “ক্যায়া পুছতা হ্যায় রে? চল চল, হাওয়া আনে দে।”

বাবুঘাটে গঙ্গাসাগরের ট্রানজ়িট ক্যাম্পে এসে জড়ো হয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাধু-সন্ন্যাসীরা। এসেছেন বহু সাধারণ মানুষও। শনিবার হাতে গোনা দু’-তিন জন সাধুর মুখে মাস্ক দেখা গেলেও বাকিদের মুখ ছিল মাস্কহীন। দূরত্ব-বিধি শিকেয় তুলেই আগুন জ্বেলে পাশাপাশি বসে তাঁরা। চলছে ভাগ করে গঞ্জিকা সেবনও। কোনও কোনও সাধুর গা ঘেঁষে বসে ভক্তেরাও। তাঁদের টিকা পরিয়ে আশীর্বাদ করছেন সাধু।

Advertisement

অযোধ্যা থেকে এসেছেন সাধু কপিল গিরি এবং শ্রীমহন্ত জলেশ্বর গিরি নাগা বাবা। কপিল গিরির মুখে মাস্ক। কিন্তু শ্রীমহন্ত জলেশ্বর বাবার মাস্ক লুটোচ্ছে মাটিতে। প্রশ্ন করতেই মাস্ক তুলে ধরে বাবা দেখালেন, দড়ি ছিঁড়ে গিয়েছে। শ্রীমহন্ত জলেশ্বর বাবা আত্মবিশ্বাসী, “আমার ভয় নেই। সাধুদের ভয় লাগে না, বাবার পাশে করোনা আসবে না।”

এ দিন ক্যাম্পে ভিড় তেমন ছিল না। সাধারণ মানুষের অধিকাংশের মুখেই ছিল মাস্ক। ক্যাম্পে এসেছিলেন হিন্দমোটরের অমিতাভ
খাস্তগির, উল্টোডাঙার রীতেশ গুপ্তেরা। নিজেদের গুরুর সঙ্গে দেখা করতে। প্রতি বছরই আসেন। তাঁদের গুরু মঙ্গল গিরি মহারাজের ঠোঁটে তখন বিড়ি। টান দেওয়ার সময়ে মুখের মাস্ক নেমে আসছে থুতনিতে। পরমুহূর্তেই উঠে যাচ্ছে মুখে। জানালেন, তিনি গঙ্গাসাগরে যান না। কিন্তু প্রতি বছর এখানে আসেন। বললেন, “করোনার কোনও ভয় নেই রে বেটা। ভয় শুধু পরমাত্মাকে।” ক্যাম্পে তখন ভেসে বেড়াচ্ছে করোনা-বিধি নিয়ে সতর্কতার প্রচার, যা চালানো হয়েছে পুলিশ ও পুরসভার তরফে। ট্রানজ়িট ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থাও।

একটু এগোলেই ইডেনের উল্টো দিকে ভিড় সাধারণ পুণ্যার্থীদের। শীতের বিকেলে সেখানে তখন পিকনিকের আমেজ। করোনা-বিধি শিকেয় তুলে চলছে রান্না, খাওয়া থেকে বিকিকিনি। বিরাট বিরাট বাসে দল বেঁধে এসেছেন ভিন্ রাজ্যের পুণ্যার্থীরা। রাজস্থান-উত্তর প্রদেশ থেকে প্রায় ৫০ জনের একটি দল এ দিন এসেছে ময়দানে। চলছে তাঁদের রাতের খাবারের আয়োজন। এই করোনার সময়ে গঙ্গাসাগরে? দলের
সদস্য ও রাজস্থানের দহলপুরের বাসিন্দা রামেশ্বর দেওয়ানের জবাব, “আমাদের প্রত্যেকের ডবল ডোজ় নেওয়া আছে।”

ময়দানের আর এক প্রান্তে গ্যাস জ্বালিয়ে চলছে রুটি-তরকারি বানানো। ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে
খাচ্ছেন এক দল নারী-পুরুষ। দলটি এসেছে উত্তর প্রদেশ ও মধ্য প্রদেশ থেকে। তাদের গঙ্গাসাগর ঘোরা শেষ। দলের সদস্য এস
এস শর্মার দাবি, “আমরা মেলায় দূরত্ব-বিধি পালন করেছি।” আর এখানে? “সবাই দূরে দূরে বসে খাও”—
যাঁরা খাচ্ছিলেন, তাঁদের বললেন শর্মা। জয়পুরে চুড়ির কারখানায় কাজ
করেন বিহারের নালন্দার বাসিন্দা শাকিল আহমেদ। করোনায় কারখানা বন্ধ। তাই গঙ্গাসাগর মেলার সময়ে ময়দানে চুড়ি বেচতে এসেছেন শাকিল। বললেন, “পেটের জ্বালা, বড় জ্বালা।”

বেলেঘাটার পাঁচ জন মহিলা এসেছিলেন ক্যাম্পে ঘুরতে। সব চেয়ে বয়স্কা সুমিতা মজুমদার
হাঁটেন লাঠির সাহায্যে। বললেন, “সবাই বারণ করেছিল, তবু কষ্ট করে এলাম। কারণ কষ্টেই আনন্দ।” বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বর্ষশেষের বাঁধনছাড়া আনন্দের কারণেই সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে। তার উপরে গঙ্গাসাগরের এই আনন্দ
সংক্রমণ বাড়াবে বলেই তাঁদের আশঙ্কা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন