প্রতীকী ছবি।
কলকাতা থেকে ট্রেনে গন্তব্য ছিল উত্তরাখণ্ডের দেহরাদূন। সেই পথেই রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে গেলেন শেক্সপিয়র সরণির একটি পানশালার এক কর্মী। পুলিশ জানায়, ২৭ বছর বয়সি ওই নিখোঁজ যুবকের নাম নীতিন সাথী। গত ১৬ জানুয়ারি ওই ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে তপসিয়া থানার পুলিশ। আবার পানশালা কর্মীর ফোনটি এক পরীক্ষার্থীর জিম্মা থেকে উদ্ধারও হয়েছে। তাঁকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।
তদন্তকারীরা জানান, যুবকের হদিস না পেলেও রবিবার রাতে পূর্ব মেদিনীপুর থেকে এক তরুণের কাছে নীতিনের ফোনটি মেলে। ওই তরুণ এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবেন। মঙ্গলবার তাঁকে শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
যদিও পুলিশকে ওই তরুণ জানিয়েছেন, অকারণে তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। তিনি নিখোঁজ যুবককে চেনেন না। বাড়ি সংলগ্ন রেললাইন থেকে তিনি মোবাইলটি কুড়িয়ে পান।
তাতে নিজের সিম কার্ড ভরে তিনি বিপদে পড়েছেন। শিয়ালদহ আদালতের সরকারি আইনজীবী অরূপ চক্রবর্তী অবশ্য বলেছেন, ‘‘নিখোঁজ যুবকের এখনও খোঁজ মেলেনি। ধৃতকে জেরা করলে এই ঘটনায় জড়িত বাকিদের খোঁজ মিলতে পারে। তাই পুলিশি হেফাজত চাওয়া হয়েছে।’’
পুলিশ জানায়, নীতিন তপসিয়ার বৃন্দাবন গার্ডেন এলাকায় থাকতেন। তাঁর বাড়ি আদতে উত্তরাখণ্ডের দেহরাদূনে। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ছেলে নিখোঁজ জানিয়ে তাঁর বাবা দেবীপ্রসাদ সাথি সম্প্রতি তপসিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। দেবীপ্রসাদবাবু নিজেও
পুলিশকর্মী। তিনি শেক্সপিয়র থানার পুলিশকে জানিয়েছেন, বছরে দু’-তিন বার তাঁর পুত্র দেহরাদূনের বাড়িতে যান। পুজোর আগেই ছেলে কলকাতায় ফিরেছেন। বাড়িতে জরুরি কাজ থাকায় গত ১৬ জানুয়ারি ট্রেনে কলকাতা থেকে দেহরাদূনে যাচ্ছিলেন নীতিন। সেই মতো বাবাকে ফোন করে দিয়েছিলেন তিনি। তবে ১৬ জানুয়ারি বিকেলের পর থেকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি নীতিনকে। এর পরে দু’দিন কেটে
গেলেও ছেলের খোঁজ না পেয়ে কলকাতায় নীতিনের কর্মস্থল এবং বাসস্থানে খোঁজ করেন দেবীপ্রসাদবাবু। পরে তপসিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ নীতিনের মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন ‘ট্র্যাক’ করা শুরু করে। গত সপ্তাহে ফোনটিকে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া এলাকায় চিহ্নিত করেন তদন্তকারীরা। এর পরে গত শনিবার তপসিয়া থানার তদন্তকারী দল পাঁশকুড়া যায়। সেখানেই রবিবার রাতে ওই পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে কলকাতার পুলিশ। মঙ্গলবার তাঁকে কলকাতায় নিয়ে এসে আদালতে তোলা হয়। দেবীপ্রসাদবাবু এ দিন বলেন, ‘‘ওই তরুণ বলছে আমার ছেলেকে দেখেনি। ও একেবারে বাচ্চা ছেলে, উচ্চমাধ্যমিক দেবে। ও এ রকম করতে পারে বলে আমারও মনে হয় না। কিন্তু, পুলিশ আমার ছেলেকে খুঁজে বার করুক।’’ তপসিয়া থানার এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘সব কিছুই খতিয়ে দেখতে হচ্ছে। ধৃত সব সত্যি বলছেন কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’