পথশিশুদের জন্য হচ্ছে আধার কার্ড

২০১৬ সালে এ নিয়ে সমীক্ষা করতে গিয়ে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানতে পারে, শহরে পথশিশুর সংখ্যা ২০ হাজারেরও কিছু বেশি। যাদের অধিকাংশেরই জন্মের কোনও শংসাপত্র নেই। যার ফলে তারা বঞ্চিত হচ্ছে শিশুদের জন্য বরাদ্দ সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৩০
Share:

প্রতীকী ছবি।

কোথাও দু’মাসের শিশু কোলে বছর বারোর কোনও কিশোরী ভিক্ষে করছে ট্র্যাফিক সিগন্যালে। কোথাও আবার ধূপ বিক্রি করে খাবারের পয়সা তুলছে বছর চোদ্দোর ফুটপাতবাসী কিশোর। কলকাতা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় এ ছবি খুব একটা অপরিচিত নয়।

Advertisement

কিন্তু এ শহরে রাস্তায় কিংবা ফুটপাতে বসবাসকারী কিশোর-কিশোরীদের সংখ্যা কত? তাদের কি কোনও পরিচয়পত্র আছে? শিশুদের মৌলিক অধিকারগুলি কি আদৌ পাচ্ছে তারা? ২০১৬ সালে এ নিয়ে সমীক্ষা করতে গিয়ে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানতে পারে, শহরে পথশিশুর সংখ্যা ২০ হাজারেরও কিছু বেশি। যাদের অধিকাংশেরই জন্মের কোনও শংসাপত্র নেই। যার ফলে তারা বঞ্চিত হচ্ছে শিশুদের জন্য বরাদ্দ সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে। পরিচয়পত্র না থাকায় স্কুলে যেতে পারে না তারা। মেলে না পুষ্টিকর খাবার। অসুস্থ হলেও জোটে না চিকিৎসা পরিষেবা।

অথচ, পরিচয়পত্র তৈরি করাতে গেলে প্রয়োজন জন্ম শংসাপত্রের। কিন্তু তার জন্য যে সব তথ্য পুরসভার কাছে জমা দিতে হয়, তা-ও নেই পরিবারগুলির। ফলে পরিচয়পত্র ছাড়াই রাস্তায় কিংবা ফুটপাতে কেটে যাচ্ছে অসংখ্য শিশু-কিশোরের জীবন। এ বার তাই ওই সমীক্ষা-রিপোর্টের ভিত্তিতে পথশিশুদের আধার কার্ড তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতর এবং রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন। দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে শহরের পথশিশুদের জন্যই তৈরি হচ্ছে ওই পরিচয়পত্র। শুক্রবার সেই উদ্যোগেরই পাইলট প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে উত্তর কলকাতার বিডন স্ট্রিট সংলগ্ন একটি স্কুলে।

Advertisement

কী ভাবে হচ্ছে এই কাজ? এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহ-অধিকর্তা স্বাতী চক্রবর্তী জানিয়েছেন, তাঁরা আগে শহরের বিভিন্ন ‘হট স্পট’ (যেখানে ১০টির বেশি শিশু রাস্তায় থাকে) চিহ্নিত করে তার মানচিত্র তৈরি করেছেন। তার পরে খোঁজ নিয়ে দেখছেন, কত দিন ধরে শিশুগুলি সেখানে রয়েছে, তাদের সঙ্গে কারা রয়েছেন এবং তাদের অভিভাবকদের আদি বাসস্থান কোথায়। সেই সব তথ্য জানার পরে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন ও কাউন্সিলরের সাহায্যে ওই শিশুদের আধার কার্ড করানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। স্বাতীদেবী জানান, ফুটপাতবাসী শিশুদের কত জন অনাথ, এই উদ্যোগের মাধ্যমে তা-ও জানা যাবে। শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আধার কার্ড করাতে গিয়ে অনেক নিখোঁজ শিশুর পরিবারের হদিস মিলেছে। পরিবারের কাছে ওই শিশুদের ফিরিয়ে দিতেও এই উদ্যোগ সাহায্য করবে।’’

আধার কার্ডের পাশাপাশি ‘সেফ স্পেস’ নামে আর একটি প্রকল্পও শুরু হবে। শোভাবাজার থেকে শ্যামবাজার মেট্রোর মধ্যবর্তী এলাকার ফুটপাতবাসী শিশুদের জন্য শ্যামবাজারের একটি স্কুলে চালু হবে এই স্কুল। সেখানে ওই শিশুদের জন্য পড়াশোনা ও নানা সৃজনশীল কাজকর্মের পাশাপাশি টিফিনের ব্যবস্থাও করা থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন