Madhyamik Result 2023

সেরিব্রাল পলসি নিয়েও সাফল্যে উজ্জ্বল

নিমতলা ঘাট স্ট্রিটের বাসিন্দা শ্রেয়া জন্ম থেকেই ৯০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। তার বাবা সঞ্জয় সাহার একটি মুদি দোকান রয়েছে নিমতলা ঘাট স্ট্রিটেই। মা জোনাকি সাহা গৃহবধূ।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৩ ০৭:০৯
Share:

অভিনন্দন: শ্রেয়ার সাফল্যে আনন্দিত সহপাঠীরাও। শুক্রবার, বেথুন কলেজিয়েট স্কুলে। ছবি: সুমন বল্লভ।

হাঁটাচলা করার ক্ষমতা নেই। হাতেও নেই জোর। হুইলচেয়ারই ভরসা। কিন্তু সেই হুইলচেয়ারে বসেই স্টিফেন হকিংয়ের মতো স্বপ্ন দেখে সে। স্বপ্ন দেখে, উচ্চশিক্ষা লাভ করে মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করার। বেথুন কলেজিয়েট স্কুল থেকে সদ্য মাধ্যমিক উত্তীর্ণ শ্রেয়া সাহা হাঁটতে না পারলেও তার হুইলচেয়ারেই রয়েছে স্বপ্ন দেখার অদৃশ্য দুই ডানা। শুক্রবার মাধ্যমিক পাশ করার পরে শ্রেয়া যখন হুইলচেয়ারে চেপে নিজের স্কুলে মার্কশিট নিতে এল, তখন তাকে অভ্যর্থনা জানাতে দাঁড়িয়ে পড়েছে গোটা স্কুল। প্রধান শিক্ষিকার হাত থেকে মার্কশিট পেয়ে শ্রেয়ার চোখে তখন জল। সাতশোর মধ্যে ৫০২ পেয়েছে সে। শ্রেয়া বলল, ‘‘এতটা ভাল ফল করব, আশা করিনি। ভূগোলে তো ৯৩ পেয়েছি।’’

Advertisement

নিমতলা ঘাট স্ট্রিটের বাসিন্দা শ্রেয়া জন্ম থেকেই ৯০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। তার বাবা সঞ্জয় সাহার একটি মুদি দোকান রয়েছে নিমতলা ঘাট স্ট্রিটেই। মা জোনাকি সাহা গৃহবধূ। তিনি বলেন, ‘‘একমাত্র মেয়ে আমাদের। ওর সেরিব্রাল পলসির অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। এত অসুবিধার মধ্যেও পড়াশোনায় উৎসাহ ছোটবেলা থেকেই।’’ মেয়ের পড়াশোনার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে তার মা রোজ স্কুলে আসতেন আর বসে থাকতেন ক্লাসরুমের পাশে, জানালেন বেথুন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শবরী ভট্টাচার্য। শবরী বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছর ধরে দেখেছি, ওর মা ওকে নিয়ে অটোয় স্কুলে এসেছেন। মেয়েকে অটো থেকে কোলে তুলে হুইলচেয়ারে বসিয়ে নিয়ে যেতেন ক্লাসরুম পর্যন্ত। তার পরে ক্লাসরুমের বাইরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতেন শ্রেয়ার মা, ক্লাস শেষ হওয়া পর্যন্ত।’’ শ্রেয়ার জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষিকা তানিয়া মৈত্র বললেন, ‘‘শুধু পড়াশোনাই নয়, ভাল আবৃত্তিও করে শ্রেয়া।’’ শ্রেয়া এ দিনও অটোয় মা-বাবার সঙ্গে মার্কশিট নিতে এসেছিল। অটোচালক লবকুশ সাউ বললেন, ‘‘শ্রেয়ার স্কুলে যাতায়াতের সময়ে অটোয় কখনও যাত্রী তুলিনি। আজ ওর জন্য আমারও খুব আনন্দ হচ্ছে। ছাতি চওড়া হয়ে গিয়েছে।’’

হাত কমজোরি হলেও থুতনিতে পেন রেখে আর এক হাত দিয়ে ঘষে ঘষে টেস্ট পর্যন্ত নিজেই পরীক্ষা দিয়েছে শ্রেয়া। জোনাকি বলেন, ‘‘থুতনিতে পেন রেখে লিখলে লেখা আস্তে হত। রাইটার নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার কথা বলেন স্কুলের শিক্ষিকারা। ওর দুই রাইটার, নবম শ্রেণির উপাসনা সামন্ত ও অঙ্কিতা সাহাকেও খুব মনে পড়ছে।’’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন